শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

২৩ দিন পর জানা গেল “তিনি” কারাগারে

ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০১৯, ২:২৭ পিএম

২৩ দিন পর হদিস মিলেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মুশতাক আহম্মেদের। ৯ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি নিয়ে গত ৭ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ হন মুশতাক। এরপর থেকে তার কোন সন্ধান ছিল না। অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ছিলেন দুশ্চিন্তায়। অবশেষে জানা গেল দুর্নীতির মামলায় শিক্ষা অফিসার মুশতাক আহমেদ ঢাকার একটি কারাগারে আছেন। তবে অফিসিয়ালি ও পারিবারিক ভাবে বিষয়টি গোপন করে রাখা হচ্ছে চিকিৎসা ছুটির কথা বলে। জানা গেছে, ৭ এপ্রিল মুশতাক আহমেদ নৈমিত্তিক আর ১৬ তারিখে চিকিৎসার জন্য ছুটি চেয়ে আবেদন করেন। গত ৮ এপ্রিল হতে তিনি কার্যালয়ে অনুপস্থিত আছেন। ৯ দিনের ছুটি শেষে ১৭ এপ্রিল থেকে তার কার্যালয়ে যোগদান করার কথা, কিন্তু তিনি যোগদান না করে ১৬ এপ্রিল চিকিৎসার জন্য তিন সপ্তাহের ছুটি চেয়ে আরেকটি আবেদন পাঠান। যে আবেদনে তার নাম থাকলেও স্বাক্ষর বা সীল দেওয়া নেই। এরপর থেকে তার মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। এতে সংশ্লিষ্ট অফিসের অন্যরা বিচলিত হয়ে পড়েন। তারা খোঁজাখুঁজি করে কোথায় চিকিৎসাধীন সেটাও উদ্ধার করতে পারেননি। এই অবস্থায় কেটে গেছে প্রায় তিন সপ্তাহ। এদিকে খোজ নিয়ে জানা গেছে শিক্ষা কর্মকর্তা মুশতাক আহমেদ দুর্নীতির একটি মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে আদালত কর্তৃক আটকের পর কারাগারে আছেন। আদালতের একটি সূত্র জানিয়েছেন, গত ১৫ এপ্রিল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের দায়রা মামলা নং ৯/১৯ ও ১০/১৯ দুইটি মামলায় তিনি হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে বিচারক এ.কেএম ইমরুল কায়েস তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। আর মামলা দুইটি বিশেষ জজ আদালত-৪ এর আদালতে বিচারাধীন রয়েছেন। মামলার উৎপত্তি সম্পর্কে মাগুরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কুমারেশ চন্দ্র গাছি জানান, মুশতাক আহমেদ মহম্মদপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসে কর্মরত থাকা অবস্থায় একটি দূর্নীতির ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। সে সময়ে ৫ বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদায়নে যোগ্যতার সমস্যা দেখা দেয়। যোগ্যতা না থাকায় তৎকালীন জেলা শিক্ষা অফিসার পদায়নের ক্ষেত্রে তাদের নাম অধিদপ্তরে প্রেরন করেননি। পরবর্তীতে ওই সকল শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে বেতন ছাড় হয়। এ বিষয়টি খোজ নিয়ে শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা জানতে পারেন ওই শিক্ষকরা একাধিক কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে অধিদপ্তর থেকে তাদের বেতন ছাড় করিয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তখন তদন্ত করেন এবং বিষয়টি ধরা পড়ে। শিক্ষা অফিসের পক্ষ থেকে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্তা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্মিত যশোর জেলা কার্যালয়ের তৎকালীর সহকারী পরিচালক মোঃ ওয়াজেদ আলী গাজী বিষয়টি তদন্ত করেন। তদন্তে সবকিছু প্রমানিত হলেও মুশতাক আহমদ শিক্ষকদের বেতন করানোর বিষয়ে দাখিল করা সকল কাগজপত্র সঠিক আছে মর্মে লিখিত দেন। এতেই ফেঁসে যান মুশতাক আহমদ। দুদক ঘটনাগুলো তদন্ত করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ওই শিক্ষকদের সঙ্গে মুশতাক আহমদকে আসামী করা হয়। মামলায় চার্জসীট দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার আসামী মাগুরা মহম্মদপুর উপজেলার মঙ্গলহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজুল ইসলাম জানান, তাদের সকল কাগজপত্র ঠিক ছিল। তাদের যোগ্যতাও ছিল। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসার শেখ মোঃ আকতারুজ্জামান জানান, শিক্ষা কর্মকর্তা মুশতাক আহমেদ ৯ দিনের নৈমিত্তিক ছুটির পর চিকিৎসার জন্য একটি দরখাস্ত দিয়েছেন। যেখানে একটি মেডিকেল সনদও রয়েছে। এছাড়া তিনি শুনেছেন ওই কর্মকর্তা কারাগারে আছেন। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রামনাথপুর গ্রামের মাষ্টার দিন মোহাম্মদের ছোট ছেলে মুশতাক আহমেদ ২০০৫ সালে ১০ জানুয়ারি চাকরিতে যোগদান করেন। সাতক্ষীরা সদর ও ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ সহ বিভিন্ন স্থানে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন