শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

দুই বাংলাদেশী নিখোঁজ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

আট বিস্ফোরণের নিহত ২ শতাধিক, শ্রীলঙ্কাজুড়ে কার্ফু

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০১৯, ৪:৫৬ পিএম

ধারাবাহিক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল শ্রীলঙ্কা। রোববার দুপুর পর্যন্ত আটটি বিস্ফোরণ ঘটেছে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো-সহ সংলগ্ন এলাকায়। সকালে রাজধানী কলম্বোর কয়েকটি তিনটি হোটেল ও তিনটি গির্জা ধারাবাহিক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত অন্তত ২০০ জনের নিহত হওয়ার খবর মিলেছে। আহত হয়েছেন তিনশোরও বেশি। সেখানকার দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, দুইজন বাংলাদেশী নাগরিকের নিখোঁজ রয়েছেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রতি ও প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ করেছেন।

শ্রীলংকায় গির্জায় ইস্টারের প্রার্থনা চলাকালীন এই হামলা ঘটে। কেউ এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ন’জন বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন। সকালের ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পর আরও একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে দুপুরে। সংবাদ সংস্থা এএফপি সূত্রে জানা গিয়েছে এমনটাই। শ্রীলঙ্কার দেহিওয়ালার হোটেলে সপ্তম বিস্ফোরণটি ঘটে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত দুই ব্যক্তি। এর পরে ফের কলম্বোয় অষ্টম বিস্ফোরণের খবর আসে।

কলম্বো হামলা পরে সেনা নামিয়েছে শ্রীলঙ্কা প্রশাসন। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহে। একটি টুইট করে তিনি বলেন, এ জাতীয় হামলা একেবারেই কাপুরোষোচিত। দেশের প্রতিটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে ও দৃঢ় মনের পরিচয় দিতে অনুরোধ জানান তিনি।

রোববার সকাল পৌনে নটা নাগাদ ধারাবাহিক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে রাজধানী কলম্বো। ইস্টারের প্রার্থনার সময় তিনটি গির্জায় বিস্ফোরণ ঘটে। একই সঙ্গে তিনটি হোটেলেও পর পর বিস্ফোরণ ঘটে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। ঘিরে ফেলে এলাকা। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

কলম্বো ন্যাশনাল হাসপাতালের তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়, ‘৮০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে গুরুতর জখম অবস্থায়, আহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।’ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে কলম্বো পুলিশ।

কলম্বোর কোচ্চিকাড়ের অ্যান্টলি গির্জা,কাতুয়াপিতিয়ার সেন্ট সিবেস্টিয়ান গির্জা-সহ একাধিক জায়গায় বিস্ফোরণের ভয়াবহ শব্দ শোনা গিয়েছে। সাংরি লা, সিনামন গ্র্যান্ডের মতো বিলাসবহুল হোটেলেও চলে হামলা। হোটেলগুলিতে অসংখ্য বিদেশি পর্যটক ছিলেন বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই বিস্ফোরণের বিভিন্ন ছবি উঠে এসেছে টুইটার এবং সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে। তবে কোন জঙ্গি গোষ্ঠী এই বিস্ফোরণের পিছনে রয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়৷

শ্রীলঙ্কা মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরই দেশ। দেশে খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী ক্যাথলিকদের সংখ্যা ছয় শতাংশ মাত্র। ইস্টারের প্রার্থনার কারণেই গির্জায় বেশ ভিড়ই ছিল, তাই এই নির্দিষ্ট সময়টাকেই জঙ্গিরা বেছে নিয়েছে বলে মত শ্রীলঙ্কা পুলিশের।

কলম্বো পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ দিন রাজধানীর উত্তরাঞ্চল ছাড়াও এর পার্শ্ববর্তী নেগ্বো শহরের চার্চে ঘটানো হয় আত্মঘাতী এই বিস্ফোরণ। যদিও এর প্রকৃত কারণ এবং ঠিক কারা এর সঙ্গে জড়িত তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এর কারণ অনুসন্ধান এবং অপরাধীদের গ্রেফতারে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ নির্মম এ হামলায় হতাহতদের জন্য শোক প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে তিনি হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনাও জানিয়েছেন।

নৃশংসতম এ হামলায় হতাহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ঘটনায় তিনি গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। তাছাড়া আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন তিনি।

আত্মঘাতী এই সিরিজ বোমা বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও দুই বাংলাদেশী নিখোঁজ রয়েছে বলে হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে। দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন সেখানে থাকা বাংলাদেশি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত বাংলাদেশির হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, ‘নির্মম এ হামলায় হতাহত বিদেশিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশির মৃত্যু কিংবা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। শ্রীলঙ্কায় বসবাসরত সকল বাংলাদেশিদের বাসায় বা নিরাপদ স্থানে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

কলম্বো ও এর আশপাশে থাকা বাংলাদেশিদের খোঁজখবর জানতে ইতোমধ্যে হাইকমিশনের একটি হট লাইন খোলা হয়েছে; যাতে করে যে কেউ সেই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। হামলায় হতাহতদের খবর জানতে +৯৪৭১২৪০৬৩১৩ নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। সূত্র: এএফপি, বিবিসি, এনডিটিভি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ম নাছিরউদ্দীন শাহ ২১ এপ্রিল, ২০১৯, ৮:০৩ পিএম says : 0
গির্জা মসজিদ মন্দির ধম্মীয় উপাসনালয়ে হামলা কারীরা কোন ধর্মের মানুষ হতে পারেনা। এইসব নরকের কিট।নিকৃষ্ট নরপশু হায়নাদের পকৃত পরিচয় বাহির করতে হবে। শত শত মায়ের করূন আত্যনাদ আল্লাহর আরস কাপছে। আমরা দেশ জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সবাই গভীর ভাবে শোকাহত। শোকাহত দেশের প্রতি তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সহানুভুতি প্রকাশ করছি। সারা বিশ্বের শান্তি প্রিয় মানুষের দাবি। এই ভয়ংকর হত্যা কান্ডের হায়েনা দের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। মাষ্টার মাইন্ট দের চিহ্নিত করতে হবে। এদের পিছনের শক্তিশালী গোষ্ঠী চিহ্নিত করা জরুরী। যে কোন হামলা হলে মুসলিম জঙ্গিদের কাজ। সারা বিশ্বের দুইশত কোটির অদিক মুসলমানদের পক্ষে বলতে হবে। প্রবিত্র কোরআন সুন্নাহ মতে কোন মুসলিম এই সমর্থন করতে পারেন না। নিরহ মানুষের হত্যা করে কারা গভীর ষড়যন্ত্র করছে। আন্তর্জাতিক সম্পদায় জানা অবশ্যই দরকার। বিশ্ব মিডিয়ার অনুসন্ধানী সাংবাদিক বড় প্রয়োজন।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন