শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শেখ ওয়াসিফের বলে আর ছক্কা মারা হবে না জায়ানের!

ফয়সাল আমীন | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ৮:১৫ পিএম

মন ভালো নেই শেখ ওয়াসিফের। কিছুতে মন বুঝাতে পারছে না সে। স্মৃতির পাহাড় ধাক্কা মারছে বারবার ওয়াসিফকে। অল্প আয়ুতে অন্যদের মতো ওয়াসিফের মনেও অবিস্মরীন সুখ স্মৃতি গেঁথে রেখেছে জায়ান। সেকারনে জায়ানের অকাল মৃত্যুতে ঝড় উঠেছে সর্বত্র। সেই ঝড়ে ব্যথিত ওয়াসিফও। তাই বুকের ভেতর জমে গেছে কান্নার পাহাড় ওয়াসিফের। মনের অজান্তেই চোখ বেয়ে পড়ছে পানি। হিসেববিহীন স্মৃতি জায়ানের সাথে ওয়াসিফের। ওয়াসিফ মতিঝিল আইডিয়ার স্কুল এন্ড কলেজের ক্লাস নাইনের ছাত্র। কিন্তু ভাগ্নে জায়ান চৌধুরী (৮) গুলশান সানবীন স্কুলে ক্লাস ওয়ানে পড়তো। কিন্তু শিশু সুলভ মন-মানসিকতায় তারা জড়িয়েছিলেন নিবীড় সর্ম্পকে। দেখা হলেই হই হুলোড়। মামু-ভাগ্নে ছিলেন খেলার সাথিও । শিশু জায়ান ক্রিকেট ব্যাড নিয়ে অপেক্ষায় থাকতেন মামার বলে ছক্কা মারতে। ব্যাডে বলে মিলে গেলে খুশিতে যেন আকাশ যেন ছুঁয়ে যেত তার। মামা আরও বল চাই বলে আবদার করতো জায়ান। একই সাথে মামার কোলে উঠে ঘুরে বেড়ানোর বায়না মেঠাতে মামা ওয়াসিফ ছিলেন অন্তু:প্রাণ। জায়ানের মধ্যে শিশুসুলভ চঞ্চলতার চেয়ে শান্ত ও ঠান্ডা মেজাজের স্বভাব ছিল লক্ষনীয়। আভিজাত্যের চাপ ছিল স্বভাব ভঙ্গিতে। ওয়াসিফের সাথে শেষ দেখা হয় জায়ানের গত ২৬ মার্চ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য সাংসদ শেখ সেলিমের বনানীর বাসায়। ওই দিন জায়ান মা-বাবার সাথে এসেছিলেন নানা শেখ সেলিমের বাসায়। শেখ সেলিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই। নিহত জায়ান শেখ সেলিমের কন্যা শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়ার প্রথম পূত্র। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামাতো বোন শেখ মলির পূত্র শেখ ওয়াসিফ। সেকারনে পরস্পর আতœীয়তার পরম বন্ধনে একাকার। জায়ানের পিতা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স। প্রিন্সের গ্রামের বাড়ি সিলেট সুনামগঞ্জের ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামে। ওয়াসিফ মুঠোফোনে বলেন, গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জে সম্ভবত একবারই গিয়েছিল জায়ান এ পর্যন্তই। তবে মা-বাবার সাথে প্রায় দেশ বিদেশ ঘুরতো জায়ান। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি শ্রীলংকায় বেড়াতে যায় জায়ান। জায়ানের ছোট ভাই জোয়ান চৌধুরী ও মা শেখ সোনিয়া হোটেলের রুমে থাকায় বোমার হামলা থেকে রক্ষা পেয়ে যান তারা। কিন্তু নাস্তা করতে সকালে বাবার সাথে জায়ান হোটেলের নিচে নামতেই মরন বোমার আঘাত এসে পড়ে তাদের উপর। তারপর অন্য এক ইতিহাসে বিলীন হয়ে যায় জায়ানের জীবন। অগুনতি স্মৃতি, আগামীর ভবিষ্যত সব কিছুই থমকে যায় বোমার আঘাতে। জীবন স্বপ্ন অবিশ্বাস্যভাবে হারিয়ে, শোকের ছায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর গোটা পরিবার। কেবল স্মৃতি আর স্মৃতি জায়ানময় সকলের চোখে মুখে, অনেকে বাকরুদ্ধ।
ওয়াসিফ বলেন, জায়ান প্রায়ই মোবাইলে কথা বলতো তার সাথে। কাকু বলে সম্ভোধন করতো ওয়াসিফকে। ওয়াসিফ বলতে কাকু না মামা বলো। তখন হি হি করে হেসে ফেটে উঠতো যেন জায়ানের দুনিয়া। টুঙ্গী পাড়ায় তারা একত্র হতেন প্রায়ই। সর্বক্ষন ওয়াসিফের সঙ্গি থাকতো জায়ান। মামার হাত ধরে ঘুর ঘুর করতে খুবই পছন্দ করতো জায়ান। আশপাশ দেখে শুধু প্রশ্নের ফুলঝুরি ফুটাতো ওয়াসিফকে উদ্দেশ্যে করে। মামা ওয়াসিফও সাধ্য মতো উত্তর দিয়ে কৌতুহল নিবারনে চেষ্টা করতেন ভাগ্নে জায়ানের। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেতে খুব পছন্দ করতো জায়ান। আজ জায়ান নেই, কিন্তু ভাগ্নের স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে মামা শেখ ওয়াসিফকে। এখন জায়ানের মুখ শেষ বারের মতো দেখার ক্ষণ যেন সইতে পারছেন না ওয়াসিফ। বুধবার দুপুরে বাংলাদেশে জায়ানের লাশ আসবে বলে জানালেন শেখ ওয়াসিফ।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাংসদ শেখ সেলিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই। সেলিমের মেয়ে শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়া তার স্বামী প্রিন্স ও দুই ছেলেকে নিয়ে শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলেন বেড়াতে। ইস্টার সানডের প্রার্থনার মধ্যে রোববার গির্জা ও হোটেল মিলিয়ে আটটি স্থানে বোমা হামলায় রক্তাক্ত হয় শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো। এর মধ্যে একটি হোটেলে উঠেছিল ওই পরিবার।

হামলার সময় হোটেলের নিচতলার রেস্তোরাঁয় সকালের নাস্তা করতে গিয়েছিলেন প্রিন্স ও তার বড় ছেলে জায়ান। ছোট ছেলে জোহানকে নিয়ে শেখ সোনিয়া ওই সময় হোটেলের কক্ষে ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন