বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

ফখরুল বাদে বিএনপির সব এমপির শপথ: ফেসবুকে বিতর্কের ঝড়

আবদুল মোমিন | প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০১৯, ৭:৩৯ পিএম

অবশেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাদে শপথ নিলেন বিএনপি থেকে নির্বাচিত ৪ সংসদ সদস্য। দলীয় সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে তারা শপথ নেন। সোমবার (২৯ এপ্রিল) পৌনে ৬টার দিকে সংসদ ভবনে শপথ বাক্য পাঠ করান স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে বিএনপি শপথ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েও অবশেষে শপথ নেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনা ও বিতর্কের ঝড়। অধিকাংশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও কেউ কেউ ইতিবাচক ভাবে দেখছেন বিষয়টিকে।

সর্বশেষ শপথ নেওয়া চার সংসদ সদস্য হলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া, বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন। সোমবার সকাল থেকেই দলীয় সিদ্ধান্তে নানা জটিলতায় অপেক্ষায় ছিলেন এই ৪ বিএনপির নেতা। যদিও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ নেননি।

ফেসবুকে দেওয়ান মাসুদ লিখেছেন, ‘‘সত্যিই বিএনপি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। আগামী নির্বাচনে এদের না দেখতে পেলে অবাক হওয়ার কিছু নাই।’’

‘‘আহারে এখন বিএনপি কি করবে?? মায়া লাগে তাদের জন্য। তাদের বট গাছে যে ৮ টা পাতা ছিল। তার মধ্যে ৭ টাই পরে গেলো। এখন গাছ টাই মরে যাবে। রাজনীতিতে ভুল করলে যা হয় আরকি’’ আক্ষেপের সাথে কথাগুলো লিখেছেন রাহুল।

মোঃ মাইনুল ইসলামের মন্তব্য, ‘‘এরপরও কি কেউ বুঝতে বাকি যে আওয়ামী-বিএনপি টাকার জন্য রাজনীতি করে, অতএব মুসলমানদের এসব স্বার্থবাদী রাজনৈতিক দল পরিত্যাগ করা উচিত। নয়ত এই চোরদের সঙ্গ দিলে কেয়ামতের দিন চুরদের সাথেই উঠতে হবে।’’

ফেসবুক ব্যবহারকারী মিজানুর রহমান টিপু লিখেছেন, ‘‘দলের গঠনতন্ত্র যদি ভংগুর হয় সাংগঠনিক কাঠামো যদি দূর্বল হয় এই রকম পরিস্থিতিতে আমাদের বিচলিত হবার কিছু নেই, তৃর্নমূল আমরা মাঝে মধ্যে কিছু বিনোদন পাই এই.. কর্মকাণ্ড দেখে।’’

‘‘একমাত্র জামাত ইসলামী ছাড়া সব দলের মানুষ দলের সর্থের চেয়ে নিজের সর্থকে বড় করে দেখে। এটাই হল জামাতের মধ্যে অন্য দলের পার্থক্য’’ মন্তব্য কাজী মিরাজ হোসেনের।

বিএনপির সমালোচনা করে মোস্তাক আহমাদ লিখেছেন, ‘‘নিজেদের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বলে দাবি করা একটি দল যখন নিজের ঘরের ৬টা লোককেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা।তখন তাদের উচিত বিন্দু পরিমাণ মানসম্মান থাকলে, নাকে খত দিয়ে, জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে চিরতরে দলের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয়া।’’

সেলিম আহমেদের মন্তব্য, ‘‘নব যুগের মির জাফররা- লোভ মানুষকে কতটা নীতিহীন বেইমান ও জঘন্য মোনাফেক করে তুলতে পারে তারই একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে এই চার কুলাঙ্গার! যে বিএনপির কারণে তাদের পরিচিতি জনপ্রিয়তা ও উত্থান, আর আজ আওয়ামী আতাঁতে সেই দলের প্রধানের দুর্দিনে দুঃসময়ে তাঁরই সাথে ও দলের সাথে বেইমানি করেছেন! ওই বেইমানদের ক্ষমা নেই, ক্ষমা হতে পারে না!’’


‘‘এই পাচ বছর সাংসদ হিসেবে থাকলে ভাল মাল কামাতে পারবে। বয়কট করলে তো কচুও পাবেনা। উল্টো বিরোধী হিসাবে হামলা/মামলা তো আছেই। তাই টাকার মায়া ছাড়ার উপায় নেই। এতেই বুঝা যায় এদেশের রাজনীতিবিদদের নীতি কেমন। যেখানে তাদের চেয়ারপার্সন জেলে সেখানে তারা সংসদে যাচ্ছে এসির হাওয়া খেতে। এরা সরকার গড়লে নাকি আবার দেশের উন্নতি করবে?’’ লিখেছেন ইসমাইল খান।

ফেসবুক ব্যবহারকারী শেখ মেসবা লিখেছেন, ‘‘সবাইকে বহিষ্কার করে ফখরুল একাই থাকবে। জিয়া বলেছিলে আদর্শ নেতা যদি একজনও হয় তাহলে একজনকে নিয়েই রাজনীতি করব। এখন দেখছি সেটাই প্রতিফলিত হতে যাচ্ছে।’’

সাগর খানের মন্তব্য, ‘‘শপথ নিতে সরকারের চাপ অবশ্যই আছে- এবং সেটা বাংলাদেশের প্রায় সকল মানুষ বিশ্বাস করে। কিন্ত আমার কথা হলো- সেই চাপ সহ্য করার মানসিকতা না থাকলে রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে কারওয়ান বাজারে সবজির ব্যবসা করা উচিত।’’

‘‘এদেরকে (এমপি) বানানো হয়েছিল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। এদের সাথে লীগ নির্বাচনের পূর্বেই গোপন চুক্তি করেছিল,,,যার মাধ্যমে রাতের ভোটের নির্বাচনে তাদের জয়ী করা হয়। বাকশাল মুর্দাবাদ, গনতন্ত্র মুক্তি পাক’’ লিখেছেন জিয়া।

ফেসবুক ব্যবহারকারী আরিফ রহমান প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘বিএনপির নেতারা বলে সরকারের চাপে আর সংসদ সদস্যরা বলে তারেক জিয়ার নির্দেশে শপথ নিয়েছে।তার মানে কি সরকারের সাথে তারেক জিয়ার সম্পর্ক আছে?’’


‘‘ওরা কি আসলেই বিএনপি ছিল বা করতো? ওরা কি শহীদ জিয়ার আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন? এরা কখনো বিএনপি ছিলনা এবং করতো না ওরা মানুষ রূপি শয়তান ওরা সুবিধা ভোগকারী’’ প্রশ্ন আদনান হোসেইন আজাদের।

শাহাদাত স্বাধীন লিখেছেন, ‘‘আমি মনে করি এটা বিএনপির পলিটিক্যাল গেইম। তারা এখন সংসদে সরকারের সমালোচনা করবে।বিভিন্ন দাবিতে ওয়াক আউট করবে। তাছাড়া এই শপথের বিনিময়ে খালেদার মুক্তির একটা সমঝোতা সরকারের সাথে হয়েছে বলে ধারণা।’’

তবে সবার থেকে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সঞ্জয় দাস। তার মন্তব্য, ‘‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।
জনগনের রায়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে সংসদে গিয়ে জনগনের মনের কথা বলুন এবং দেশের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করুন।
অভিনন্দন।’’

বিএনপির চার এমপির শপথ নেওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ফয়সাল আলম। তিনি লিখেছেন, ‘‘এই কাজটি অনেক ভালো হয়েছে কারণ জনগণ চাইতো যে সকল বিজয়ী প্রার্থী যেন শপথ নেয়।কাজটি অনেক ভালো হয়েছে আর জনগণ অনেক খুশি হয়েছে।এভাবে সকল নির্বাচনী প্রার্থীকে শপথ নিয়ে নেওয়া উচিত।আর দেশের হয়ে জনগণের জন্যে কাজ করে যেতে হবে।’’

এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে বিএনপি শপথ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান জাহিদ শপথগ্রহণ করেন। পরে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ও মিত্ররা। মাত্র ৮টি আসন পায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচিত ৮ জনের মধ্যে ৬ জন বিএনপির আর দু’জন গণফোরামের। তবে নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে তা প্রত্যাখ্যান করে ঐক্যফ্রন্ট।

গণফোরামের দুই সংসদ সদস্যের মধ্যে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে বিএনপির প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর গত ৭ মার্চ শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেন। সিলেট-২ আসন থেকে গণফোরামের প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত মোকাব্বির খানও গত ২ এপ্রিল শপথ নেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আলী ২৯ এপ্রিল, ২০১৯, ৮:১২ পিএম says : 0
শপথ নিয়েছে ভালো হয়েছে আ,লীগের দুরনীতি বাজ আর চুরদের সমলচনা করতে পারবে সংসদে জনগন ও জানতে পারবে ,কারন ত্ররশাদ সাব বিরোধী দল হলেও সংসদে কথা বলার সাহশ নাই
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন