শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

দখল-দূষণরোধ ও নাব্যতা ফিরিয়ে আনার গতি ত্বরান্বিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

নৌপরিবহন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মন্ত্রণালয় হিসেবে গণ্য। এবারের মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ক্লিন ইমেজের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেয়ার পর এ মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ডে নতুন গতি সঞ্চারের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যাসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলোতে দীর্ঘদিনে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামের প্রাণ প্রবাহ কর্ণফুলী নদীর দখল উচ্ছেদে এই সাফল্যের চিত্র ধরা পড়ে। প্রভাবশালী মহলের দখল থেকে নদী উদ্ধারের অভিযানে বেশ আশাব্যঞ্জক সাফল্য এসেছে সরকারের প্রথম ১০০ দিনেই। নদীর দখল উচ্ছেদ, দূষণরোধ এবং নদীর পানিব্যবস্থাপনা একটি সার্বক্ষণিক ইস্যু। সাময়িক বা খন্ডিত সাফল্যে এখানে তৃপ্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দশকের পর দশক ধরে অব্যাহত নদী দখল, দূষণ এবং নাব্য হারানোর মধ্য দিয়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌপথ সঙ্কুচিত হয়েছে অস্বাভাবিক হারে। বিলুপ্তপ্রায় এসব নৌপথ প্রতি বর্ষায় উজানের ঢলের পানি ধারণ করতে পারে না বলেই বিস্তীর্ণ জনপদ ও ফসলি জমি প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয় দেশ। এই সাংবাৎসরিক বিড়ম্বনা ও ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে হলে বিলুপ্তপ্রায় হাজার হাজার কিলোমিটার নৌপথে নাব্যতা পুনরুদ্ধারে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের নদনদী, নৌপথ ও পানি সম্পদের গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে। যৌথনদীর উপর উজানে ভারতের একের পর এক বাঁধ নির্মাণ, পানি প্রত্যাহার ও পানি আগ্রাসনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে আমাদের। সেই সাথে আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের নদী দখল ও শিল্প দূষণের কারণে অবশিষ্ট নৌপথ ও পানি সম্পদের বারোটা বাজিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকারের উন্নয়ন রোডেম্যাপে অনেক আশাব্যঞ্জক প্রকল্প ও উদ্যোগ রয়েছে। তবে অবকাঠামো উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পগুলোর চেয়ে নৌপরিবহন ও পানি সম্পদ উন্নয়নের জন্য গৃহীত পদক্ষেপগুলো টেকসই উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নদীভাঙ্গনে জনপদ বিলীন হওয়ার পর পানির অভাবে দেশ মরুময় হয়ে গেলে অবকাঠামো উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা তেমন কোনো কাজে আসবে না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি ও নৌপথের সামাজিক-অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় এ খাতের কর্মকান্ডে গতি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে সড়ক ও রেলপথের চেয়ে নৌপথ অনেক বেশি ব্যয় সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উন্নয়নের পরিপূরক। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রকার আপস বা সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই।
শত বছরের ব-দ্বীপ প্রকল্প ও গঙ্গাব্যারাজ প্রকল্প বর্তমান সরকারের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে গণ্য হতে পারে। নদীর দখল উচ্ছেদ, নৌপথ পুনরুদ্ধার এবং নদীতীরের ভূমি উন্নয়নের সামগ্রিক কার্যক্রম পরিকল্পিত ব-দ্বীপ প্রকল্পের সাথে সমন্বয় করেই বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে নদীর দখল উচ্ছেদ, উদ্ধারকৃত জমির উপর ওয়াকওয়ে, সার্কুলার পথ ও ইকোপার্ক নির্মাণের মতো পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ন থেমে থাকলে চলবে না। নদীর দখল উচ্ছেদ ও পুর্নদখলের যে চিত্র ইতিমধ্যে দেখা গেছে তার পুনরাবৃত্তি কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। উচ্ছেদ অভিযানের নামে ইঁদুর বিড়াল খেলায় সরকারের কোটি কোটি টাকার অপচয় দেশের মানুষ আর দেখতে চায় না। সরকারের প্রথম ১০০ দিনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উচ্ছেদ অভিযানে প্রশংসনীয় সাফল্য দেখা গেলেও এ নিয়ে উল্লসিত হওয়ার মতো কিছু নেই। নদী ও পানি ব্যবস্থাপনায় বিশাল কর্মপরিকল্পনা এখনো শুরুই হয়নি। এমনকি বিভিন্ন স্থানে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এগিয়ে চললেও উদ্ধারকৃত এসব জমির স্থায়ী নিরাপত্তা ও পরিকল্পিত উন্নয়নের কিছুই এখনো দেখা যাচ্ছে না। ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও নদীভাঙ্গন রোধে কার্যকর উদ্যোগ, হাজার হাজার কিলোমিটার নৌপথ পুনরুদ্ধার, হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ থেকে শুরু করে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও ঢাকার চারপাশের নদনদীর দখল-দূষণ রোধে স্থায়ী কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপর আগামী দিনের অনেক কিছুই নির্ভর করছে। অবকাঠামো খাতের অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের চেয়েও এসব প্রকল্প অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষের সুসমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন