বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বেসরকারি খাতের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ আবশ্যক

ডিসিসিআই-গ্যারান্টকো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সালমান এফ রহমান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, বেসরকারি খাতের উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করা আবশ্যক। তিনি বলেন, আমরা যেকোন ধরনের অর্থায়নের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল, কিন্তু এটা আমরা অনুধাবন করতে সক্ষম হইনি যে, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক যথোপযুক্ত উৎস নয়। দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে অতীতে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও সেগুলো সফল্য নিয়ে আসতে পারেনি। এ জন্য তিনি পুঁজিবাজারে শক্তিশালী ও কার্যকর বন্ড মার্কেট চালু করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সালমান এফ রহমান মনে করেন, এর মাধ্যমে অবকাঠামো খাতের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পখাতে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তিনি ডিসিসিআই’র এ আয়োজনকে অত্যন্ত সময়োপযোগী হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই কনফারেন্সে থেকে প্রাপ্ত সুপারিশমালা একটি কার্যকর বন্ড মার্কেট প্রবর্তনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে বলে আমি আশা রাখি। পুঁজিবাজারে বিষয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের সূচকের উঠা-নামা স্বাভাবিক একটি ধর্ম। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারকে সচেতন থাকতে হবে। তিনি বলেন, গতিশীল বন্ড মার্কেট বিকাশের জন্য আমাদের পুঁজিবাজারকে অবশ্যই কার্যকর রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা আরো বলেন, বর্তমানে আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে রয়েছি। আমাদের বেসরকারিখাতকে এ বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে এবং কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। 

গতকাল রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেসরকারি অবকাঠামো উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান ‘গ্যারান্টকো’ যৌথভাবে আয়োজিত স্থানীয় পুঁজিবাজার অবকাঠামো অর্থায়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান এসব কথা বলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রাইভেট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ (পিআইডিজি) এর চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু বেইনব্রিজ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ডিসিসিআই সভাপতি ওসামা তাসীর বলেন, বিগত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন সবার কাছে উদাহরণস্বরুপ। এদেশ এখন দ্রুততম সময়ে বিকাশমান অর্থনীতির ৫টি দেশের মধ্যে অন্যতম। এই ধারা বজায় রেখে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। উন্নতির এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে বাংলাদেশের আধুনিক সময়ের ইকোনমিক পাওয়ারহাউজে পরিণত হওয়ার সক্ষমতা আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ ক্ষেত্রে অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের ওপর বিশেষ জোর দেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি। ওসামা তাসীর বলেন, ঢাকা চেম্বার মনে করে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের জন্য এ খাতে ৩২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন। আমাদের জাতীয় বাজেটের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং বেসরকারিখাতকে অবকাঠামো উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের জন্য ব্যাংকখাত যথোপযুক্ত উৎস নয়; বরং পুঁজিবাজার, বন্ড মার্কেট, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড এবং পেনশন ফান্ডের মতো বিবিধ উৎস এ ক্ষেত্রে মুখ্য চালিকাশক্তির ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। তিনি বলেন, পুঁজিবাজার এবং সেকেন্ডারি বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন করা প্রয়োজন যাতে করে সকলের সমন্বয়ে অবকাঠামো খাতের অর্থায়ন সহজে করা যায়।
অ্যান্ড্রু বেইনব্রিজ বলেন, পরিণত এবং উন্নত বাজারে পুঁজিবাজার, বিশেষ করে বন্ড মার্কেট বিষয়টি অবকাঠামো উন্নয়নের অর্থায়নের অন্যতম উৎস। গ্যারান্টকো বাংলাদেশের বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের বিষয়ে নজির স্থাপনকারী গবেষণা ও কাজের মাধ্যমে অবকাঠামো খাতে অর্থায়নের জন্য একে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরতে পারবে।
গ্যারান্টকো’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লাসিথা পেরেরা সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, যে কোনো দেশের জন্য একটি টেকসই এবং যথাযথ অবকাঠামো থেকে উপকৃত হওয়ার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সেই অবকাঠামোর জন্য অর্থায়নটিও যেন যথাযথ হয়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে উন্মোচিত বাংলাদেশ বন্ড মার্কেট বিষয়ক রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৬ সাল থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ প্রয়োজন। পানি, জ্বালানি, টেলিযোগাযোগ, নদীবন্দর, বিমানবন্দর, রেল ও সড়কপথের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এ অর্থ প্রয়োজন। যদিও বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে, এই প্রয়োজনীয় অর্থের মধ্যে ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবস্থা করা যাবে, বাকি ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ফ্যাসিলিটির (টিএএফ) অর্থায়নে সম্পাদিত ‘বন্ড স্টাডি’ অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের জন্য বন্ড মার্কেটের করণীয় বিষয়গুলো তুলে আনবে। একই সাথে, বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের জন্য এই গবেষণা যথাযথ দিক নির্দেশনা তুলে ধরবে।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
dewan ২৯ এপ্রিল, ২০১৯, ৫:২১ এএম says : 0
এমন মেয়াদ দেয়া হোক যেন ঋন গ্রহিতার চৌদ্দ গোষ্ঠীর মেয়াদের মধ্যে এই ঋন আর পরিশোধ করতে না হয়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন