বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাঙালি ভোজন রসিকদের ‘কাবাব কিং’

হাসান সোহেল, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি বিশ্বের অন্যতম সুন্দর ও সাজানো শহর। নানা কারণে তাবৎ দুনিয়ার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুও এই নগরী। এই শহরের সবকিছুই ভালো। কিন্তু খাওয়া-দাওয়া নিয়ে বিপাকে আছি। ১০ এপ্রিল এসেছি, এখন ১৪ এপ্রিল। এই পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া বলতে ফাস্টফুড, বার্গার, স্যান্ডুইচ, বিস্কিট এবং বিভিন্ন ফল-ফলাদি দিয়েই চলছি। মনে হচ্ছিল কতদিন যেন ভাত-মাছ খাওয়া হয়নি।
এসব কথা বাংলাদেশ থেকে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহিবলের (আইএমএফ) বসন্তকালীন সভার সংবাদ কাভার করতে আসা সাংবাদিক মফিজুল সাদিকের। তিনি বললেন, চারদিন পর অপর এক সহকর্মীর মাধ্যমে জানলাম পার্শ্ববর্তী ভার্জিনিয়াতে একটি বাঙলা খাবারের রেস্টুরেন্ট আছে। আর কে পায় গাড়ি নিয়ে চলে এসেছি ‘কাবাব কিং’ নামের এই বাঙলা খাবারের দোকানে। তৃপ্তির ঢেকুর গিলে মফিজুল সাদিক জানান, ‘আর এরপর তো মনে হয়েছে নিজের বাড়িতেই খাচ্ছি।’
শুধু সাংবাদিক মফিজুল সাদিকই নয়। বাংলাদেশ তথা ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকার মুসলিম দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ মানুষই হালাল খাবার খেতে ছুটে আসেন ‘কাবাব কিং’ রেস্টুরেন্টে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নানান জাতির মানুষের অভিবাসনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বহুসংস্কৃতিবাদী দেশ। বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বৈচিত্র্যমন্ডিত বহুজাতিক সমাজব্যবস্থা। আর মার্কিন তথা বিশ্বের প্রশাসনিক এই কেন্দ্রবিন্দুতে পশ্চিমা সব খাবার-দাবার মেলাটাই স্বাভাবিক।
কেউ কেউ ভাবতে পারেন, ওয়াশিংটনে ভাত-মাছ-ডালের স্বাদ নেওয়ার চিন্তা করাটা রীতিমতো গাধামী। কিন্তু প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির ক্রমশ বিস্তারের ফলে এখন উদ্যোক্তারা এ ব্যবসার দিকেও মনোযোগ দিতে শুরু করেছে। নিকট অতীতেও এখানে বাংলা খাবারের সন্ধান পাওয়াও ছিল কষ্টকর। সময়ের চাহিদা পূরণে ওয়াশিংটন ডিসির মতো নগরেও বাঙলা খাবারের রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
‘কাবাব কিং’ নাম শুনলেই এখন মার্কিন রাজধানীবাসীর চোখের সামনে এক পরিপাটি ও মুখরোচক সব বাংলাদেশি খাবারের আয়োজন চোখে ভেসে ওঠে। ঘটনাটা কাকতালীয় হলেও ‘কাবাব কিং’ এর প্রতিষ্ঠার সাথে একটা ঐতিহাসিক যোগসূত্রের খোঁজ পাওয়া যায়। হালে যতই চটজলদি খাবার সংস্কৃতি গড়ে উঠুক, ওয়াশিংটন ডিসির সাথে বাংলার সম্পর্কের কথা তো ইচ্ছে করলেই মুছে ফেলা যাবে না।
ওয়াশিংটনে ভাত, ডাল, মাছ ও মাংসের স্বাদ নেয়া যেন বিলাসিতা। এসব খাবারের সন্ধান পাওয়াও কষ্টকর। তবে বাঙলা খাবার ছাড়া বাঙালিদের চলে না। শুধু ফাস্টফুড ও বার্গার খেয়ে পেট ভরলেও মন ভরেনা। দূর দূরান্ত থেকে আসা সবাই বাঙলা খাবার খেতে চান। তবে ওয়াশিংটন থেকে কয়েক মাইল দূরত্বে ভার্জিনিয়া ‘কাবাব কিং’-এ মিলছে বাঙালী ভোজন রসিকদের জন্য সব ধরণের বাঙলা খাবার। কাবাব কিংয়ের অবস্থান ৫৭০১-সি কলম্বিয়া পাইক ফলস চার্চের পাশে।
সাদা ভাত, কাবাব, বিরিয়ানী, তেহারি, বিফ কারি, গোট কারি, ডাল, রকমারী ভর্তা, গোশত ও ইলিশ মাছসহ সব ধরণের হালাল খাবার পাওয়া যাচ্ছে ‘কাবাব কিং’-য়ে। ওয়াশিংটন, ভার্জিনিয়া ও মেরিল্যান্ডের সকল বাংলাদেশী ভোজন রসিকদের প্রিয় স্থান এখন ‘কাবাব কিং’। বাংলাদেশ থেকে ওয়াশিংটনে আসা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ সবাই এখানে ছুটে আসেন। যদিও শুধু বাংলাদেশীরাই নয়, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকার বিভিন্ন মুসলিম দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ মানুষ হালাল খাবার খেতে ছুটে আসেন এখানে।
কাবাব কিং-য়ে পরিবার নিয়ে রাতের খাবার খেতে আসা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি শাহিদা পারভীন লিপি বলেন, অনেক সময় ব্যস্ততার কারণে বাসায় রাতে রান্না করা হয় না। তাই ঘরের খাবারের সাদ নিতে প্রায়ই পরিবার নিয়ে কাবাব কিং-য়ে ছুটে আসি।
২০১৭ সালে ‘কাবাব কিং’ প্রতিষ্ঠা করেন নোয়াখালীর মোহাম্মদ হোসেন। ২০০৭ সালে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পড়া অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান মোহাম্মদ হোসেন। এখন শুধু কাবাব কিং নয় এর পাশাপাশি সুপার শপ ও সেল ফোনসহ ১৭টি দোকান আছে তার। এসব দোকানে প্রায় ৭৫ জন বাংলাদেশীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
কাবাব কিং প্রসঙ্গে মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ওয়াশিংটনে বাঙলা খাবার খুব সহজে পাওয়া যায় না। তাই বাংলাদেশসহ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ভোজন রসিকদের জন্য ‘কাবাব কিং’ রেস্টুরেন্টের চিন্তা। সাদা ভাত, মাছ, মাংস, ডালসহ দুই শতাধিক পদের বাঙালি খাবার রয়েছে। তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে ওয়াশিংটনে আসা মন্ত্রী-এমপিসহ সবাই বাঙলা খাবার খেতে কাবাব কিং-য়ে আসেন। বাংলাদেশী কমিউনিটির বিয়ে, জন্মদিন ও আকিকাসহ সব ধরণের অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহ করা হয়। তিনি বলেন, কাবাব কিংয়ের দূরত্ব ওয়াশিংটন থেকে পাঁচ মাইল ও মেরিল্যান্ড থেকে ১০ মাইল। যুক্তরাষ্ট্রের তিন রাজ্যের মধ্যভাগে হওয়ায় সকল বাংলাদেশীসহ ভোজন রসিকরা এখানে ছুটে আসেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন