শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সঙ্কটে বাংলাদেশ

ব্রহ্মপুত্র-গঙ্গা-মেঘনা অববাহিকা : ছোট অংশীদারিত্বে ভাটিতে অবস্থান

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

এশিয়ার পাঁচটি দেশের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র-গঙ্গা-মেঘনা। এই তিন নদীর মোট ১৭ লাখ বর্গকিলোমিটার অববাহিকার ৮২ শতাংশই চীন ও ভারতে। বাকি অংশ নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশে। অববাহিকার ছোট অংশীদার হলেও নদীগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা এই তিন দেশেরই বেশি। অববাহিকা সংলগ্ন এলাকায় নদীর পানিপ্রবাহের ওপর নির্ভরশীল মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ড। সংশ্লিষ্ট অববাহিকার পরিবেশ-প্রতিবেশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে নদীগুলোর। কিন্তু উজানে বাঁধ নির্মাণসহ নানাভাবে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের কারণে ভাটির দেশগুলোয় তৈরি হচ্ছে সঙ্কট। আর এ তিন নদীর পানিপ্রবাহের ওপর নির্ভরতা বেশি থাকায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে অপেক্ষাকৃত ছোট দেশগুলোতে।
পানিপ্রবাহের মাত্রা বিবেচনায় বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম নদী ব্রহ্মপুত্র। পানির হিস্যায় বরাবর উপেক্ষিত থাকছে নদীটির অববাহিকা সংলগ্ন ভাটি অঞ্চল। এখন পর্যন্ত পানি ব্যবস্থাপনায় কোনো চুক্তি হয়নি। আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীটির সবচেয়ে ভাটিতে থাকা বাংলাদেশ। ব্রহ্মপুত্র নদীর উজানে অববাহিকা সংলগ্ন অঞ্চল নিয়ে তুমুল দ্ব›দ্ব রয়েছে চীন ও ভারতের মধ্যে। তাদের এ দ্ব›েদ্ব সঙ্কটে পড়েছে বাংলাদেশ। এদিকে, ভারতের সাতটি বড় নদীর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র একটি। এরই মধ্যে ভারত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অরুণাচল প্রদেশে পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। তবে ভারতের এ পরিকল্পনায় উদ্বিগ্ন চীন। কারণ দু’দেশের মধ্যে অরুণাচলের সীমান্ত নিয়ে বিরোধ চলছে। অন্যদিকে, গঙ্গার উৎপত্তি হিমালয় পর্বতমালার চীন অংশে। ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এটি। এর উজান অংশে মিলিত হয়েছে বেশকিছু নদী। বাংলাদেশে পদ্মা নামে পরিচিত এ নদী প্রথমে যমুনা ও পরে মেঘনায় মিলেছে। মেঘনা নামেই তিনটি নদীর মিলিত অংশ গিয়ে পড়েছে বঙ্গোপসাগরে।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর নেভাল অ্যানালাইসিসের (সিএনএ) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় হুমকি তৈরি হয়েছে আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি বণ্টন নিয়ে। এতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে দেশের অভ্যন্তরে। নদী তীরের ক্ষয়, বন্যা, পানিপ্রবাহ হ্রাস ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার মতো সঙ্কট মোকাবেলা করতে হবে বাংলাদেশকে। বর্ষায় নদীগুলোতে পর্যাপ্ত পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে তা একেবারেই কমে আসে। নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে সেচ, পানীয় ও শিল্পের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা বাংলাদেশে ক্রমাগত বাড়ছে। এতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাবও পড়ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, ভূগর্ভস্থ পানির দূষণ, উপকূলীয় এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণাক্ততা, বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যহীনতা ও সম্ভাব্য ভূমিক্ষয়। কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক, শিল্পবর্জ্য ও অন্যান্য কারণে সেচের পানি ক্রমেই দূষিত হয়ে পড়ছে।
পানিসম্পদ ও কৃষিকাজে ব্যবহার্য পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যভান্ডার আকুয়াস্ট্যাটের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকার ১৮ শতাংশ চীনে। এই অববাহিকা অঞ্চলে বাস করে মাত্র ১৭ লাখ মানুষ। তিন নদীর অববাহিকার ৬৪ শতাংশ ভারতে, যেখানে বাস করে ৪৭ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। নেপালের শতভাগই গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকায়। অংশীদার হিসেবে মাত্র ৮ শতাংশ অববাহিকা ধারণ করে দেশটি। এই অববাহিকা অঞ্চলে ২ কোটি ৮৮ লাখ মানুষের বসবাস। নেপালের মতো ভুটানেরও পুরোটাই গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকায়। দেশটি তিন নদীর মাত্র ৩ শতাংশের অংশীদার। সবচেয়ে ভাটির দেশ বাংলাদেশে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকার আয়তন ১ লাখ ২০ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার, যা মোট অববাহিকার মাত্র ৮ শতাংশ। যদিও বাংলাদেশের মোট ১৬ কোটি মানুষের ১২ কোটি ২০ লাখই গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকা অঞ্চলে বাস করে।
উৎপত্তিস্থলে ব্রহ্মপুত্রের নাম ইয়ারলাং সাংপো। ভারতে এটি ব্রহ্মপুত্র ও সিয়াং নামে পরিচিত। আর বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর নদীটি যমুনা হিসেবে প্রবাহিত হচ্ছে। চীন থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এ নদী। নদীর কিছু অংশ ভুটানের মধ্য দিয়েও প্রবাহিত হয়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্বের ছয়টি রাজ্যের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে নদীটি। গতিপথে সংলগ্ন রয়েছে চারটি দেশের ৫ লাখ ৮০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার ৫০ শতাংশ চীন, ৩৪ শতাংশ ভারত, ৮ শতাংশ বাংলাদেশ ও একই পরিমাণ অঞ্চল ভুটান সংলগ্ন।
অন্যদিকে, গঙ্গার উৎপত্তি হিমালয় পর্বতমালার চীন অংশে। ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এটি। এর উজান অংশে মিলিত হয়েছে বেশকিছু নদী। বাংলাদেশে পদ্মা নামে পরিচিত এ নদী প্রথমে যমুনা ও পরে মেঘনায় মিলেছে। আর মেঘনা নামেই তিনটি নদীর মিলিত অংশ গিয়ে পড়েছে বঙ্গোপসাগরে। গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ুর বৈচিত্র্য বিবেচনায় নিলেও গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকা অঞ্চল বিশ্বে অনন্য। গঙ্গা অববাহিকার উজানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে কম বৃষ্টিপাতের দেখা মেলে। অন্যদিকে উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। আবার ব্রহ্মপুত্র সংলগ্ন এলাকাগুলোতে বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা মেঘনা অববাহিকায় অবস্থিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Md Junayed Calligrapher ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
ভারতের মতো একটা স্বার্থপর রাষ্ট্রের প্রকিবেশী হওয়াটাই আমাদের দুর্ভাগ্য। কোনো প্রতিবেশীকেই ওরা ভালো রাখেনি।
Total Reply(0)
স্বদেশ আমার ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪৪ এএম says : 0
পানির ন্যায্য হিস্যা অন্তত আওয়ামী লীগ সরকারকে দিয়ে আদায় করা সম্ভব না।
Total Reply(0)
মাওলানা রূহুল আমীন'সানী' ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
বাংলাদেশের কিছু দালাল কেন যে ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্র বলে আমার বুঝে আসে না। যারা আমাদের পানিতে মারতে চাই তারা কিসের বন্ধু।
Total Reply(0)
হাসিবুল ইসলাম ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
পানির ন্যায্য হিস্য চাই।
Total Reply(0)
রাইহান ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
নদী ও দেশ বাঁচাতে হলে এখনই সরকারের মাজা শক্ত করতে হবে।
Total Reply(0)
ash ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ৮:১৭ এএম says : 0
BANGLADESH SIDE BAD DIE BORSHA MOWSHUMER PANI DHORE RAKTE HOBE, PROTITA NODI KE KHONON KORE NODIR TIR KE DHALAI KORE SHONGROKHON KORTE HOBE POROJONE SHENA BAHINIKE KAJE LAGATE HOBE, JE VABE ZIAUR RAHMAN ARMY KE KAJE LAGIE KHAL KHONON KORTO !! MOT KOTHA BORSHAR PANI DORE RAKTE HOBE BANGLADESHER !! THATS ONLY WPAY
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন