বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

শতাধিক এলাকায় পানি সংকট চরমে

রাজধানী জুড়ে পানির হাহাকার চলছে

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০১৯, ৬:৫৩ পিএম | আপডেট : ৬:৫৫ পিএম, ১ মে, ২০১৯

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, বাশবাড়ি. চাঁদমিয়া হাউজিং আদাবর, শ্যামলী, আগারগাঁও, গোড়ান, খিলগাঁও, কদমতলা, আহমেদবাগসহ প্রায় শতাধিক এলাকায় চলছে তীব্র পানির সংকট, ওয়াসার কাছে পানি চেয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না বলে অভিযোগ। পানি সংকটের কারণে এ এলাকার বাসিন্দারা সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। পানির বিল নিয়মিত পরিশোধের পরও মানুষ তাদের চাহিদা অনুযায়ী পানি কেন পাচ্ছেন না, তা জানা জরুরি।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান পানি সমস্যা নিরসনে ওয়াসার নানা কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরে গ্রাহকের ভোগান্তি ও হয়রানি কমাতে গোটা ওয়াসার কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা হচ্ছে।
এ দিকে ওয়াসার লালমাটিয়া জোন এলাকায় সব চেয়ে পানি সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বাশবাড়ি এলাকার বাসিন্দার মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, এ এলাকায় সাত দিন ধরে পানি নাই এমনি অভিযোগ দিলেও সাড়া দেননি। লালমাটিয়া জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ আলম খান নিজেই লোকজন দিয়ে পানি বিক্রি করতে আর আমি সরকারি ভাবে টাকা দিয়েও পানি পাচ্ছি না। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক এলাকা। তিন-চার দিন ধরেই পানি সরবরাহ বন্ধ। ফলে আটকে থাকে রান্নাসহ গৃহস্থালির নানা কাজে। চড়া দামে ওয়াসার পানি কিনে এনে কাজ সারতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
এছাড়া রাজধানীর আগামী সপ্তাহে রমজান শুরু হচ্ছে তার আগে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। রমজানের আগে এতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এ ধরনের ভোগন্তিতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। রাতের বেলায় পানি যাও পাওয়া যাচ্ছে তা ময়লা ও দুর্গন্ধজনিত। এখানকার গ্রাহকরা পানির বিল পরিশোধ করলেও ৩ মাস ধরে ঠিকমতো পানি পাচ্ছেন না। চারদিকে পানির হাহাকার চলছে বলে এলাকাবাসী পানি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। আর গত কয়েক বছর ধরেই মোহাম্মদপুর এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট চলছে।
রাজধানীর বনশ্রী আবাসিক এলাকায় কয়েক মাস ধরে ওয়াসার পাইপলাইনে কাজ চলছে। কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই এলাকায় প্রায়ই পানি সংকট দেখা দিয়েছে।তবে গত এক সপ্তাহ ধরে আবাসিক এলাকাটির বেশ কয়েকটি ব্লকে কোনো পানি মিলছে না। একই অবস্থা, রাজধানীর অভিজাত এলাকা উত্তরা মডেল টাউনের ১৩ ও ১৫ নম্বও সেক্টরেও। মিরপুরের মনিপুর এলাকাতেও পানির সমস্যা গত এক বছর ধরে। রাজধানীর গোড়ান, খিলগাঁও, কদমতলা, আহমেদবাগ, রাজারবাগ, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, তাঁতীবাজার, চাঁদনীঘাট, নারিন্দা, পানিটেলা, রামপুরা, বাড্ডা, শান্তিনগর, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, মাদারটেক, বাসাবো, কুসুমবাগ, মুগদা, মানিকনগর, গোপীবাগ, জিয়ামাঠ,আজিমপুর ও নিউ ইস্কাটন, গণকটুলী, ওয়ারী, মৈশুটি, বনগ্রাম, আরমানিটোলা, লক্ষ্মীবাজার, বাংলাবাজার, শাঁখারীবাজার, বাড্ডা, নবাবপুর, ধোলাইখাল, ইসলামপুর, বংশাল, জোয়ারসাহারা, কুড়াতলী,পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, মেম্বারবাড়ি মিরপুর-১, ২, পল্লবী, ইব্রাহীমপুর, মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ী রোড, আলী এন্ড নুর রিয়াল এস্টেড, শ্যামলী রিং রোডসহ রাজধানীর শতাধিক এলাকাতেও বিরাজ করছে পানির সংকট। একে গরম তারওপর রমজান মাস, তাই পানি না পেয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার ধর্ণা দিয়েও কোনো সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের সাথে বারবার যোগাযোগ করে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও বিষয়টি তারা এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে লালমাটিয়া জোনের নিবাহী প্রকৌশলী শাহ আলম খান ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীর চাদমিয়া হাউজিংক এলাকায় পাম্পের কাজ চলছে এ কারণে পানি সংকট রয়েছে। আমরা গ্রাহককে পানি দেয়ার চেস্টা করছি। নগরীতে নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহের দায়িত্ব সরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়াসার। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম- এ অজুহাত দেখিয়ে ওয়াসা অতীতে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেছে। বর্তমানে এ সমস্যা নেই।
এখন ঢাকা ওয়াসার উৎপাদন ক্ষমতা অন্যূনত ২৪৫ কোটি লিটার। রাজধানীতে দৈনিক ২২৫ কোটি লিটার পানির চাহিদা সামনে রেখে প্রতিষ্ঠানটি পাঁচটি শোধনাগার প্রকল্পসহ ৭১২টি পাম্পের মাধ্যমে পানি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চেষ্টা করে থাকে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি থাকা সত্ত্বেও নগরবাসীকে কেন পানি নিয়ে দিনের পর দিন দুর্ভোগ পোহাতে হতে,হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনও হচ্ছে। সেই অনুযায়ী রাজধানীতে পানি সংকট থাকার কথা না। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। তবে ওয়াসা তাদেও উৎপাদনের পরিমাণটা জানালেও সিস্টেম লসের বিষয়টি সেভাবে প্রকাশ করতে চায়না। হিসেব মতে, উৎপাদিত পানির ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পানি সিস্টেম লসে চলে যায়। যার প্রভাব পড়ে রাজধানী জুড়ে।
বাঁশবাড়ি এলাকার তাসলিমা খাতুন জানান, আমাদের এই এলাকার পানিতে অনেক দিন ধরেই দুর্গন্ধ এবং পানির রং হলুদ। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।
চাঁদমিয়া হাউজিং এলাকা এক নারী জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরে আমাদের পানি নেই। আমরা অনেক কষ্ট করছি। গোসল করতে পারিনা এবং কোনো কাজই ঠিক মতো করতে পারি না।
সম্প্রতি ওয়াসা নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতেও পানি সংকটের কারণে গ্রাহকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে ঢাকা শহরে পানি সংকট রয়েছে, এ কথা অস্বীকার করেছেন ওয়াসার কর্মকর্তারা। অবশ্য তারা পানিতে ময়লা-দুর্গন্ধ থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
ঢাকা ওয়াসার তথ্যমতে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ওয়াসার প্রায় পৌনে ৪ লাখেরও বেশি গ্রাহক সংযোগ রয়েছে। তবে একটি বাড়িতে একটি সংযোগ থাকলেও সেখানে একাধিক পরিবার বাস করছে। ফলে বাস্তবে গ্রাহকের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। এছাড়া প্রচুর অবৈধ সংযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা। তারা টাকার মিনিময় এ সংযোগ দিচ্ছে। আর বৈধভাবে আবেদন করেও সংযোগ পাচ্ছে না।
এদিকে জনসাধারণের জন্য বিশুদ্ধ ও নিরাপদ খাবার পানি নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পিওরইট ও এসডিআই যৌথভাবে পরিচালনা করছে মাইক্রোফাইন্যান্স কার্যক্রম। এর ফলে নাগরিকদের বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানির চাহিদা মিটবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এসডিআইর নির্বাহী পরিচালক শামসুল হক ইনকিলাবকে বলেন, নিরাপদ পানির জন্য এটা একটি অভিনব উদ্যোগ। যা গ্রামাঞ্চলসহ সকল মানুষের জীবনকে আরো স্বাস্থ্যকর করে তুলবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আ.আজিজ ৪ মে, ২০১৯, ১২:৫০ পিএম says : 0
আমার বাসাই আজ ১১ দিন পানি নেই
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন