বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

থাকছে না জেদ্দায় হাজীদের বিড়ম্বনা

সরকারের ১০০ দিন

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বর্তমান সরকারের এক শ’ দিনে ধর্ম মন্ত্রণালয় বেশ কিছু কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। সবচেয়ে বড় অর্জন বাংলাদেশী হাজীদের এ বছর থেকে জেদ্দা আন্তর্জাতিক হজ টার্মিনালে ও মদিনা বিমানবন্দরে অবতরণ করে আর কোনো বিড়ম্বনা থাকছে না। তারা বিমান থেকে নেমেই সোজা বাসে চড়ে মক্কা-মদিনার হোটেলে চলে যাবেন।
চলতি বছর থেকে বাংলাদেশি হাজীদের সউদী আরবের পরিবর্তে ঢাকায় হযরত শাহ জালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই প্রি-এরাইভাল ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। সউদী সরকার এ বিষয়ে সম্মতি প্রদান করেছেন। স্বাধীনতার পর থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে এটি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহর বলিষ্ঠ উদ্যোগে সউদী সরকার এ বিষয়টি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেই কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে।
বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় আসার একশ দিনের মধ্যেই এ ধরনের একটি ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জিত হলো। হজ মৌসুমে জেদ্দা বিমানবন্দরে অবতরণ করেই হাজীগণ সরাসরি বাসে চড়ে মক্কায় চলে যাবেন। মক্কায় নিজ নিজ হোটেল অথবা বাড়িতেই তাদের লাগেজ (ব্যাগ) পৌঁছে দেয়া হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশে সফররত সউদী হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের সচিব (উপমন্ত্রী) ড. হোসাইন বিন নাসের আল শরীফ ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ শেখ মো. আব্দুল্লাহর সাথে হোটেল শেরাটনে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ধরনের একটি শুভ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ায় হাজীদের মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। তারা মহান আল্লাহপাকের কাছে শুকরিয়া আদায় করে রাজকীয় সউদী বাদশার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আগে জেদ্দায় পৌঁছে বাংলাদেশী হাজীদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ৬-৭ ঘণ্টা বিড়ম্বনার কবলে পড়তে হতো। এখন থেকে বিমান থেকে নেমেই সরাসরি বাসে আরোহণ করবেন হাজীগণ।
আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা অনুসারে হজ ব্যবস্থাপনা বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। প্রথমেই বিবদমান দু’টি গ্রুপের মধ্যে বিরোধের জের ধরে বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় অবশেষে উভয় গ্রুপের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই টঙ্গীস্থ বিশ্ব ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হজের খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করেন এবং ২০১৯ সালের হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ১০১৯০ টাকা পর্যন্ত কমাতে সক্ষম হন।
হজ ব্যবস্থাপনার সার্বিক উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে রাজকীয় সউদী সরকারের আমন্ত্রণে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গত ২২ ফেব্রুয়ারি হতে ২ মার্চ পর্যন্ত সউদী আরব সফর করে। সফরকালে বাংলাদেশী প্রতিনিধিদল সউদী আরবের হজ এবং ওমরা বিষয়ক মন্ত্রী ড. মোহাম্মদ সালেহ বিন তাহের বেনতেন, সউদী হজ ব্যবস্থাপনায় মোয়াল্লেমদের সংগঠন মোয়াসসাসা জুনুব এশিয়ার চেয়ারম্যান ড. রাফাত ইসমাইল আল বদর, সউদী হজ ব্যবস্থাপনায় মদিনা অংশের কর্তৃপক্ষ আল ইদারা আল আহলিয়া লিল আদিল্লা তথা মদিনা ন্যাশনাল আদিল্লা অফিসের চেয়ারম্যান হাতেম জাফর বালী, সউদী আরবের ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স দাওয়া এবং গাইডেন্স বিষয়ক মন্ত্রী শেখ ড. আব্দুল লতিফ বিন আব্দুল আজিজ আল শেখ, মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগের মহাসচিব মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আলইসার এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ শেখ মো. আব্দুল্লাহ জানান, সউদী আরব সফর ছিল অত্যন্ত ফলপ্রসূ এবং আন্তরিকতাপূর্ণ। রাজকীয় সউদী সরকারের পক্ষ থেকে হজ ব্যবস্থাপনা, ইসলামিক অ্যাফেয়ার্সসহ সব বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়।
সউদী সফরকালে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের বর্তমান মুসলিম জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে প্রাপ্য অতিরিক্ত ২০ হাজার হজযাত্রীর কোটা বৃদ্ধি, সউদী আরবের বিমানবন্দরে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অপেক্ষার সময় ও কষ্ট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সউদী আরবের পরিবর্তে হজযাত্রীদের বাংলাদেশেই প্রি-এরাইভাল ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করা, চলতি বছর হজের সময় মিনায় অবস্থানকালে বাংলাদেশী হজযাত্রীদের দ্বিতল খাট ব্যবহারে বাধ্য না করা, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি এজেন্সির সর্বনিম্ন হজযাত্রীর সংখ্যা ১৫০ থেকে ১০০-তে কমিয়ে আনা এবং বাংলাদেশের পবিত্র হজের দিনগুলোতে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের জন্য মক্কা, মিনা, আরাফা, মুযদালেফা তথা মাশায়েরে মোকাদ্দসায় যাতায়াতের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত ও উন্নত বাস সেবা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান। এর প্রেক্ষিতে সউদী কর্তৃপক্ষ প্রায় সবগুলো দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন। বাংলাদেশের জন্য অতিরিক্ত ২০ হাজার হজযাত্রীর কোটা বৃদ্ধির বিষয়টি রয়েল কেবিনেটে উপস্থাপনের বিষয়ে সউদী হজমন্ত্রী আশ্বাস প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হজযাত্রীদের কষ্ট লাঘবে সউদী আরবের পরিবর্তে বাংলাদেশেই প্রি-এরাইভাল ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার বিষয়ে যা যা করণীয় দরকার তা করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রি-এরাইভাল ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে দেশের আট বিভাগে প্রত্যেক হজযাত্রীর দশ আঙুলের হাতের ছাপ সংগ্রহ করা হবে। এর ফলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সউদী কর্তৃপক্ষের ইমিগ্রেশন কাজ সহজ হবে। সরকারি হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়া করার উদ্দেশ্যে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গত ৬ মার্চ সউদী আরব গিয়ে বাড়ি ভাড়ার কাজ সম্পন্ন করে দেশে ফিরেছে।
এ দিকে, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মো আব্দুল্লাহ বলেছেন, আন্তঃধর্মীয় সংলাপের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক স¤প্রীতি আরো জোরদার করতে হবে। জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সংলাপের আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর মাধ্যমে হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক স¤প্রীতির ঐতিহ্য ও শিক্ষার কথা জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অত্যন্ত জোরালোভাবে ঘোষণা দিয়েছি যে, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কল্যাণে সমানভাবে কাজ করে যাবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়েছে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অন্যায় ও দুর্নীতি সহ্য করা হবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
স্বদেশ আমার ২০ এপ্রিল, ২০১৯, ২:৩৩ এএম says : 0
এই কৃতজ্ঞতা পাওয়ার অধিকার রাখে সরকার।
Total Reply(0)
কবির হোসেন ২০ এপ্রিল, ২০১৯, ২:৩৩ এএম says : 0
হজযাত্রীদের জন্য বড় ধরনের কষ্ট লাঘব হয়ে গেল, খুবই ভালো খবর।
Total Reply(0)
কবির হোসেন ২০ এপ্রিল, ২০১৯, ২:৩৫ এএম says : 0
হজযাত্রীদের এতদিনের ভোগান্তি কমিয়ে নতুন ব্যবস্থা চালু করায় সরকার উপকারী উদ্যোগ নিয়েছে।
Total Reply(0)
Muhommod Golam Kibria ২০ এপ্রিল, ২০১৯, ৮:০৭ এএম says : 0
জেদ্দায় ইমিগ্রেশন শেষ করতে ঊর্দ্ধে 4/5 ঘন্টা লাগতো, এখন ঢাকায় এ কাজটি সম্পাদনে যদি এর চেয়ে কম সময় লাগে তাহলে হাজী সাহেবদের কষ্ট লাঘব হবে ৷ কিন্তু যদি সময় বেশী লাগে এবং ঢাকা এয়ারপোর্টে অনেক সময় অপেক্ষা করা লাগে, তাহলে ভোগান্তি বাড়বে বৈ কমবে না ৷ তবে আমরা আশাবাদী যে কাজটি দক্ষতা ও দ্রুততার সাথে সম্পন্ন হবে৷
Total Reply(0)
Muhommod Golam Kibria ২০ এপ্রিল, ২০১৯, ৮:২৮ এএম says : 0
জেদ্দায় ইমিগ্রেশন শেষ করতে ঊর্দ্ধে 4/5 ঘন্টা লাগতো, এখন ঢাকায় এ কাজটি সম্পাদনে যদি এর চেয়ে কম সময় লাগে তাহলে হাজী সাহেবদের কষ্ট লাঘব হবে ৷ কিন্তু যদি সময় বেশী লাগে এবং ঢাকা এয়ারপোর্টে অনেক সময় অপেক্ষা করা লাগে, তাহলে ভোগান্তি বাড়বে বৈ কমবে না ৷ তবে আমরা আশাবাদী যে কাজটি দক্ষতা ও দ্রুততার সাথে সম্পন্ন হবে৷
Total Reply(0)
মোঃ শরীফুজ্জামান ২০ এপ্রিল, ২০১৯, ৬:০৬ পিএম says : 0
হাজিদের ভিসা সংক্রান্ত কোন জটিলতা থাকলেও তা নিজ দেশে সম্পন্ন করার ব্যবস্তা হলে হাজীগণ অনেকটা স্থস্তিতে থাকবেন। ধন্যবাদ-প্রতিমন্ত্রী, ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রীকে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন