শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বেড়িবাঁধ সুরক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বর্ষার আগমনের আগেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ ও জনপদ প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। অনেক স্থানে এখনো বোরো ধান কাটা হয়নি। বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এবং ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ এলাকার লাখ লাখ মানুষ সমুহ বিপদের আশঙ্কায় প্রহর গুনছে। গত কয়েক বছরে বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে হাওরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের উপকুলীয় বেড়িবাঁধ ও ফসলরক্ষা বাঁধগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুকিপূর্ণ অংশগুলো এখনো মেরামত করা হয়নি। সে সব ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে এখন অনায়াসে পানি ঢুকছে। সেই সাথে বেড়িবাঁধগুলোর দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ অংশ ধসে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গতকাল ইনকিলাবসহ বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে খুলনা, সাতক্ষিরা, কয়রা ও নেত্রকোনায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বর্ষার আগেই এসব বেড়িবাঁধ মেরামত, রক্ষানাবেক্ষণ ও উন্নয়নে প্রয়োজনীয় জরুরী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আমরা সাম্প্রতিক সময়ে বার বার তাগিদ দিয়েছি। আমরা যে সব আশঙ্কার কথা বলেছিলাম, তারই বাস্তব প্রতিফলন এখন দেখা যাচ্ছে।
খুলনার কয়রায় কপোতাক্ষ নদে এবং সাতক্ষিরা ও আশাশুনিতে খোলপেটুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপকুলীয় অঞ্চলের হাজার হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই নাজুক। প্রতি বর্ষায় এসব এলাকার লাখ লাখ মানুষকে প্রবল ঝুঁকি ও আশঙ্কা মাথায় নিয়ে পার করতে হয়। বর্ষার আগে আকষ্মিক বন্যায় ফসলহানি, বর্ষায় নদী ভাঙ্গণ ও বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে অথবা তলিয়ে জনপদ ও ফসলের মাঠ প্লাবিত হওয়ার বিরূপ বাস্তবতা থেকে বের হতে পারছে না উপকুলীয় ও হাওরাঞ্চলের মানুষ। সময় বদলায়, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতা বদলায়, আমাদের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, মন্ত্রনালয় ও অধিদফতরের দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা ও দীর্ঘসুত্রিতার কারণে কোটি কোটি মানুষের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার বাস্তবতা বদলায় না। আকষ্মিক বন্যায় ২০১৭ সালে হাওরাঞ্চলের মানুষ শতাব্দীর নজির বিহীন ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের গৃহীত প্রকল্প সময়মত বাস্তবায়ন না করা এবং কথিত দুর্নীতির কারণে হাওরের মানুষকে এই ক্ষতির শিকার হতে হয়েছিল, এমন অভিযোগ তুলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবীতে সোচ্চার হয়েছিল হাওরের মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে সে সময় এ সংক্রান্ত দু’টি তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছিল। তবে তদন্তের রিপোর্টে কি ছিল, অভিযোগ প্রমানিত হয়েছিল কিনা, দায়ী ব্যক্তিরা শাস্তি পেয়েছিল কিনা সে বিষয়ে পরবর্তীতে তেমন কিছু শোনা যায়নি। ইতিপূর্বেও বিভিন্ন সময়ে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ণসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিসহ সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলেও তার কোনো বাস্তব ফলাফল দেখা যায়নি। এভাবেই চলছে দশকের পর দশক ধরে। পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা ও ব্যর্থতার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পুনরাবৃত্তি জাতির সম্ভাবনা ও অগ্রযাত্রাকেই ব্যাহত করছে।
অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারো পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক সকল শহর রক্ষা বাঁধ ও বেড়িবাঁধ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। খুলনার কয়রা, আশাশুনি ও সাতক্ষিরায় বাঁধগুলো যখন পানির তোড়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে, তখন স্থানীয় জনসাধারণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ রক্ষায় আপ্রাণ শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধের নির্মান কাজ পরিদর্শন করতে গিয়ে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ কথা সত্য যে, রাতারাতি বা দু চার মাসেই হাজার হাজার কিলোমিটার নদী শাসন বা উপকুলীয় বেড়িবাঁধ নির্মান করা হয়তো সম্ভব নয়। তবে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অধীনে পুরনো বেড়িবাঁধ, শহররক্ষা বাঁধ ও হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধগুলো মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব পালন করা অসম্ভব নয়। এখানেই তাদের সবচেয়ে বড় ব্যথর্তা। সারা বছর প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ফেলে রেখে বর্ষার আগে, দুর্যোগ মুহূর্তে তড়িগড়ি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে লেজেগুবুরে হয়ে যায় সবকিছু। কাজের মান, স্থায়ীত্ব এবং প্রকল্পের লক্ষ্য অর্জন, কোনোটাই সম্ভব হয়না। পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রকল্প বরাদ্দ জলে যাওয়ার বাস্তবতা থেকে বের হতে পারে না। নদীমাতৃক বাংলাদেশে পানি ব্যবস্থাপনা, নদী শাসন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উপর খাদ্য নিরাপত্তা এবং মানুষের সামাজিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভরশীল। সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের অবশ্যই প্রয়োজন আছে। তবে একই সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি,বেড়িবাঁধসহ অতি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন স্থাপনা দু:খজনকভাবে উপেক্ষিত ও অরক্ষিত থেকে যাচ্ছে। এর ফলে জনদুর্ভোগ মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।আমাদের কথা হলো যা’ আছে তা রক্ষা করতে হবে সবার আগে। পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রশাসনিক দুর্নীতি,অস্বচ্ছতা ও গতানুগতিক গদাই-লস্করি ব্যবস্থা ভেঙ্গে স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ ছাড়া এ থেকে পরিত্রাণের কোনো পথ খোলা নেই। এ ব্যাপারে সরকারের সচেতনতা ও সদিচ্ছা আমরা একান্তভাবেই প্রত্যাশা করি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ash ২৫ এপ্রিল, ২০১৯, ১০:০০ এএম says : 0
JE VABE DESH E BAD DICHE BALU MATI R NODIR MATI - CEMENT MISHI E TATE KONO LAV HOBE NA , AGE OI SHOB BAD TIKE NAI, TAR PORE O PROTI BOSOR HAJAR KUTHI TAKA KHOROCH KORE OI AKE VABE BALU MATIR WPORE BLOCK BISIE BAD DAY, AK MATRO CHURI KORAR JONNY !! OTHOCHO ONNANO DESHE CHIKON AK SHUTAR BORO FAK ER NET BSIE DHALAI KORE DAY, SHETA 20-30 BOSOR LAST KORE !! MAJE MAEJ KOYEKTA PIPE BER KORE DAY JETA DIE VITORER BRISTIR PANI BER HOBAR JONNY !! MANGROVE GAS, JETA AMADER SHUNDOR BON KE BOSORER POR BOSOR HAJAR SHOMUDER TUFAN , JOR JANTA THEKE ROKHA KORCHE, SHEI MANGROVE GAS AMADER NODIR TIRE GHONO KORE LAGALE NODIR TIR ROKHA KORA JETO !! KINTU PANI WNNOON BOARD ODIKE NOJOR DAY NA , OR NOJOR DITE CHAY NA, KARON TAHOLE TADER CHURI BONDO HOE JABE
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন