বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দলীয় সিদ্ধান্তে এমপিদের শপথ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০১৯, ১২:১০ এএম

 বিএনপির তৃণমূলে ক্ষোভ রফিক মুহাম্মদ সংসদ সদস্যদের শপথ ইস্যুতে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ এবং হতাশ। সংসদে যোগ না দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করে নতুন নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনের যে স্বপ্ন দেখছিলেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাও ভেস্তে গেল। তৃণমূলের অনেক নেতা মনে করেন, সংসদে যোগদান করে বিএনপি শুধু দলের নেতাকর্মীই না দেশের ভোটারদের সাথে প্রতারণা করেছে। তারা বলেন, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর দেশে যে ভোট হয়েছে তাতে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ২৯ তারিখ রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরে রাখা হয়েছে। ভোট দিতে না পরার জন্য ভোটারদের হৃদয়ের যে রক্তক্ষরণ তাকে আরও বেড়েছে। অনেকে প্রশ্ন রাখেন, দলের চেয়ারপার্সন জেলে, হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাবন্দি। তাদের বিষয় না ভেবে ব্যক্তি স্বার্থে যারা সংসদে যোগ দিয়েছেন তারা শুধু দল নয় জাতির সাথে বেঈমানি করেছেন। আবার অনেকে মনে করেন সংসদে যোগদানের এ সিদ্ধান্ত দলীয় ফোরামে আলোচনা করে নিলে ভালো হতো। রাজশাহী মহানগর বিএনপিসাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন এ বিষয়ে গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গত নির্বাচনে শুধু বিএনপি নয়, দেশের নয় কোটি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। তাদের হৃদয়ের যে রক্তক্ষরণ তা তো রয়ে গেছে। বিএনপি ও তার জোট এ নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন বলে সংসদে যোগ না দেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিল তাতে ভোটাররা কিছুটা সান্ত¦না পেয়েছিল। তাদের হয়ে বিএনপি প্রতিবাদ করছিলো, কথা বলছিল। সে অবস্থায় হঠাৎ করে সংসদে যোগ দেওয়াটা ভোটারদের সাথেতো অবশ্যই প্রতারণা। নেতাকর্মী এবং সাধারণ ভোটাররাতো এ বিষয়ে আমাদের প্রশ্ন করছে। দলীয় সিদ্ধান্তে তারা শপথ নিয়েছে, তাই এ বিষয়ে আর কি বলবো। দলীয় বৈঠক হলে এ নিয়ে কথা বলবো।  একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাত্র ছয়টি আসনে জয়লাভ করে বিএনপি। একে প্রহসনের নির্বাচন উল্লেখ করে দলটি সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সংসদ সদস্য হিসেবে এই ছয়জনের কেউই শপথ নেবেন না দলের সর্বস্তরে এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানানো হয়। এটা শুধু এককভাবে বিএনপির ছিল না, জোটগতভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল গণফোরামের দুই নির্বাচিত সদস্যেরও শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত ওলট-পালট হয়ে গেল। সংসদে যোগদানের সাংবিধানিক সময়সীমার একেবারে শেষের দিকে এসে শপথ ইস্যুতে বিএনপি আগের অবস্থানের একেবারেই একশ’ আশি ডিগ্রি উল্টো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল। অবশ্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এটি রাজনীতিতে বিএনপির চমক ও ইউটার্ন। তবে মহাসচিবের এই বক্তব্যে খুশি হতে পারেননি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা মনে করেন বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অভাবে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করার সাহস পেয়েছে নির্বাচিতরা। এজন্য মহাসচিবও তার দায় এড়াতে পারে না। শপথ গ্রহণ ইস্যুতে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এ ইস্যুতে নির্বাচিত ছয় জন এমপির বিরুদ্ধে দল তিন রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা সাংগঠনিক দুর্বলতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। নেতা-কর্মীদের ওপর দলের নিয়ন্ত্রণ কম থাকার কারণেই এমনটা হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয়জনের মধ্যে প্রথম শপথ নেওয়া জাহিদুর রহমানকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। এরপর চারজন হারুনুর রশীদ, আমিনুল ইসলাম, উকিল আবদুস সাত্তার ও মোশাররফ হোসেনের জন্য শপথগ্রহণের দলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ক্ষেত্রে শপথ না নেওয়ার সিদ্ধন্ত হয়েছে। এর মধ্যে শপথ না নেওয়ায় মির্জা ফখরুলের আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে এই সংসদে ফখরুল আর এমপি হিসেবে থাকছেন না। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ বিষয়ে  ইনকিলাবকে বলেন, আমি সংসদে গিয়ে কথা বলার পক্ষে। তবে যে পদ্ধতিতে বিএনপি সংসদে গেছে সেটা ভুল। সিদ্ধান্ত সঠিক কিন্তু পথটা ভুল। বিএনপির স্থায়ী কমিটি এবং সবাইকে জানিয়েই তারা সংসদে যেতে পারতো। এভাবে পানি ঘোলা করে খাওয়াতে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি এবং হতাশা বাড়তে পারে। কুমিল্লা দাউদকান্দি উপজেলার এক ইউনিয়ন বিএনপির নেতা বজলুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ভাই আমার নামে ১৭টি মামলা আছে। আমি এই মাত্র কোর্টের এজলাশ থেকে নেমে এসেছি। প্রায় প্রতি সপ্তাহে কোর্টে হাজিরা দিতে হয়। আমাদের এই দুর্দশার কথা চিন্তা না করে যারা শপথ নিয়েছে তারা দলের সাথে, দেশের মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে। নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারে নাই। সবাই বিএনপির দিতে তাকিয়ে ছিল যে তারা আন্দোলন করে আবার একটা নতুন নির্বাচন আদায় করবে। জনগণের সে আশা নিভে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচন উল্লেখ করে বিএনপি সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে সর্বস্তরের ভোটারদের কাছে প্রশংসনীয় হয়েছিল। যারা সংসদে যোগদান করেছে তাদেরকে জাতীয় বেঈমান বলে বহিস্কার করা হয়েছে। এ অবস্থা এখন যারা শপথ নিয়েছে তারাও ভোটারদের কাছে প্রতারক ও বেঈমান হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। এই শপথগ্রহণের মাধ্যমে ভোটারবিহীন নির্বাচনকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। তবে তৃণমূলের অনেক নেতা এই সিদ্ধান্তকে সঠিক বলেও  মনে করছেন। সিলেট মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সালেহ আহমদ খসরু ইনকিলাবকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারে নাই। ভোটারদের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। তবে রাজনীতির বৃহত্তর স্বার্থে অনেক সময় অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তে তারা শপথ নিয়েছেন। পরবর্তীতেও তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত দেবেন দলের নেতাকর্মীরা তা বাস্তবায়ন করবে।##  

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন