শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সম্রাট শাহজাহানের সুবিচারে মুগ্ধ হয়ে চারশ’ হিন্দু ইসলাম গ্রহণ করে

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

বলা হয়ে থাকে, ভারতবর্ষে মুসলিম সুলতানগণ ইসলাম প্রচারের জন্য নিয়মিত বা নির্দিষ্ট কোনো উপায় অবলম্বন করেননি। বিশেষত মোগলদের শাসনামলে তারা যদি সুপরিকল্পিত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন তাহলে ইসলাম প্রচারের ধারা অধিক গতিশীল হতো। তারা ইসলাম প্রচারের জন্য নির্দিষ্ট কোনো বিভাগ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা করেননি।
তা সত্তে¡ও কয়েকজন দ্বীনদার ইসলামপ্রিয় মোগল সম্রাট বিক্ষিপ্তভাবে ইসলাম প্রচার করেন। তাদের মধ্যে সম্রাট শাহজাহানের নাম উল্লেখযোগ্য। তার একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে, যা ছিল অসাধারণ। বহু মুসলিম মহিলার প্রতি হিন্দু নির্যাতনের অদ্ভুত ঘটনা শ্রবণ করে সম্রাট শাহজাহানের উপস্থিত বুদ্ধিমত্তার সুবিচারে একই সঙ্গে চারশ’ হিন্দুর ইসলাম গ্রহণের বিরল দৃষ্টান্ত দারুণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল।
মাওলানা জুকাউল্লাহর বর্ণনা অনুযায়ী, সেই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ছিল এইরূপ : সম্রাট শাহজাহান তার অভিষেক অনুষ্ঠানের সপ্তমবর্ষে হিজরি ১০৪৩/১৬৩৪ সালে কাশ্মীর ভ্রমণে গমন করেন। প্রত্যাবর্তন কালে যখন গুজরাটে পৌঁছেন, তখন স্থানীয় মুসলমানগণ তাঁর সমীপে এসে নালিশ করে যে, ‘এখানে অন্ধকার বিরাজ করছে, বহু হিন্দু সাহুকার (মহাজন) মুসলমান নারীদের জোরপূর্বক তাদের গৃহে নিয়ে রেখেছে। শহরের অধিকাংশ মসজিদ ধ্বংস করে দিয়েছে এবং কোরআন কারিমের অবমাননা করেছে। আল্লাহর ওয়াস্তে আমাদের প্রতি ইনসাফ করুন।’
সম্রাট অভিযোগ তদন্ত করার জন্য শেখ মাহমুদ গুজরাটীকে নিযুক্ত করেন। তদন্তের পর তিনটি অভিযোগই সঠিক পাওয়া যায়। তখন সম্রাট নির্র্দেশ দিলেন যে, ‘যেসব মুসলমান মহিলা হিন্দুদের কব্জায় আছে, যদি হিন্দুরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তাহলে ঐসব নারী তাদেরই থাকবে এবং তাদেরকে দ্বিতীয়বার নিকাহ পড়িয়ে দেয়া হবে।’
আর ঐসব হিন্দু যদি ইসলাম গ্রহণ না করে, তাহলে ঐসব মুসলমান নারীকে ঐ হিন্দুদের কবল হতে মুক্ত করে মুসলমানদের সাথে তাদের নিকাহ পড়িয়ে দিতে হবে। যেসব মসজিদ হিন্দুরা ধ্বংস করেছে সেগুলো তাদের খরচেই পুনঃনির্মাণ করে দিতে হবে। কিন্তু যেসব হিন্দু কোরআন কারিমের অবমাননা করেছে তাদেরকে হত্যা করা হবে।’
এ নির্দেশ শুনে যেসব হিন্দুর ঘরে মুসলমান নারীরা ছিল, তারা এসব নারীকে ত্যাগ করতে পারে না, কারণ তাদের সন্তানাদি রয়েছে আবার তাদেরকে ঘরে রাখাও সম্ভব নয়। ওই নারীদের হিন্দু হওয়াও তাদের পক্ষে অসম্ভব। সুতরাং একান্ত বাধ্য হয়েই তারা সঠিক পথ অনুসরণ করে এবং দ্রুত ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। কেননা কেবল এভাবেই এসব নারী তাদের গৃহে অবস্থান করতে পারে। ওদের সংখ্যা গণনার পর জানা গেল, চারশ’ হিন্দু এভাবে তাদের স্ত্রীদের খাতিরে মুসলমান হয়ে যায়।
ভারতের ইতিহাসে হিন্দুদের মুসলমান হওয়ার এরূপ ঘটনা বহু। জোর করে কাউকে মুসলমান করা হয়নি। তরবারির জোরে ইসলাম প্রচারের অভিযোগ অলীক-কাহিনী, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মুসলমান শাসক-সম্রাটদের সদাচরণ ও তাদের চারিত্রিক গুণাবলি এবং হিন্দুদের প্রতি তাদের নানা প্রকার সুবিধা প্রদান ও হিন্দু জমিদার শাসকদের নির্যাতন-বঞ্চনা হতে মুক্ত করার জন্য অনেকে মুসলমান হয় এবং ইসলামের শান্তির সুবাসে বসবাস করার সৌভাগ্য লাভ করে।
তবে এই বাস্তবতাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, যুগে যুগে যেসব পৌত্তলিক, মূর্তিপূজারী, অগ্নি উপাসক প্রভৃতি নানা ধর্ম-বর্ণের লোক ইসলাম গ্রহণ করে তাদের সবাই বলিষ্ঠ ও খাঁটি ঈমানের অধিকারী ছিল এ দাবি করা যায় না। দুর্বল ঈমানের লোকও ছিল এবং তাদের পূর্বধর্মের কুসংস্কারের প্রভাবও অনেকের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। এ কারণেই বিভিন্ন স্থানে মুরতাদদের অস্তিত্ব দেখা যায়।
সম্রাট শাহজাহানের সময়ে বর্ণিত যে তিনটি অভিযোগ তদন্তে সত্য প্রমাণিত হয় এবং তিনি সেগুলোর সুবিচার করেছিলেন। যার ফলে অভিনবভাবে চারশ’ হিন্দু তাদের অবৈধভাবে রাখা স্ত্রীদের পাওয়ার লোভে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করে, কোনো জোর-জবরদস্তি ছিল না। কেননা সম্রাটের ন্যায়বিচারে তাদের ভাগেই সুফল আসে।
সম্রাট ইসলামী বিধিবিধান অনুযায়ী রায় প্রদান করেছিলেন। তিনি চাইলে ভিন্ন রায়ও দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি, যার ফলে অপরাধী হিন্দুরা ইসলাম গ্রহণ করে এবং মুসলমান নারীদেরকেও স্ত্রী হিসেবে লাভ করে। বস্তুত সত্যিকারভাবে ইসলাম গ্রহণ করলে ইসলামপূর্ব কৃত সকল পাপ মোচন হয়ে যায়। এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল ইসলামু ইয়াহদিমু মা কাবলাহু’। এই চিরন্তন বাণী সর্বকালে সর্বজনের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Nahid Hassan ১৭ এপ্রিল, ২০১৯, ৩:৫৫ এএম says : 0
মুসলমান শাসক-সম্রাটদের সদাচরণ ও তাদের চারিত্রিক গুণাবলি এবং হিন্দুদের প্রতি তাদের নানা প্রকার সুবিধা প্রদান ও হিন্দু জমিদার শাসকদের নির্যাতন-বঞ্চনা হতে মুক্ত করার জন্য অনেকে মুসলমান হয় এবং ইসলামের শান্তির সুবাসে বসবাস করার সৌভাগ্য লাভ করে।
Total Reply(0)
Arafat Yeasin ১৭ এপ্রিল, ২০১৯, ৩:৫৭ এএম says : 0
ইসলামের ইতিহাস ভিত্তিক এই লেখাগুলো পড়তে ভালোই লাগে। লেখক খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী সাহেব ও দৈনিক ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে আল্লাহ উত্তম পুরস্কার দান করুক।
Total Reply(0)
Nazim Uddin ১৭ এপ্রিল, ২০১৯, ৪:০১ এএম says : 0
মুসলীম দেশের বর্তমান শাসকরা যদি ইসলামের সুমহান আদর্শে অটল থাকতো তাহলে এখনও তারাই পৃথিবী শাসন করতো।
Total Reply(0)
Fazlul Haque ১৭ এপ্রিল, ২০১৯, ৪:০২ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের সুমহান আদর্শের উপর অটল থাকার তৌফিক দান করুক। আমিন
Total Reply(0)
Salim khan ১৭ এপ্রিল, ২০১৯, ৪:০৩ এএম says : 0
ai dhoroner lekha pore amra onupranito hoi
Total Reply(0)
Shohel Rana ১৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১০:০৫ এএম says : 0
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, ইসলাম আলোর পথ দেখায়, ইসলামের জয় হউক সর্বত্র, আমিন।
Total Reply(0)
taijul Islam ২০ এপ্রিল, ২০১৯, ৩:১৪ পিএম says : 0
মুসলীম দেশের বর্তমান শাসকরা যদি ইসলামের সুমহান আদর্শে অটল থাকতো তাহলে এখনও তারাই পৃথিবী শাসন করতো।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন