শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিজিএমইএ ভবন থেকে মালামাল সরিয়ে নিতে ফের সুযোগ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

রাজধানীর হাতিরঝিলে গড়ে ওঠা তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবনের মালামাল সরিয়ে নিতে ফের সময় দিয়েছে রাজউক। ভবনে অবস্থানরত অফিস মালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজউক এ সময় দেয়। রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভবনটি সিলগালা করে দেওয়া হলেও কিছু প্রতিষ্ঠানের মালপত্র থেকে গিয়েছিল। যা গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
রাজউকের পরিচালক ওয়ালিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, যারা মালামাল সরিয়ে নিতে আবারও আবেদন করেছেন তাদের জন্য আমরা আজকে তালা খুলে দিয়েছি। তারা আজ সারাদিন মালামাল সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে আজকেও যদি মালামাল সরিয়ে নেওয়া শেষ না হয়, তারা আবেদন করলে আমরা ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেব।
ওই ভবনের দশম তলা থেকে ১৩তম তলা পর্যন্ত অংশের মালিকানা ছিল ডিবিএল গ্রæপের হতে। প্রতিষ্ঠানটির মালামাল সরানোর কাজ তদারকি করতে আসা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, রাজউকের বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে সব মালামাল সরিয়ে নিতে চেষ্টা করছি। ৬০০ শ্রমিক কাজ করছে। আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পারব। ভবনের ষষ্ঠ তলার ক্লিপটন গ্রæপের এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক আগে হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেও বিজিএমইএ আমাদের কোনো নোটিস দেয়নি। উত্তরায় স্থায়ী ভবনে যেতে আরও এক মাস সময় লেগে যাবে। এ কয় দিনে আমাদের বেশ ক্ষতিই হল।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়ে এবং উন্মুক্ত স্থান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ ভঙ্গ করে বেগুনবাড়ি খালের একাংশ ভরাট করে গড়ে তোলা হয় ১৫ তলা বিজিএমইএ ভবন। ২০০৬ সালে সেই নির্মাণ কাজ শেষ হয়। জলাশয়ের উপর আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠা এই ভবনকে হাতিরঝিলের প্রকল্পের ‘ক্যান্সার’ আখ্যায়িত করে হাইকোর্ট ২০১১ সালে এক রায়ে ইমারতটি ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেয়। পরে আপিল বিভাগেও তা বহাল থাকে।
সর্বোচ্চ আদালত বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গার রায় দেওয়ার পর কয়েক দফায় সময় নিয়েছিলেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের এই সংগঠনের নেতারা। সবশেষ আদালতের দেওয়া সাত মাস সময়সীমা গত ১২ এপ্রিল শেষ হয়। ওই সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর গত মঙ্গলবার সকালে ভাঙ্গার যন্ত্রপাতি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে বিজিএমইএ ভবনের সামনে উপস্থিত হন রাজউকের কর্মকর্তারা। ভবনটির বিভিন্ন তলায় থাকা ১৯টি প্রতিষ্ঠানের মালামাল সরিয়ে নিতে সেদিন বিকাল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। পরে সময় বাড়িয়ে সুযোগ দেওয়া হয় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। এরপর বিভিন্ন ফ্লোরে তালা দিয়ে ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় রাজউক। মূল ফটকেও তালা দিয়ে সিলগালা করে দেওয়া হয়।
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম গত বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার ডাকা হয়েছে। ২৪ এপ্রিলের মধ্যে দরপত্র জমা দিতে হবে আর ২৫ এপ্রিলের মধ্যে বাছাই করা হবে ঠিকাদার। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, উপযুক্ত দেশীয় প্রতিষ্ঠান না পেলে বিদেশি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকেই ভবনটি ভাঙ্গার দায়িত্ব দেওয়া হবে। আদালতের রায়ে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষকেই ওই অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল। আর তারা তা না করলে রাজউককে ভবন ভেঙ্গে খরচের টাকা বিজিএমইএর কাছ থেকে আদায় করতে বলা হয়েছিল।
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক রায়হানুল ফেরদৌস গত বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, এই ভবন ভাঙ্গতে কী পরিমাণ টাকা লাগতে পারে, তার একটা মোটামুটি অ্যাসেসমেন্ট করা হয়েছিল আগেই। দুই কোটি টাকার মত লাগতে পারে। ভবনের মালামাল বিক্রি করে এই টাকাটা উঠে যাওয়ার কথা। দুটি বেইজমেন্টসহ ১৫ তলা বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গার জন্য যে দরপত্র ডাকা হয়েছে, সেখানেই ব্যবহারযোগ্য মালামাল কেনায় আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। দরপত্রের শর্তে বলা আছে, ভবন ভাঙ্গার জন্য আলাদা কোনো অর্থ দেওয়া হবে না। যারা ভবন ভাঙ্গবেন তারাই মালামাল কেনার দরপত্র দাখিল করতে পারবেন। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ মূল্য উল্লেখ করবেন, তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে।
ভবন ভাঙ্গার বিষয়ে বিজিএমইএ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করেছে মন্তব্য করে পূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম গত বুধবার বলেন, আদালতের নির্দেশনায় রাজউক ভবন ভাঙ্গার দায়িত্ব নিয়েছে। তবে যাবতীয় খরচ বিজিএমইএকেই দিতে হবে। আমরা আপাতত উদ্যোগ নিয়ে দক্ষ লোক দিয়ে ভবনটি ভাঙব। পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে ভাঙ্গার খরচসহ নানা বিষয় আমাদের প্রসেসের ভেতর থেকে অ্যাসেস করব। যদি দেখা যায়, আমাদের কোনো ঘাটতি থাকল, সেটা নিয়ে আমরা তাদের (বিজিএমইএ) নোটিশ দেব। হাতিরঝিলের ভবনটি হারিয়ে এখন ঢাকার উত্তরায় ১১০ কাঠা জমির উপর ১৩ তলা নতুন ভবন তৈরি করছে বিজিএমইএ; গত সপ্তাহে তা উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভবন ভাঙ্গার খরচের বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিজিএমইএর বিদায়ী সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনো কথা হয়নি। সেটা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আমরা বসব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Sahadat Rahman ১৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
সারা বছর এই করো।
Total Reply(0)
Nazmul Hasan ১৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
ঝুঁকিপূর্ণ না হলে বিজিএমইএ ভবন না ভেঙে সরকারি হাসপাতাল বা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান করলে দেশের লাভবান হবে। এতবড় একটা ভবন ভাঙতে গেলে কত টাকা খরচ পড়বে কেউ কি লক্ষ্য করেছেন? বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে খরচ ‘২ কোটি’ টাকা জানিয়েছেন রাজউক কর্তৃপক্ষ। বিদেশে এমন স্থাপনা ভাঙেনা তারা অন্য উপায় বের করে। অার অামরা ভাঙতে জানি কিন্তু গড়তে জানিনা। লজ্জিত অামরা
Total Reply(0)
S M Mamun Hossain ১৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
অ‌বৈধ জি‌নিস যতই মূল্যবান হোক না কে‌নো তা‌কে টি‌কি‌য়ে রাখা উ‌চিত নয়। কারণ এ‌তে অন্য অ‌বৈধ দখলদাররা উৎসা‌হিত হয়। এটা ভাঙার ম‌ধ্যে দি‌য়ে এক‌টি দৃষ্টান্ত স্থা‌পিত হ‌বে যে এ‌দে‌শে স‌র্বোচ্চ ক্ষমতাশালীরাও অন্যায় ক‌রে পার পায় না। প‌রিন‌তি দে‌রি‌তে হ‌লেও ভোগ কর‌তে হ‌বে।
Total Reply(0)
Md Faruk Rana ১৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
ভাই, এই বিল্ডিংয়ের কারণে লেকের করুন দশা, ভেঙ্গে ফেলাই উত্তম বলে মনে করি।
Total Reply(0)
MD Morshed ১৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 0
এই ভবন না ভেঙ্গে এটি একটি হাসপাতাল হিসেবে করা হওক এতে দেশেরই লাভ হবে ,, যদি ভেঙ্গে ফেলা হয় সেটধ অপচয়ের হয়ে গেলো ।।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন