শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

গণতন্ত্র না থাকলে উন্নয়ন টেকসই হয় না

মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

গত কলামে লিখে দিয়েছিলাম, ২০ দলীয় জোটের মিটিং প্রসঙ্গে পরের কলামে লিখব। সেই পরের কলাম এটি, ২০ দলীয় জোট গঠনের সূচনাপর্ব অর্থাৎ আট-দশ বছর আগের অবস্থা থেকে শুরু করছি। ২০ দলীয় জোটের প্রথমে নাম ছিল চারদলীয় জোট। কিন্তু দল ছিল পাঁচটি, যথা- বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট এবং খেলাফত মজলিস। কল্যাণ পার্টি যুক্ত হওয়ার পর্বটি থেকেই আমরা শুরু করছি। কল্যাণ পার্টির জন্ম ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে। জন্মের পর ১০ মাস পরিশ্রম করি আমি নিজে এবং সঙ্গী-সাথীরা; অনেক জেলা ও উপজেলায় সফর করি। প্রতিষ্ঠার পরের ১০ মাসে প্রায় ৩০ হাজার কিলোমিটার সফর করেছি। নিবন্ধন পাওয়ার পাঁচ সপ্তাহের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল সংসদ নির্বাচন। আমরা দলের প্রতীক হাতঘড়ি নিয়েই ৩৬টি আসনে নির্বাচন করেছিলাম; কিন্তু কোনো আসনে জিততে পারিনি।

পুরো ২০০৯-১০ সালে এবং ২০১১ সালের আগস্ট পর্যন্ত আমরা স্বতন্ত্রই ছিলাম। ২০১১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিএনপির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মেহমান হয়ে রাজনৈতিক দাওয়াত নিয়ে এসেছিলেন, ডিওএইচএস মহাখালীতে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে। তার সাথে আলাপের সময় পার্টির স্থায়ী কমিটির সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন, বিএনপি চারদলীয় জোটকে সম্প্রসারিত করতে চায়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে পুরনোদের শক্তিশালী করার জন্য। তিনি দাওয়াত দিয়েছিলেন, কল্যাণ পার্টি যেন সেই সম্পসারিত জোটে আসে; সবাই মিলেমিশে কাজ করার সুযোগ নিতে পারলে ভালো। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি সেই দাওয়াত গ্রহণ করে। পাঁচ-সাত দিন পরই রমজান মাস শুরু হয়। রমজান শেষ হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসন ও দেশনেত্রী বেগম জিয়ার সাথে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল ইবরাহিমের সৌজন্য বৈঠক হয়েছিল। বিএনপি ও কল্যাণ পার্টির মহাসচিবদ্বয় উপস্থিত ছিলেন। ২০১১ সালের অক্টোবরে নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে রাজপথে বিরাট জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেটিতে দাওয়াত পেয়ে মঞ্চে উপস্থিত ছিলাম এবং বক্তব্য রেখেছিলাম; ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য এটাই জোট রাজনীতির শুরু। জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার ইন্টারঅ্যাকশন হয়, আমি শিখছিলাম, এই শেখার যাত্রা নতুন মাত্রা পেল ওই মঞ্চ থেকে। যা হোক, পরের মাসগুলোতে বিএনপি আরো অনেক রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ-আলোচনা করে এবং চার-পাঁচ মাসের মধ্যে চারদলীয় জোটের স¤প্রসারিত একটি কাঠামো খাড়া করা হয়। ১৬ এপ্রিল ২০১২ সালে ১৬টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ প্রতিনিধিরা গুলশান কার্যালয়ে একত্র হয়েছিলাম নতুন জোট ঘোষণার দলিলে স্বাক্ষর করার জন্য; বাস্তবে ১৭টি দলের প্রতিনিধি স্বাক্ষর করেন। এই ১৭টি দলের প্রতিনিধিকে দাওয়াত দেয়া হয় ১৮ এপ্রিল অপরাহ্ণে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ভবনের তিনতলায় জোট ঘোষণার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে। যথাসময়ে আমি উপস্থিত ছিলাম; কিন্তু ১৭টি দল নয়, ১৮টি দলের নাম ঘোষণা করা হয় এবং ‘১৮ দলীয় জোট’ আত্মপ্রকাশ করে। মেহেরবানি করে খেয়াল করুন, তারিখটি ১৮ এবং দলের সংখ্যাও ১৮। রাজনৈতিক দলের প্রধান বা একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার বয়স তখন মাত্র চার বছর পাঁচ মাস; তখনো শিখছি; শিশুর মতো গভীর আগ্রহ নিয়ে অনেক কিছু দেখছি, আবার প্রবীণ হিসেবে অন্তর্দৃষ্টি দিয়েও দেখার চেষ্টা করছিলাম। ওই ‘১৮ দলীয় জোট’ ২০১৪ সালের জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে ‘২০ দলীয় জোট’ হলো।
আবার, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে আরো তিনটি দল যুক্ত হয়। কিন্তু নামটি ‘২০ দলীয় জোট’ রেখে দেয়া হয়। ৮ এপ্রিল ২০১৯ সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের মিটিংয়ের উপস্থিতির তালিকায় স্বাক্ষর করতে গিয়ে দেখলাম, ২০টি দলের নাম আছে; চার মাস আগে যোগ দেয়া তিনটি দলের নাম নেই; ঘটনাটির মাহাত্ম্য আমার মাথায় তখন ঢোকেনি। পাঠকের আগ্রহ হতেই পারে, কারা কারা এই জোটে ছিল। যারা রাজনীতি নিয়ে পুস্তক লেখেন, তাদেরও আগ্রহ থাকতে পারে। তাই পরের অনুচ্ছেদে নামগুলো দিলাম।
এই মুহূর্তে ২০ দলীয় জোটের দলগুলোর নাম, ২০১২ সালের এপ্রিলে যেমনভাবে বিএনপি সাজিয়ে দিয়েছিল, তেমনভাবেই উল্লেখ করছি। ওই সিরিয়ালে দলগুলোর জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের পেছনে রাজনৈতিক দর্শন বা যুক্তি অবশ্যই ছিল, কিন্তু তা নিয়ে আমি তখন গবেষণা করিনি। জোটের দলগুলোর নিবন্ধন সম্পর্কেও প্রতিটি দলের নামের পাশে মন্তব্য দিয়ে দিচ্ছি। এক. বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (নিবন্ধিত)। দুই. বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (ছিল নিবন্ধিত, বর্তমানে অনিবন্ধিত)। তিন. বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি (নিবন্ধিত)। চার. ইসলামী ঐক্যজোট (ছিল নিবন্ধিত, কিন্তু বর্তমানে যেহেতু একটি অংশ মাত্র আমাদের সাথে, সেহেতু নিবন্ধনের নিশ্চয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত নই)। পাঁচ. খেলাফত মজলিস (নিবন্ধিত)। ছয়. লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-এলডিপি (নিবন্ধিত)। সাত. জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা (নিবন্ধিত)। আট. বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (নিবন্ধিত)। নয়. ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (ছিল নিবন্ধিত, কিন্তু বর্তমানে যেহেতু একটি অংশ মাত্র আমাদের সাথে, সেহেতু এর নিশ্চয়তা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই; নিবন্ধন নিয়ে হাইকোর্টে মামলা শেষ পর্যায়ে এবং নিবন্ধন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী)। দশ. বাংলাদেশ ন্যাপ (ছিল নিবন্ধিত, কিন্তু বর্তমানে যেহেতু একটি অংশ মাত্র আমাদের সাথে, সেহেতু নিবন্ধনের নিশ্চয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত নই)। এগারো. ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-এনডিপি (আদালতের মাধ্যমে নিবন্ধন পেয়েছিল কিন্তু বর্তমানে যেহেতু একটি অংশ মাত্র আমাদের সাথে, সেহেতু নিবন্ধনের ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই)। বারো. বাংলাদেশ লেবার পার্টি (অনিবন্ধিত)। তেরো. বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল (নিবন্ধিত)। চৌদ্দ. ন্যাপ-ভাসানী (বর্তমানে যেহেতু একটি অংশ মাত্র আমাদের সাথে, সেহেতু নিবন্ধনের নিশ্চয়তা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই)। পনেরো. বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি (অনিবন্ধিত)। ষোলো. ডেমোক্র্যাটিক লীগ (অনিবন্ধিত)। সতেরো. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (নিবন্ধিত)। আঠারো. বাংলাদেশ পিপলস লীগ (অনিবন্ধিত)। ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের আগে যোগ দেয় দু’টি দল যথা- উনিশ. জাতীয় পার্টি (অনিবন্ধিত)। বিশ. বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (অনিবন্ধিত)। গত ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে যোগ দেয় তিনটি দল যথা- একুশ. বাংলাদেশ জাতীয় দল (অনিবন্ধিত)। বাইশ. পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশ (অনিবন্ধিত)। তেইশ. মাইনরিটি পার্টি (অনিবন্ধিত)।
দীর্ঘ দিন পর ২০ দলীয় জোটের মিটিং আহ্বান করা হয়েছিল, সেহেতু মিটিংটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ারই কথা ছিল। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার নোটিশে ডাকা মিটিংটিতে দলের চেয়ারম্যান বা সভাপতিপর্যায়ের অনেকেই আসতে পারেননি; ওইদিনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও কেউ কেউ আসতে পারেননি, কেউ কেউ আসেন বিলম্বে। কম-বেশি এক ঘণ্টা সময় আলোচনা হয়েছে। ২০ দলীয় জোট আনুষ্ঠানিকভাবে দেশনেত্রীর মুক্তির দাবির অনুকূলে জোটগতভাবে কী করতে পারে, সেটি আলোচনা হয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে ২০ দলীয় জোটের রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্ক আলোচিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, মিডিয়ায় যে রকম কিছুটা নেতিবাচক ধারণা ক্রমান্বয়ে উঠে আসছিল ২০ দলীয় জোটের কার্যকলাপ সম্বন্ধে, এই মিটিংয়ের ফলে তা দূর হওয়ার সুযোগ হয়েছে। ২০ দলীয় জোটের ২০টি দলের প্রতিনিধিদের পারস্পরিক দেখাসাক্ষাৎ হয়েছে। ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বা তাদের প্রতিনিধিদের মনোভাব ব্যক্ত হয়েছে। দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য বারবার ব্যক্ত হয়েছে কিছু করার আকুলতা।
সম্মানিত পাঠক, মেহেরবানি করে ৪৮ বছর আগে ফিরে যান; ১৭ এপ্রিল ১৯৭১-এ। ঘটনার স্থল একটি গ্রামের একটি আমবাগান। গ্রামটির নাম বৈদ্যনাথতলা। তখনকার কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার সদর থানার অন্তর্ভুক্ত একটি গ্রাম; সে আমলের পূর্ব পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত রেখা, সেই সীমান্ত রেখার সাথে লাগোয়া। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন তৎকালীন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব সিরাজউদ্দৌলা পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন মীরজাফর ও তার সঙ্গীদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে। ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত পলাশী নামক গ্রামের আমবাগানের পাশে উন্মুক্ত মাঠেই যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মীরজাফর আলী খান এবং তার বিশ্বাসঘাতক সঙ্গীরা আমবাগানে লুকিয়ে ছিল। অনুরূপ, আরেকটি আমবাগানে ১৯৭১-এর ১৭ এপ্রিল স্বাধীনতার সূর্যকে পুনরায় স্বাগত জানানো হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২৬ মার্চ ১৯৭১; কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বিশ্বের উদ্দেশে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করা হয়েছিল ২৭ মার্চ ১৯৭১; স্বাধীনতার ঘোষণা তথা প্রোক্লামেশন অব ইনডিপেনডেন্স আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত ও প্রচারিত হয়েছিল ১০ এপ্রিল ১৯৭১ এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়ে শপথ নিয়েছিলেন ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে। শপথ গ্রহণের জন্য এমন একটি জায়গা বেছে নিতে হয়েছিল, যে জায়গাটি পাকিস্তানি বিমান হামলা থেকে রক্ষা পাবে, আবার বাংলাদেশের ভূখন্ড হবে। বৈদ্যনাথতলার আ¤্কাননটি এই সুবিধা দিয়েছিল। শপথ গ্রহণের মুহূর্ত থেকে সেই গ্রামের নাম হয়ে যায় মুজিবনগর। সেখান শপথ গ্রহণ করেছিলেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, আরো তিনজন মন্ত্রী এবং মন্ত্রীর পদমর্যাদায় একজন প্রধান সেনাপতি (কর্নেল এম এ জি ওসমানী)। সেই ১০ এপ্রিল বা ১৭ এপ্রিল ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের ঘোষিত লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডে জনগণের জন্য ও জনগণের মধ্যে সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা। ৪৮ বছর পর আমরা সেই তিনটি ধারণার পেছনে আজো ধাওয়া করছি। অপ্রীতিকর বা দুঃখজনক হলেও সত্য, সাম্য অর্জনে বা সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বা মানবিক মূল্যবোধ চর্চায় আমরা ক্রমান্বয়ে দূরে সরে যাচ্ছি। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম আবেদন রাখছেন দেশবাসীর কাছে- সচেতন হতে, আগ্রহী হতে এবং প্রয়োজনে সংগ্রামী হতে এসব ধারণা প্রতিষ্ঠার জন্য।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিসহ গণতন্ত্রমনা দলগুলো এ উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু ক্রমান্বয়ে তাদের সামনে বৈরিতা ও বাধা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সততা ও নৈতিকতা সমাজ থেকে ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হচ্ছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে না হলেও অঘটনগুলোর প্রতি নির্লিপ্ততার কারণে, ধর্ষণজনিত ঘটনা ও নারী হত্যাজনিত ঘটনা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ যখন শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির কারণে অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে, তখন সরকার ছিল নির্লিপ্ত। ইয়াবা নামক ধ্বংসাত্মক মাদক বাংলাদেশে আমদানি করে, সমাজে বিতরণ করে ব্যবসার মাধ্যমে যখন হাজার হাজার মানুষ অমানুষ হয়ে যাচ্ছিল, তখনো সরকার কিছু করতে পারেনি। উন্নয়নের নামে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতি শুধু নীরবে সহ্য করা হয়নি, এর আইনি প্রটেকশনও দেয়া হয়েছে। যেগুলোকে আমরা ‘উন্নয়ন’ বলছি যেমন- নদীর ওপরে ব্রিজ, ফ্লাইওভারগুলো, পায়রা বন্দর ইত্যাদি চোখ ধাঁধানো বটে; কিন্তু বাংলাদেশের হৃদয়ের ওপর এক একটি পেরেকের মতো। আমরা নিশ্চিতভাবে, নিছক কংক্রিট স্ট্রাকচারের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি, কংক্রিট স্ট্রাকচারের ভারে মানবিক বাংলাদেশের, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের বুকের পাঁজর ভেঙে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার অবসানই দেশের মানুষের কাম্য। আমার বক্তব্যের সারমর্ম, উন্নয়ন ধীরে হতে পারে; কিন্তু গণতান্ত্রিক মানসিকতাকে সাথে নিয়ে উন্নয়নকর্ম পরিচালনা না করলে সে উন্নয়ন টেকসই হয় না, গণতন্ত্র পরিপক্বতা পায় না।
লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
রহিম ২০ এপ্রিল, ২০১৯, ১১:২৯ এএম says : 0
বতমান সরকার যত দিন থাকবে , বাংলাদেশে আর গনতন্ত পিরে আসবে না
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন