বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মন্ত্রণালয়ের ইমেজ ফিরিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী

সরকারের ১০০ দিন

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:৩১ এএম

সরকারের মেয়াদের প্রথম ১০০ দিনে ৫৮ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জনহয়রানি ও দুর্নীতির দায়ে জর্জরিত একটি মন্ত্রণালয়ের ইমেজ ফিরিয়ে এনে জনবান্ধব করার ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রথমবার এমপি হয়েই মন্ত্রিসভার পূর্ণমন্ত্রী এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে ২০টি নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। নতুন দায়িত্ব নেয়ার পর রাজধানীর বড় বড় কয়েকটি ঘটনার সমালোচনার মুখেও পড়েছিলেন তিনি। রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় শুধু মালিক ও ডেভেলপার নয়, অন্য কারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সস্পৃক্ত, তাদেরকেও খুঁজে বের করার জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন ও কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ দিকে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সততা, স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিলেও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ( রাজউক)-এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তা এখনো পালন করছেন না। নির্মিত সকল ইমারতের পরিদর্শন রিপোর্ট এবং তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ গড়তে ইশতেহারে উন্নয়ন-সমৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে সরকার। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের মূল বিষয় ছিল তারুণ্য এবং গ্রামের উন্নয়ন। ইশতেহারে ২১ দফা অঙ্গীকার করে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। নির্বাচনী ইশতেহারে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতির সামনে তারুণ্য এবং গ্রামের উন্নয়ন তুলে ধরা হয়। গত সপ্তাহে প্রথম ১০০ দিন পার করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরে মন্ত্রণালয়ে জনহয়রানি ও দুর্নীতির দায়ে জর্জরিত ইমেজ ফিরিয়ে এনে জনবান্ধব করার ক্ষেত্রে অনেকগুলো কার্যকরী উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয় দফার মন্ত্রিসভায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী হিসেবে তার নেয়া পদক্ষেপগুলো হচ্ছে- মন্ত্রণালয়ে নির্ধারিত সময়ে নিয়মিত উপস্থিত হয়ে কার্যক্রম শুরু ও তদারক করা, মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় সভা ও দিকনির্দেশনায় বিভিন্ন কর্মকান্ডের স্থবিরতা কাটিয়ে গতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করা, গতানুগতিক কাজের বাইরে এসে বিভিন্ন বিভাগের কাজকে মনিটর করা, অকারণে বা ক্ষুদ্র বিপত্তি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা কাজকে গতিশীল করে সম্পন্ন করা।
মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর-সংস্থাকে সনাতনী পদ্ধতির বাইরে এনে দীর্ঘসূত্রতার অবসান ঘটিয়ে ইমেজ ফিরিয়ে এনে সেবা সহজীকরণের মধ্য দিয়ে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করা। নির্মাণকাজের জন্য একটি নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে ১৬টি সংস্থার শরণাপন্ন হতে হতো। ১২টি অপ্রয়োজনীয় স্তরকে বাদ দিয়ে মাত্র ৪টি স্তর বা শর্ত রাখার মধ্য দিয়ে এবং দীর্ঘ দিন পর্যন্ত চলমান রাখার নীতি পরিবর্তন করে স্বল্প ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাজউকের নকশা অনুমোদন, বিক্রয় অনুমতি, নামপত্তনসহ অন্যান্য কার্যক্রমকে পুনর্বিন্যাস করা।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য সংস্থায় একইরূপে সেবা সহজীকরণ ও দীর্ঘসূত্রতা দূর, ১ মে ২০১৯ থেকে রাজউকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম অটোমেশন পদ্ধতির অধীনে আনয়নের মধ্য দিয়ে নাগরিক সেবাকে ডিজিটালাইজড করার সিদ্ধান্ত ও বর্তমান অবস্থায় পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা। উত্তরা তৃতীয় পর্ব ফ্ল্যাট প্রকল্প, পূর্বাচল আবাসিক এলাকাসহ অন্যান্য প্রকল্প সরেজমিনে একাধিকবার পরিদর্শন করে প্রকল্পের গতি ত্বরান্বিত করা, কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং ত্রুটিপূর্ণ কাজ বন্ধ করে গুণগত মানের কার্যক্রম সরেজমিনে মনিটর করা। সরকারি অর্থ সাশ্রয় ও নির্দিষ্ট সময়ে কাজ বা প্রকল্প সম্পন্ন করা। অনিবার্য কারণে কোনো প্রকল্পের সময় বৃদ্ধি করা হলে কোনোভাবেই আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধি না করা। এর ফলে দীর্ঘ দিনের খারাপ দৃষ্টান্তের অবসান ঘটানো হয়। সরকারি স্বার্থ যথাযথভাবে সংরক্ষিত না হওয়ায় একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব বাতিল করে নতুন করে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে উপযুক্ত আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান করা। রাজউককে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সদস্যপর্যায়ে দায়িত্ব বণ্টন, রাজউকের নথি হারিয়ে যাওয়ার দীর্ঘ দিনের খারাপ দৃষ্টান্ত অবসানের জন্য সকল নথি বা রেকর্ড খুঁজে বের করা, কোনো নথি না পাওয়া গেলে একই নথির বিকল্প নথি তৈরি করা এবং স্ক্যানিং পদ্ধতির মাধ্যমে ডাটাবেজ করে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থা চালু করা। ঢাকা মহানগরীর অপরিকল্পিত ইমারতের ঝুঁকি থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করার জন্য পর্যায়ক্রমে সকল ইমারত পরিদর্শন করে রিপোর্ট অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ।
রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় শুধু মালিক ও ডেভেলপার নয়, অন্য কারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সস্পৃক্ত, তাদেরকেও খুঁজে বের করার জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন ও কার্যক্রম শুরু করা। অবহেলাজনিত কোনো কারণে কোনো নাগরিকের মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট অবহেলাকারীকেও ফৌজদারি আইনের আওতায় আনা। প্রভাবশালী ব্যক্তির বেআইনিভাবে নির্মিত স্থাপনা ভেঙে দিয়ে আইনের বাস্তব প্রয়োগ করা। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থায় পৃথক পৃথক সমন্বয় সভা করে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দিকনির্দেশনা প্রদান করে অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠা, সততা, স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়া। দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কিছু ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করার মধ্য দিয়ে বাস্তবতার প্রতিফলন দেখানো। মন্ত্রণালয়ে এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর-সংস্থার কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা, সততা ও দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ গ্রহণ করা। অনুমোদনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্মিত সকল ইমারতের পরিদর্শন রিপোর্ট এবং তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার নির্দেশ।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন