শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পোশাক খাতে শ্রমিক অধিকারকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না : টিআইবি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

পোশাক খাতে মালিকপক্ষ রফতানি বাড়াতে ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখার বিষয়ে প্রাধান্য দিলেও শ্রমিক অধিকার এবং সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিচ্ছে না। ‘তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন: অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ পর্যালোচনা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল মঙ্গলবার টিআইবি’র মেঘমালা সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
টিআইবি’র গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর পোশাক খাতে থাকা সুশাসনের ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের ৩৯ ভাগ অগ্রগতি সম্পন্ন হয়েছে। অগ্রগতি চলমান রয়েছে ৪৯ ভাগ এবং ধীরগতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে বা স্থবির রয়েছে এমন উদ্যোগের পরিমাণ ১২ ভাগ।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর পোশাক খাতে থাকা সুশাসনের ঘাটতি ও তা থেকে উত্তরণের জন্য টিআইবি কিছু সুপারিশ করেছিল। এসব সুপারিশের পাশাপাশি সরকার এবং অন্যান্য অংশীজন এই ঘাটতি থেকে উত্তরণ পেতে যেসব উদ্যোগ নেয়, সেগুলো পর্যবেক্ষণ করে ২০১৩ সাল থেকে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে টিআইবি। এরই ধারাবাহিকতায় ফলোআপ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, পোশাক খাতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও শ্রমিকদের অধিকারের বেলায় কারও সুনজর পড়ছে না। যে কারণে শ্রমিক তার প্রাপ্য বুঝে পাচ্ছেন না।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, অবস্থার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। প্রত্যাশিত পর্যায়ে যেতে আরও বহুদূর যেতে হবে। ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য মালিকদের অনেক ধরনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, সেটা তাদের প্রয়োজন। কিন্তু সে তুলনায় শ্রমিক অধিকারের বিষয়টি পর্যাপ্ত গুরুত্ব পাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু সংশোধনীতে বিতর্কিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মালিকের সংজ্ঞায়নে ‘তদারকি কর্মকর্তাদের’ অন্তর্ভুক্তি এবং শ্রমিকদের সংকুচিত সংজ্ঞায়নে ‘তদারকি কর্মকর্তাদের’ বাদ দেওয়ায় তাদেরকে শ্রমিক হিসেবে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অন্যদিকে মালিক হিসেবে তদারকি কর্মকর্তাদের কোনও সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।
টিআইবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সংশোধিত আইনের ১১৮ ধারায়, উৎসবের দিনে কাজ করার ক্ষেত্রে ‘ক্ষতিপূরণমূলক মজুরিসহ ছুটির’ পরিবর্তে শুধু ‘ক্ষতিপূরণমূলক মজুরির’ বিধান রাখা হয়েছে, যাতে শ্রমিকের প্রাপ্য ছুটির অধিকার হরণ করা হয়েছে। এছাড়া, ২০১১ সালে প্রসূতিকালীন ছুটি ২৪ সপ্তাহ করা হলেও প্রমিকদের জন্য তা ১৬ সপ্তাহ করা হয়েছে, যাকে রাষ্ট্রের অসম আচরণ বলে উল্লেখ করেছে টিআইবি।
পোশাক খাতের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য করপোরেট ট্যাক্স ১৫ থেকে ১২ ভাগ এবং গ্রিন ফ্যাক্টরির ক্ষেত্রে ১৪ থেকে ১০ ভাগ করা হয়েছে। অন্যান্য খাতে করপোরেট ট্যাক্স ১৫-৪৫ ভাগ। এর পাশাপাশি প্রস্তাবিত উৎস কর ০ দশমিক ৬ থেকে ০ দশমিক ২৫ ভাগে নির্ধারণ, অগ্নিনিরাপত্তার সরঞ্জাম আমদানিতে পাঁচ ভাগ ডিউটি নির্ধারণ, বন্দরসেবা গ্রহণে নির্ধারিত ১৫ ভাগ ভ্যাট মওকুফ ও নতুন বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে ৪ ভাগ নগদ সহায়তাসহ তিন ক্ষেত্রে মোট নগদ সহায়তা ১০ থেকে ১২ ভাগ উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া, বন্ডেড ওয়্যার হাউসের মাধ্যমে প্রাপ্ত মোট সুবিধার ৪৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকার ৯৬ ভাগ তৈরি পোশাক খাতকে প্রদান এবং অতিরিক্ত আমদানির ক্ষেত্রে নিয়মে শিথিলতা করা হয়েছে। এছাড়া, তৈরি পোশাক খাতের পরিবহন ব্যয়, ল্যাবরেটরি টেস্ট, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যয় ও শ্রমিক কল্যাণ ব্যয় সম্পূর্ণ ভ্যাটমুক্ত করা হয়েছে।
শ্রমিকের অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের কথা টিআইবির প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হলেও অধিকাংশ সাব কন্ট্রাক্ট নির্ভর কারখানায় ন্যূনতম মজুরি দেওয়া হয় না। ২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে যে মূল মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বর্তমান বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এতে আরও বলা হয়েছে, সম্প্রতি অসঙ্গত মজুরি বৃদ্ধির কারণে গড়ে ওঠা শ্রমিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ৩৫ মামলা হয়েছে, যার আসামি সংখ্যা পাঁচ হাজার।
কারখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশনের উদ্যোগ গ্রহণ হলেও কারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের জরিপ অনুযায়ী মাত্র ৩ ভাগ কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের উপস্থিতি পেয়েছে টিআইবি। সেখানেও মালিকপক্ষ নিয়ন্ত্রিত অধিকাংশ ইউনিয়ন (পকেট ইউনিয়ন) এবং নেতৃত্বের কোন্দল ও রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির চর্চা রয়েছে। ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের চাকরিচ্যুতি, স্থানীয় মাস্তান ও ঝুট ব্যবসায়ীদের হুমকি, মারধর ও শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগও রয়েছে।
তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে ১২টি সুপারিশ দিয়েছে টিআইবি। এর মধ্যে রয়েছে, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য একক কর্তৃপক্ষ গঠন, শ্রম আইন ও ইপিজেড শ্রম অধ্যাদেশে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা দূর করা, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় দায়ের করা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা, শ্রম অধিদফতরের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সেবা নিশ্চিত, কারখানায় ভয়ভীতিহীন শান্তিপূর্ণ শ্রম পরিবেশ সৃষ্টি, শ্রমিকের আইনগত অধিকার সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে নিশ্চিত করা, কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে বিভিন্ন অংশীজনের অংশগ্রহণে তহবিল গঠন, কারখানা বন্ধ, শ্রমিক চাকরিচ্যুতিতে ক্ষতিপূরণ না দেওয়া, পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ না করাসহ নানা অনৈতিক আচরণ বন্ধের উদ্যোগ, কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে গ্রুপ বীমার প্রিমিয়াম দেওয়ার বিধান রহিত করা, ত্রিপক্ষীয় কাউন্সিল কার্যকর, তেরি পোশাক খাতের সম্পূরক শিল্পে প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা বৃদ্ধি এবং রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেল কার্যকর করা। #

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন