শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশে ৪৭ ভাগ স্নাতক বেকার

প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে বর্তমানে ৪৭ ভাগ স্নাতকের কোনো চাকরি নেই। প্রতিবছর ২২ লাখ কর্মক্ষম লোক চাকরি বা কাজের বাজারে প্রবেশ করেন। কিন্তু কাজ পান মাত্র সাত লাখ মানুষ। অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ কোনো উল্লেখযোগ্য কাজ পান না। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাই বেশি। ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট-এর ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ)-এর প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এই সময়ে বাংলাদেশের শতকরা ৪৭ ভাগ স্নাতকই বেকার। যেখানে ভারতে ৩৩ শতাংশ, পাকিস্তানে ২৮ শতাংশ, নেপালে ২০ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ বেকার রয়েছেন।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তরসহ উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেছেন কম-বেশি সাড়ে তিন লাখ। তাদের মধ্যে ৯২ হাজার ৭৪৭ জন স্নাতক পাস, এক লাখ ২৮ হাজার ৪৮১ জন স্নাতক সম্মান এবং ২১ হাজার ৩৮০ জন কারিগরি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া এক লাখ ১৯ হাজার ৮৯৪ জন স্নাতোকত্তর ডিগ্রি, দুই হাজার ৩৮৫ জন স্নাতোকত্তর কারিগরি এবং এক হাজার ৭৬৩ জন এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। অন্যদিকে ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট অর্জন করেন দুই হাজার ৩৩৫ জন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে শ্রমশক্তির পরিমাণ পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ। আর আইএলও’র তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। বেকারত্বের এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে দু-এক বছরের মধ্যে সালে মোট বেকারের সংখ্যা ছয় কোটিতে দাঁড়াবে। বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ১২তম।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বেকারত্বের হার প্রায় পাঁচ ভাগ। তবে এই হার নারী ও তরুণদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি। তরুণীদের বেকারত্বের হার ৯ দশমিক ৫ ভাগ। বিশ্বব্যাংকের এই হিসাব বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে নেয়া। তাই বিশ্বব্যাংক মনে করে বেকারত্বের প্রকৃত হার ১৪ দশমকি ২ শতাংশ হবে।
বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষিতদের চাকরির বাজারের অবস্থাটা ব্যাখ্যা করেন চাকরিভিত্তিক ওয়েবসাইট বিডিজবসডটকম-এর প্রধান নিবাহী ফাহিম মাশরুর। তিনি বলেন, “আমরা এক্সিকিউটিভ লেভেলের চাকরির খবর প্রকাশ করি, যা স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পাশ যারা করেন তাদের জন্য। বাংলাদেশের প্রায় ১৫ হাজার প্রতিষ্ঠান আমাদের সাইটে ‘জব অফার’ করে থাকে। বছরে গড়ে ৪০ হাজার চাকরির ‘অফার’ দেয়া হয়। কিন্তু চাকরি প্রার্থী বছরে প্রায় ২০ লাখ।”
ফাহিম জানান, “এখানে যারা চাকরি খোঁজেন তারা যে সবাই বেকার, তা নন। কেউ কেউ পুরনো চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরিতেও যেতে চান। তবে বড় অংশই হলো বেকার বা নতুন চাকরিতে ঢুকতে চান এমন মানুষ।”
তার কথায়, “শিক্ষিতদের অনেকেই তাদের চাহিদামত চাকরি পাচ্ছেন না। আবার নিয়োগকারীও সব সময় তাদের চাহিদামত দক্ষ শ্রমশক্তি পান না। এটা একটা সমস্যা।”
ওদিকে বাংলাদেশে এখনো কৃষিখাতেই সবচেয়ে বেশি লোক কাজ করেন। এখনো বাংলাদেশের মোট কর্মসংস্থানের ৪৮ ভাগ কৃষি খাতে, ৩৭ ভাগ সেবা খাতে এবং শিল্পখাতে ১৫ ভাগ।
বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশে ভোগ্যপণ্য উৎপাদন, বিপণন, আর্থিক সেবা খাত, শিক্ষা প্রশাসন কৃষি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পর্যটনশিল্প, আবাসন, স্বাস্থ্য, তথ্য-প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। কাজের সুযোগ বেড়েছে টেলিযোগাযোগ, পোশাকশিল্প, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানেও।
এছাড়া বাংলাদেশের ওষুধশিল্প কর্মসংস্থানের বড় একটি খাত হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। সরকারি চাকরির বাইরে প্রতিবছর এখন প্রায় ৭০ হাজার চাকরির বিজ্ঞাপন প্রকাশ হয়। বাংলাদেশে আরো কয়েকটি খাত কর্মসংস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, তারা চাহিদামত দক্ষ জনশক্তি পাচ্ছে না। এর মধ্যে রয়েছে কৃষিজাত খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, জাহাজ নির্মাণ, পর্যটন ও হালকা কারিগরি নির্মাণ শিল্প।
বাংলাদেশের পোশাক কারখানা ও বায়িং হাউসে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা কয়েক হাজার, যারা মোটা অঙ্কের বেতন পান। মার্চেন্ডাইজার, প্যাটার্ন মাস্টার ও ডায়িংয়ে অনেক বিদেশি কাজ করেন।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশে একটি অদ্ভুত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আমরা কৃষ্টি থেকে শিল্পের দিকে যাচ্ছি। আর আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বাংলাদেশে প্রকিবছর যেসব উচ্চশিক্ষিত শ্রমশক্তি বের হচ্ছে, তাদের শিক্ষার সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। ফলে তারা বেকার থাকছেন।”
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে এখন দরকার ডিজাইনার, বিশেষ করে ফ্যাশান ডিজাইনার। কিন্তু আমরা ভূরি ভূরি এমবিএ ডিগ্রিধারী তৈরি করছি, যাদের কাজ নেই। অন্যদিকে ফ্যাশান ডিজাইনার আনছি বিদেশ থেকে। পোশাক খাতেই আমরা বছরে বিদেশিদের বেতন দিয়ে থাকি অন্তত পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।”
ড. নাজনীন বলেন, “এই পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা আরো বাড়বে।”
তার মতে, “বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের বড় তিনটি খাত পোশাক, চামড়া এবং ওষুধশিল্প। কিন্তু এ খাতের মূল পদগুলো বিদেশিদের দখলে। আর তার কারণ, আমাদের দক্ষ জনশক্তি নেই।”

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন