শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভারতীয় গণতন্ত্রে নিজেদের প্রান্তিক ভাবছে মুসলিমরা

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৭ এএম

 বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক চর্চা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভারতে। কিন্তু সেখানকার মুসলিম সংখ্যালঘুদের আনন্দ করার কোন সুযোগ নেই, কারণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে ক্রমেই একঘরে হয়ে পড়ছে তারা। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে মুসলিম ছিল মাত্র ২২ জন।
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় এই দেশটির ১.৩ বিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে ১৪ শতাংশ হলো মুসলিম। কিন্তু পার্লামেন্টে তাদের প্রতিনিধিত্ব মাত্র চার শতাংশ। পাঁচ দশকের মধ্যে এই প্রতিনিধিত্বের হার সবচেয়ে কম। এক দশক আগে এই হার ছিল ছয় শতাংশের উপরে আর ১৯৮০ সালে ছিল সবচেয়ে বেশি ৯.৬ শতাংশ। আল জাজিরা যেসব তরুণ মুসলিমদের সাথে কথা বলেছে, তাদের অনেকেই দেশে মুসলিম রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছে। বর্তমানে দেশের ক্ষমতায় রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।
‘হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দল’
ভার্নিয়ার্স বলেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিজেপি মুসলিমদের একঘরে করে রাখার নীতি গ্রহণ করেছে। এর কারণ হলো তারা নিজেদেরকে ‘হিন্দু সংখ্যাগুরু দল’ হিসেবে পরিচিত করে তুলতে চাচ্ছে। ২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশে একজনও মুসলিম প্রার্থী দেয়নি বিজেপি। ভারতের সবচেয়ে জনবহুল এই রাজ্যে জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ হলো মুসলিম। মোদির নিজের রাজ্য গুজরাটেও ২০১৭ সালে নির্বাচন হয়েছে। সেখানেও একজন মুসলিমকেও প্রার্থী করেনি বিজেপি। দুই রাজ্যেই ডানপন্থী দল ক্ষমতায় এসেছে। তবে বিজেপি ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করছে, এ অভিযোগ অস্বীকার করেন বিজেপির একজন মুখপাত্র।
নালিন কোহলি আল-জাজিরাকে বলেন, “বিজেপি বর্ণ, ধর্ম, জাত বা অন্য কোন পরিচয়ের ভিত্তিতে ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে কোন পার্থক্য করে না। সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদকে বিজেপি সঠিকভাবে অনুসরণ করে, যেখানে সমতা ও সামগ্রিকতার কথা বলা হয়েছে”।
‘নির্বাচনে অপ্রাসঙ্গিক’
উত্তর প্রদেশের আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মোহাম্মদ সাজ্জাদ বলেন, হিন্দু সংখ্যাগুরুবাদের উদ্দেশ্য হলো ভারতে নির্বাচনের ক্ষেত্রে মুসলিম স¤প্রদায়কে গুরুত্বহীন করে তোলা। তিনি বলেন, “মুসলিমদের নির্যাতনের মাধ্যমে হিন্দুদের মধ্যে সংহতি আনা হচ্ছে। মুসলিমবিদ্বেষী ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে”।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দুর্নীতি নির্ম‚লের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিলেন মোদি। কিন্তু দ্বিতীয়বারের মতো যখন নির্বাচন করছেন তিনি, তখন দেশের চাকরির বাজারের অবস্থা ৪৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। গত পাঁচ বছরে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা, সন্ত্রাস অনেক বেড়ে গেছে এবং গো-রক্ষার নামে মূলত মুসলিমদের বিভিন্ন জায়গায় হত্যা করা হয়েছে।
‘মুসলিম নিধনের ব্যাপারে নিরব’
বিজেপির মুখপাত্র কোহলি অবশ্য দাবি করেন যে, “প্রধানমন্ত্রী নিজেই এই ধরনের অপরাধী কর্মকাণ্ডের নিন্দা করেছেন”। তিনি বলেন, “আইন অনুযায়ী এসব অপরাধীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং আমরা সেখানে কোন হস্তক্ষেপ করছি না”।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক শিব বিশ্বানাথান বলেন যে, বিজেপির প্রভাব বাড়ার সাথে সাথে এটা ক্রমেই নির্দিষ্ট গ্রুপের জন্য সুনির্দিষ্ট হয়ে উঠছে।
তিনি বলেন, “বিজেপি একটা সমন্বিত বিশ্ব চায়। তবে কীভাবে বহুত্ববাদ নিয়ে চলতে হয়, বিজেপি সেটা জানে না”।
বিশ্বনাথান বলেন, বিজেপি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় ‘সংখ্যালঘুদের রাজনীতির ব্যাপারে উদাসীনতা তৈরি হয়েছে। এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে মুসলিম ইস্যুতে কেউ কথা বলছে না”। তিনি বলেন, “এই নির্বাচন এইসব ইস্যুতে আলোচনার বদলে নিরব থাকার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে”।
অপর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্বের ইতিহাস
ভারতের মুসলিমরা যদিও বিভিন্ন গুরুত্বপ‚র্ণ সাংবিধানিক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, যার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বিচারপতির পদও রয়েছে, কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এই স¤প্রদায় ঐতিহাসিকভাবেই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে যথাযথ প্রতিনিধিত্ব পায়নি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত যখন হিন্দু সংখ্যাগুরু ভারত ও মুসলিম সংখ্যাগুরু পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়, তখন বহু মুসলিমই পাকিস্তানে যায়নি। ১৯৫২ সালে ভারতের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে, মাত্র ১১ জন মুসলিম পার্লামেন্টে জায়গা করে নিতে পেরেছিলেন।
ভার্নিয়ার্স আল-জাজিরাকে বলেন, “স্বাধীনতার পরে প্রথম নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো মুসলিমদের খুব বেশি আসন দেয়নি, কারণ সে সময় মুসলিম প্রার্থীদের বৈধতা খুব সামান্যই ছিল এবং মুসলিম রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে তখন একটা সন্দেহ সমাজে বজায় ছিল”।
“কংগ্রেস তাদের ভোটের অনুপাতে মনোনয়ন দিতে পারতো, কিন্তু তাতে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যেতো না। মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বের যে ঘাটতি, তার মূলে ওই চর্চাটাই এখনও রয়ে গেছে”। লেখক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার সিদ্দিক ওয়াহিদ বলেন, কংগ্রেস মুসলিমদের শুধুমাত্র ভোট ব্যাংক হিসেবে দেখে। এদের মাঝে নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য খুব সামান্যই তারা করেছে। তবে, কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা সাইফুদ্দিন সোজ অবশ্য তার পুরনো প্রবীণ দলটিকে সকলের সম্মিলনের জায়গা এবং “শুধু মুসলিম নয়, বরং ভারতের নিম্ন বর্ণের সকল জাতের জন্যও একটা আশার জায়গা” হিসেবে বর্ণনা করেন। সূত্র: এসএএম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন