শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দুর্যোগে করণীয় বিষয়ে প্রচার বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের প্রস্তাব অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

ভূমিকম্প,প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এ জন্য রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় এক একর জমিতে অফিস এবং পূর্বাচলে ৫ একর জমির ওপর একটি কেন্দ্রীয় গুদাম নির্মাণ করা হবে যার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দিবে জাপান। যেকোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলা ও প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচার চালানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের বৈঠকে এসব প্রস্তাব অনুমোদ দেয়া হয়। সভায় জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের সংশ্লিষ্ট ৪১ সংস্থা ও বিভাগের নীতিনির্ধারকরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা মোকাবিলায় জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, সচেতনতা না থাকার কারণেই বার বার বনানীর মতো অগ্নিকান্ডের মতো বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় মানুষের সচেতনতা জরুরি। জনগণকে জানাতে হবে এমন পরিস্থিতিতে কী কী করণীয়। সেগুলো প্রচার করতে হবে। প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান করবে। আর জাতীয়ভাবে যেকোনও দুর্যোগ এলে আমাদের করণীয় নিয়ে যে নির্দেশনাগুলো আছে সেগুলো ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। বিদ্যুৎ, গ্যাস সিলিন্ডার ও দাহ্য পদার্থ ব্যবহারে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন,আমাদের দেশে দুর্যোগ আসছে ঠিক, কিন্তু আমরা এটা সামাল দিচ্ছি। এতটুকু একটা দেশে ১৬ কোটি মানুষের বসবাস। পশ্চিমা দেশে যদি এরকম জনসংখ্যা হয়, তারা সামাল দিতে পারবে কিনা আমার সন্দেহ আছে। আধুনিকায়ন মানুষকে আরাম দেয়, সুবিধা দেয়। আবার মাঝে মাঝে ঝুঁকিও সৃষ্টি করে। অনেক ফায়ার এক্সিট বা জরুরি নির্গমণ পথে ইন্টেরিয়র সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অথবা সেখানে খালি জায়গায় যত মালামাল আছে সব ফেলে রাখা হয়। দুর্যোগ প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর (ভবন) সঙ্গে সেখানে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে সচেতনতা থাকা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার উদ্দেশে বলেন, কে, কোথায় কাজ করেন, কী করেন, সেখানে নিরাপত্তা কতটুকু, সবাইকে সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। দুর্যোগ এলে নিজেকে রক্ষায় কী কী করণীয় জানতে হবে। নিজেদের বাঁচাতে প্রস্তুতি থাকতে হবে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে একটা বহুতল ভবনে আগুন লেগেছিল। সেখানে দেখা গেছে, ওই ভবনে যারা কর্মরত ছিলেন তাদের মধ্যে কোনও সচেতনতা ছিল না। এমনকি সেখানে যে ফায়ার এক্সিট আছে সেটাও তারা জানতেন না। দুর্যোগ প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যারা ব্যবহার করছেন তাদের মধ্যেও সচেতনতা থাকা প্রয়োজন। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে যাতে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সে ব্যাপারে প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্যোগের ঝুঁকি প্রশমনে মানুষকে সচেতন করে তোলার পরিকল্পনা জরুরি। সামনে আসছে দুর্যোগের সময়। এসময় সতর্ক থাকতে হবে। ক্ষতির পরিমাণ কমানোর পরিকল্পনা থাকতে হবে। বহুতল ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের আরো সতর্কতা অবলম্বনের আহŸান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের ভবনটি হবে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল। এটি বিমানবন্দরের কাছাকাছি এবং মহাসড়কের কাছে নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যাতে প্রয়োজনে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও এ ভবনে অবস্থান নিতে পারেন। এ সেন্টার থেকে দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগোত্তর পরিস্থিতিতে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজ পরিচালনা, সমন্বয়, নির্দেশনা এবং পর্যবেক্ষণ করা হবে। ২০১৫ সালে নেপালে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে সারা দেশে কম্পন অনুভব এবং কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। দেশে দুর্যোগবিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলি (এসওডি) প্রথম প্রণয়ন করা হয় ১৯৯৭ সালে। প্রণয়নের ১০ বছর পর ২০১০ সালে তা সংশোধন করা হয়। এরই মধ্যে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে দুর্যোগের ধরনেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। বৈঠকে এসওডি সংশোধন প্রস্তাব ও ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (এনইওসি) প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। পরে এগুলোর বাস্তবায়য়েন জন্য কাউন্সিলের অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় এক একর জমিতে অফিস এবং পূর্বাচলে ৫ একর জমির কেন্দ্রীয় গুদাম নির্মাণ যেখানে বিদেশি সাহায্য গুদামজাত করা থাকবে। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল ইনকিলাবকে বলেন, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের সভায় এসওডি সংশোধন প্রস্তাব ও ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (এনইওসি) প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব আমরা উপস্থাপন করি। কাউন্সিলের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন