মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ওয়াসিফের বলে আর ছক্কা হাঁকাবে না জায়ান

ফয়সাল আমীন, সিলেট থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

মন ভালো নেই শেখ ওয়াসিফের। কিছুতে মনকে বুঝাতে পারছে না সে। স্মৃতির পাহাড় ধাক্কা মারছে বারবার ওয়াসিফকে। অল্প আয়ুতে অন্যদের মতো ওয়াসিফের মনেও সুখ স্মৃতি গেঁথে রেখেছে জায়ান। সে কারণে জায়ানের অকাল মৃত্যুতে ঝড় উঠেছে সর্বত্র। সেই ঝড়ে ব্যথিত ওয়াসিফও। তাই বুকের ভেতর জমে গেছে কান্নার পাহাড় ওয়াসিফের। মনের অজান্তেই চোখ বেয়ে পড়ছে পানি। হিসেব বিহীন স্মৃতি জায়ানের সাথে ওয়াসিফের।
ওয়াসিফ মতিঝিল আইডিয়ার স্কুল এন্ড কলেজের ক্লাস নাইনের ছাত্র। কিন্তু ভাগ্নে জায়ান চৌধুরী (৮) গুলশান সানবীন স্কুলে ক্লাস ওয়ানে পড়তো। কিন্তু শিশু সুলভ মন-মানসিকতায় তারা জড়িয়েছিলেন নিবিড় সর্ম্পকে। দেখা হলেই হই হুল্লোড়। মামু-ভাগ্নে ছিলেন খেলার সাথিও। শিশু জায়ান ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে অপেক্ষায় থাকতেন মামার বলে ছক্কা মারতে। ব্যাটে বলে মিলে গেলে খুশিতে যেন আকাশ ছুঁয়ে যেত তার। মামা আরও বল চাই বলে আবদার করতো জায়ান। একই সাথে মামার কোলে উঠে ঘুরে বেড়ানোর বায়না মেটাতে মামা ওয়াসিফ ছিলেন অন্তু:প্রাণ।
জায়ানের মধ্যে শিশুসুলভ চঞ্চলতার চেয়ে শান্ত ও ঠান্ডা মেজাজের স্বভাব ছিল লক্ষনীয়। আভিজাত্যের ছাপ ছিল স্বভাব ভঙ্গিতে। ওয়াসিফের সাথে শেষ দেখা হয় জায়ানের গত ২৬ মার্চ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সাংসদ শেখ সেলিমের বনানীর বাসায়। ওই দিন জায়ান মা-বাবার সাথে এসেছিলেন নানা শেখ সেলিমের বাসায়। নিহত জায়ান শেখ সেলিমের কন্যা শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়ার প্রথম পুত্র। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামাতো বোন শেখ মলির পুত্র শেখ ওয়াসিফ।
জায়ানের পিতা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স। প্রিন্সের গ্রামের বাড়ি সিলেট সুনামগঞ্জের ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামে। ওয়াসিফ মুঠোফোনে বলেন, গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জে সম্ভবত একবারই গিয়েছিল জায়ান এ পর্যন্ত। তবে মা-বাবার সাথে প্রায় দেশ বিদেশ ঘুরতো জায়ান। সম্প্রতি শ্রীলংকায় বেড়াতে যায় জায়ান। জায়ানের ছোট ভাই জোয়ান চৌধুরী ও মা শেখ সোনিয়া হোটেলের রুমে থাকায় বোমা হামলা থেকে রক্ষা পেয়ে যান তারা। কিন্তু নাস্তা করতে সকালে বাবার সাথে জায়ান হোটেলের নিচে নামতেই বোমার আঘাত এসে পড়ে তাদের উপর। অগুনতি স্মৃতি, আগামীর ভবিষ্যত সব কিছুই থমকে যায় বোমার আঘাতে। জীবন স্বপ্ন অবিশ্বাস্যভাবে হারিয়ে শোকের ছায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর গোটা পরিবার।
ওয়াসিফ বলেন, জায়ান প্রায়ই মোবাইলে কথা বলতো তার সাথে। কাকু বলে সম্ভোধন করতো ওয়াসিফকে। ওয়াসিফ বলতো কাকু না মামা বলো। তখন হি হি করে হেসে ফেটে উঠতো। টুঙ্গীপাড়ায় তারা একত্র হতেন প্রায়ই। সর্বক্ষণ ওয়াসিফের সঙ্গী থাকতো জায়ান। মামার হাত ধরে ঘুর ঘুর করতে খুবই পছন্দ করতো জায়ান। আশপাশ দেখে শুধু প্রশ্নের ফুলঝুরি ফুটাতো ওয়াসিফকে উদ্দেশ্যে করে। মামা ওয়াসিফও সাধ্য মতো উত্তর দিয়ে কৌতুহল নিবারনে চেষ্টা করতেন ভাগ্নে জায়ানের। আজ জায়ান নেই কিন্তু ভাগ্নের স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে মামা শেখ ওয়াসিফকে। এখন জায়ানের মুখ শেষ বারের মতো দেখার ক্ষণ যেন সইতে পারছেন না ওয়াসিফ। আগামীকাল বুধবার দুপুরে বাংলাদেশে জায়ানের লাশ আসবে বলে জানালেন শেখ ওয়াসিফ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন