শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তাঙ্গন

ময়মনসিংহের ‘বড় মসজিদ’

প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
কিংবদন্তির জনপদ ময়মনসিংহ। পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের তীরে অবস্থিত ময়মনসিংহ এখন বিভাগীয় মহানগরী। ‘আইন-ই-আকবরি’তে অঞ্চলটির বিবরণ রয়েছে। ‘আকবরের সময় মোমেনশাহী পরগনার শাসনকর্তা মোমেনশাহ্র নামানুসারে পরগনার নামকরণ করা হয় মোমেনশাহী। পরবর্তী সময়ে আলাপসিং পরগনার ‘সিংহ’ যুক্ত হয়ে উচ্চারণ পরিবর্তনে তা হয় ময়মনসিংহ’ (ইসলামী বিশ্বকোষ: ১৬ খ. ২য় ভাগ, পৃ: ১০৮)। তবে বাংলার স্বাধীন সুলতান ষোড়শ শতাব্দীর সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্র পুত্র সৈয়দ নাসিরুদ্দিন নসরত শাহ্র নামে প্রতিষ্ঠিত নাসিরাবাদ রাজ্যকে কেন্দ্র করে আদি ময়মনসিংহ নগরীর গোড়াপত্তন। ১৭৮৭ সালের ১ মে ময়মনসিংহ জেলা প্রতিষ্ঠিত। ১৩ অক্টোবর ২০১৫ ময়মনসিংহ বাংলাদেশের প্রশাসনিক অষ্টম বিভাগ হিসেবে পথ চলা শুরু করে।
হযরত শাহজালালের (রহ.) আগমনের ২৫০ বছর আগে ৪৪৫ হি./১০৫৩ খ্রি. হযরত শাহ্ মুহাম্মদ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি (রহ.) বৃহত্তর ময়মনসিংহে ইসলাম প্রচার করেন। ঈমান-ইবাদতের চেতনায় উজ্জীবিত ময়মনসিংহের মিনারে মিনারে ধ্বনিত হয় তাওহিদ-রিসালাতের অমীয়বাণী। তাই ‘বড় মসজিদে’র খ্যাতি স্মরণ করিয়ে দেয়Ñ
‘কি যে এক আকর্ষণে,
ছুটে যাই মুগ্ধমনে।
কি নিশীথে, কি দিবসে মসজিদ পানে...
নদী ও পাখির গানে... ভূধরে,
সাগরের জলে নির্ঝরণী কলকলে,
আমি যেন শুনি সেই আযানের ধ্বনি...’ (কায়কোবাদ)
ঈদ, জুমআ’র দিন হাজার হাজার মানুষ বাস-ট্রেনে চড়ে ও পায়ে হেঁটে বহুদূর পথ পাড়ি দিয়ে আসেন ময়মনসিংহের কেন্দ্রীয় মসজিদ তথা পূর্ণাঙ্গ দ্বীনী প্রতিষ্ঠান ‘বড় মসজিদে’র ফায়েজ নেওয়ার জন্য।
কোতোয়ালি থানা সংলগ্ন চক বাজার নামক স্থানে প্রায় পৌনে দু’শ বছর আগে (১৮৫০/১৮৫২ খ্রি.) তৎকালীন জমিদারের মৌখিক অনুমতিক্রমে গণ্যমান্য মুসলমানগণ নামাজ আদায়ের জন্য টিনের ছাপড়া মসজিদ নির্মাণ করেন। কালের ¯্রােতধারায় এই মসজিদটিই ময়মনসিংহের গর্ব ও ঐতিহ্যের স্মারক ‘বড় মসজিদ’। ১৯৩৫ সালের বেঙ্গল ওয়াকফ্ অ্যাক্টের অধীনে মসজিদটি পাবলিক এস্টেটে পরিণত হয়।
প্রায় ০১.৯ একর জমির উপর নির্মিত ‘বড় মসজিদ’ একটি তিনতলা সুরম্য স্থাপত্য নিদর্শন। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১০৫ ফুট ও প্রস্থ ৮৫ ফুট। কাতার, প্রতি তলায় ১৮টি। অন্তত, পাঁচ হাজার মুসল্লি এখানে একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন। অপূর্ব অলঙ্করণে সুশোভিত মসজিদের ১২৫ ফুট উঁচু দু’টি মিনার ও একটি কেন্দ্রীয় সুবৃহৎ গম্বুজে ব্যবহৃত হয়েছে চীনামাটির তৈজষপত্রের টুকরা দিয়ে তৈরি নান্দনিক নকশা আস্তরণ। মসজিদের পশ্চিম দিকে রয়েছে দুটি অনুচ্চ ফাঁপা গম্বুজ। ছাদের রেলিং দেওয়া হয়েছে গম্বুজের আদলে ঢেউ খেলানো শোভায়। মসজিদের তিনটি প্রবেশমুখেও আছে অনুচ্চ গম্বুজ শোভিত ফটক। মসজিদ আঙ্গিনাকে অলঙ্কৃত করা হয়েছে আরো কয়েকটি বৃহদাকৃতির অনুচ্চ গম্বুজ ও লতাপাতার বিন্যস্ততায় থোকায় থোকায় আঙ্গুর শোভিত ফটক ও অনুচ্চ নকশা দেয়াল দিয়ে। মসজিদের প্রবেশমুখেই আছে জলকেলিরত রঙ-বেরঙের মাছের শোভাম-িত স্বচ্ছ-পবিত্র পানির দু’টি হাউজ ও আলাদা অজুখানা। অদূরেই রয়েছে অত্যাধুনিক বেশকিছু সৌচাগার। মসজিদের অভ্যন্তরে মূল্যবান মোজাইক পাথরের মেঝে, কার্পেট, দেয়ালজুড়ে স্বেত-শুভ্র মনোরম টাইলস, সুদৃশ্য ঝাড়বাতি, অত্যাধুনিক শব্দ নিয়ন্ত্রণ ও তাপানুকূল ব্যবস্থাপনা মুসল্লি মননে জান্নতি আবহ ও ইবাদতে একাগ্রতা জাগিয়ে তোলে। পবিত্র রমজানে অসংখ্য মুসল্লি এই মসজিদে ই’তিকাফ করেন। মসজিদ সংলগ্ন দু’টি বহুতল ভবনে রয়েছে সুবিশাল আবাসিক হাফিজি ও কাওমি মাদ্রাসা। এখানে বিদগ্ধ আলিমগণের তত্ত্বাবধানে ‘দাওরা হাদিস’ পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। রয়েছে সমৃদ্ধ ধর্মীয় পাঠাগার। মসজিদ মার্কেটেও রয়েছে কুরআন-কিতাব, টুপি, জায়নামাজ, তাসবিহ্র বিশাল সমারোহ।
প্রায় প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ১৯৪০ খ্রি. পর্যন্ত মিসর থেকে আগত প্রখ্যাত ক্বারী ও আলিম হজরত মাওলানা আব্দুল আওয়াল (রহ.) ইমামের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মিসরী ক্বারী সাহেব নামে পরিচিত। ১৯৪১ থেকে ১৯৯৭ খ্রি. টানা ৫৬ বছর হাকিমুল উম্মাত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবির (রহ.) খলিফা, মুজাদ্দিদে মিল্লাত, যামানার কুতুব হযরত মাওলানা ফয়জুর রহমান (রহ.) ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর পবিত্র ফায়েজ, সান্নিধ্য, দোয়া, দাওয়াত ও খেদমত-মেহনতে ময়মনসিংহের ‘বড় মসজিদে’র দ্যুতি বিশ্বব্যাপী। মসজিদ পরিচালনা কমিটি এ মহান আধ্যাত্মিক সাধকের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ মসজিদ সংলগ্ন মাদরাসাটির নামকরণ করেন ‘জামিয়া ফয়জুর রহমান (রহ.)’। ১৯৯৭ খ্রি. থেকে এখন পর্যন্ত হাদিয়ে যামান, পীরে কামিল, হাযরাতুল-আল্লামা শাইখ আব্দুল হক (দা. বা.) অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে ইমাম ও খতিবের দায়িত্বরত আছেন। অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ছানি ইমামÑ হাফিজ, মুফতি, মাওলানা রাইছুল ইসলাম (দা. বা.)। ‘বড় মসজিদে’র খিদমতে আরো রয়েছেন ১ জন হিসাব রক্ষক, ২ জন মুয়াজ্জিন ও ৩ জন খাদিম। সর্বসাধারণের দোয়া-দানে মসজিদটি সবসময় তিলাওয়াৎ, তা’লিম-তাবলিগ ও ইবাদতের গাম্ভীর্যে থাকে প্রাণময়।
ষ লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মো: গোলাম মোস্তফা ১৮ নভেম্বর, ২০১৯, ৯:৪৯ এএম says : 0
পৃথিবীর সমস্ত মানুষ যাতে মুসলমানের দলে এসে আল্লাহর এবাদত করে । মুসল মান হয়ে মরতে পারে
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন