শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

প্রশ্ন: তাবলীগের বিশেষ সম্বোধন কী?

উত্তর দিচ্ছেন: মুফতি মোঃ আবদুল্লাহ্ | প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

উত্তর: কোন লোক যদি এমন হয় যে, তার সঙ্গে আপনার এমন খোলামেলা সম্পর্ক যে,আপনি যদি তাকে কোন গুনাহ-পাপকার্যে লিপ্ত দেখে সতর্ক করেন, তা হলে সে অসন্তুষ্ট না হয়ে বরং খুশি হবে এবং আপনার সতর্ক করার দরুন,আপনি তার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন বলে, মনে করবে। তা হলে তেমন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পাপকর্মে জড়িত দেখলে, তাকে সরাসরি বিশেষ সম্বোধনের মাধ্যমে অপরাধ থেকে বাধাদান আপনার জন্য ফরয হিসাবে গন্য হবে। কিন্তু কারও সঙ্গে যদি তেমন খোলামেলা সম্পর্ক না থাকে কিংবা অজানা-অচেনা হয়; তা হলে তেমন লোককে বিশেষ সম্বোধনের দ্বারা পাপ থেকে বাধাদান ফরযও নয়, উচিতও নয়। এমন লোক বাহ্যিকভাবে যদি ধার্মিক হয়, তা হলে আপনার তাবলীগে তার অসন্তোষ জন্ম নেবে এবং আপনার প্রতি তার অন্তরে ক্রোধ ও শত্রæতা জন্ম নেবে; এবং সে তার পাপকর্মের ভুল ব্যাখ্যাও দিতে শুরু করবে।
যদি লোকটি বাহ্যিকভাবে ধার্মিক না হয় এবং ধার্মিকদের প্রতি তার অন্তরে কিছুটা সম্মানবোধ থাকে তা হলে আপনার তাবলীগে তারও কিছুটা অসন্তোষ জন্ম নেবে; কিন্তু অন্তরে কিছুটা সম্মানবোধ থাকায় মুখে সে কিছু বলবে না; কিন্তু তার অন্তর থেকে ধার্মিকদের প্রভাব চলে যাবে এবং সে আগামীতে ধার্মিকদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে। কেননা,তার অন্তরের বক্তব্য হবে, ‘এরা কেবল কথায়-কথায়,পদে-পদে ভুল ধরে, বারণ করে’! আর যদি লোকটি ধর্ম-কর্ম থেকে এমন দূরে হয় যে, তার অন্তরে ধর্ম ও ধার্মিক লোকদের ব্যাপারে কোন সম্মানবোধ ও প্রভাব না থাকে; তা হলে সে আপনার তাবলীগ শুনে তাৎক্ষণিক এমন কুফরী কথা বলে উঠবে যে, তার ঈমানটুকুই চলে যাবে। যেমন কাউকে আপনি দাড়ি রাখার তাবলীগ করলেন, এতে সে বলে উঠলো, “যাও এটা তো মৌলবীদের কাজ!” কিংবা বলে উঠলো, “আরে দাড়ি রাখলে তো চেহারাটা ছাগলের ন্যায় হয়ে যায়!”Ñতা হলে সে তাৎক্ষণিক কাফির হয়ে গেল এবং আপনি তার কুফরির কারণ হয়ে যাবেন!
ব্যাপক সম্বোধন: অসৎকাজে নিষেধের তাবলীগ-এর দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে, লোকজনের একত্র অনুষ্ঠানে সমাজে ছড়িয়ে পড়া পাপ-অন্যায় কর্মের ক্ষতি, অপকারিতা, পরিণাম ভালো করে বয়ান করে দেবে। তবে ওই ব্যাপক সম্বোধনেও এ বিষয়টির প্রতি যতœবান থাকা অত্যন্ত জরুরী, যেন বক্তব্য উপস্থাপন এমন কঠোর ও সমালোচনাকেন্দ্রিক না হয় যে, শ্রোতাদের মনে ঘৃণার জন্ম হয় এবং তারা অপমান বোধ করে। বরং উপস্থাপন ও সম্বোধন মহব্বত, ¯েœহ ও আবেগঘন অন্তরে হওয়া চাই। তার কারণ, অন্তরের দরদমাখা কথায় প্রভাব অধিক হয়ে থাকে।(প্রাগুক্ত: খ-৯,পৃ-১১১-১১২)
‘তাবলীগ ও শাস্তি’: অসৎকাজে নিষেধের তাবলীগ করতে গিয়ে কখনও সাজা-শাস্তি,শাসনের প্রয়োজন দেখা দেয়, তা হলে কি তেমন প্রয়োজনে কাউকে শাস্তি দেওয়া জায়েয হবে? তার জবাব হচ্ছে, পাপকাজ থেকে বিরত রাখার জন্য যে-কেউ যাকে ইচ্ছা, তেমন শাস্তি প্রদান জায়েয হবে না। যে-কারণে প্রচলিত তাবলীগ জামাতেও তেমন শাস্তির কোন ব্যবস্থা নেই। তবে ‘ফরযে আইন’ তাবলীগের ক্ষেত্রে যাদের দায়-দায়িত্ব নিজের ওপর বর্তায় তাদেরকে ‘তা‘যীর’ প্রকৃতির সাধারণ কিছু সমীচীন শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। উদাহরণত,পিতা-মাতার পক্ষে নিজ নাবালক সন্তানকে, স্বামীর পক্ষে স্ত্রীকে,শিক্ষকের পক্ষে ছাত্রকে এবং শায়খ বা পীরের পক্ষে মুরীদকে। যেমন অবস্থা বুঝে কিছু বকাঝকা, শরীয়তের সীমার ভেতরে থেকে হাল্কা প্রহার ইত্যাদি। এতেও আবার শর্ত হচ্ছে, নিয়ত একান্ত বিশুদ্ধ হতে হবে। একমাত্র মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা উদ্দেশ্য হতে হবে। এমনটি হতে পারবে না যে, তার প্রতি ক্রোধান্বিত অন্য কোন কারণে; অথচ শরীয়তের তেমন বৈধতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করা হচ্ছে!Ñএমনটি যেন না হয়।
উক্তসব সম্পর্ক ও স¦জন ব্যতীত অন্য কারও পক্ষে তাবলীগ করতে গিয়ে অপরাধী বা অভিযুক্তকে, কোন প্রকার শাস্তিদান জায়েয নেই। আর শাস্তি যদি ইসলামী শরীয়তের ‘হুদূদ’ তথা দন্ডবিধি প্রকৃতির হয়, তা হলে তেমন শাস্তিদান রাষ্ট্র ও প্রশাসন ব্যতীত কারও পক্ষেই জায়েয নেই।
মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে শরীয়তের মাপকাঠি অনুযায়ী ‘দা’ওয়াত ও তাবলীগ’-এর কাজের গুরুত্ব বোঝার এবং সেই অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন