শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

আমদানি-রফতানিতে ধসের শঙ্কা

ভারতীয় কাস্টমসের বিতর্কিত নির্দেশনা

বেনাপোল অফিস | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ভারতীয় কাস্টম কর্তৃপক্ষের এক বিতর্কিত নির্দেশনায় বেনাপোল -পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বাণিজ্যে বড় ধরনের ধস নামার আশংকা করছেন ব্যবসায়ীরা। দেশের সর্ববৃহত বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৫/৬ শ’ পণ্য বোঝাই ট্রাক আসে ভারত থেকে।
কোলকাতার চীফ কাস্টমস কমিশনার স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয় এখন থেকে ভারত হতে যত পণ্য বাংলাদেশে রফতানি হবে তার প্রতিটি চালানের পণ্য পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় ট্রাক থেকে আনলোড করে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা সম্পন্ন করেই রফতানির অনুমতি দেবেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। বেনাপোল বন্দর দিয়ে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার শতকরা ৮০ ভাগ কাঁচামাল আমদানি হয়ে থাকে।
ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের হঠাৎ করে এ ধরনের নির্দেশনায় আমদানি বাণিজ্য অর্ধেকে নেমে আসবে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। প্রতিদিন ৫/৬’শ ট্রাক পণ্য আনলোড করে কিভাবে পরীক্ষন কাজ সম্পন্ন করে রফতানি করা হবে প্রশ্ন তাদের। অনুরূপভাবে বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য রফতানি হবে সেসব পণ্য ট্রাক থেকে খালাস করে শতভাগ পরীক্ষা করেই খালাসের অনুমতি দেয়া হবে। ফলে বাংলাদেশী পণ্য রফতানিতেও বড় ধরনের ধস নামার আশংকা করছেন ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি নিয়ে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। কারন বর্তমানে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর ও কালিতলা পার্কিং-এ ৫ হাজার পন্য বোঝাই ট্রাক আটকে আছে যত্রতত্র। ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধস নামার আশংকা করছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় বিভিন্ন অব্যবস্থাপনায় এমনিতেই একটি পণ্য চালান ভারত থেকে আমদানি হয়ে বেনাপোল বন্দর পর্যন্ত আসতে ১৫ দিন সময় লেগে যায়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া পেট্রাপোল বন্দরে এবার পণ্য চালান শতভাগ পরীক্ষাতে এ ভোগান্তি আরও দ্বিগুণ বাড়বে। এতে পণ্য খালাস একদিকে যেমন কঠিন হয়ে পড়বে তেমনি আমদানি খরচও বেড়ে দ্বিগুন হবে। যার প্রভাব পড়বে দেশীয় বাজারে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের জরুরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি করেছে ব্যবসায়ীরা। আর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, অফিসিয়ালভাবে তারা এখন পর্যন্ত কোন চিঠি হাতে পায়নি। তবে এ নিয়ম চালুতে দ্রæত আমদানি বাণিজ্য সম্পাদন মারাত্মকভাবে ব্যহত হবে।
জানা যায়, পেট্রাপোল বন্দর থেকে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের আগে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ ছাড়া এর আগে ট্রাক থেকে পণ্য নামিয়ে পরীক্ষণ করা হতো না। তবে ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেয়া হয়, খুব দ্রæত এ সিদ্ধান্ত মেনেই ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য সম্পাদন করতে হবে।
ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের স্টাফ এসোশিয়েশনের সাধারন সম্পাদক কার্তিক চন্দ্র জানান, কাস্টমস’র এ আদেশে দু’দেশের বাণিজ্য সম্পাদন কঠিন হয়ে যাবে। বিশেষ করে পচনশীল পণ্য চালান রফতানি কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আগে পাশ করা হয়েছে এমন পণ্য চালান বন্দরে প্রবেশ করেছে।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের ল্যান্ডপোর্ট সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, ভারতীয় পেট্রাপোল কাস্টমস সহ-কমিশনার স্বাক্ষরিত একটি আদেশ পাওয়া মাত্রই বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার/সিঅ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনসহ বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দফতরে অবহিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এখনই আলোচনা না হলে এ বন্দর দিয়ে বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়বে বলেও জানান তিনি।
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সাথে প্রতিবছর ৩০ হাজার কোটি টাকার বানিজ্য সম্পাদন হয়ে থাকে। সরকারের প্রতিবছর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজের কারণে প্রথম থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি ব্যবসায়ীদের। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বন্দরে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশাসনিক বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয়হীনতা আর ব্যবসায়িক হয়রানিতে সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে কাঙ্খিত রাজস্ব আসছে না।
চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গত ৬ মাসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে আদায় হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৪৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। ঘাটতি রয়েছে ৬০৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
বেনাপোল কাস্টমস’র সহকারি কমিশনার আকরাম হোসেন জানান, এ বিষয়ে ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কোন চিঠি দেয়নি। তবে ব্যবসায়ী ও চালকদের কাছ থেকে বিষয়টি শুনেছি। এ নিয়ম চালুতে দ্রæত বাণিজ্য সম্পাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে তিনি জানান।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন