বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জান্নাত ও জান্নাত লাভের খোশখবরী-৫

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০১৯, ১২:১১ এএম

জান্নাতের সকল নিয়ামতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হলো ‘আল্লাহর দীদার।’ ইহজগতে কেউ আল্লাহর দিদার লাভ করতে পারবে না। জান্নাতীগণ জান্নাতে আল্লাহপাকের দিদারের সৌভাগ্য লাভ করবে। এতদ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ক. পার্থিব জগতের চক্ষু তাকে দেখতে পারবে না, তিনি সকল চক্ষুকে দেখতে পারেন, তিনি অতীব সুক্ষèদর্শী, সর্বজ্ঞ। (সূরা আল আনয়াম : আয়াত ১০৩)।
খ. উত্তম কর্মচারীদের জন্য উত্তম বিনিময়, আরও আছে কিছু অতিরিক্ত। (সূরা ইউনুস : আয়াত ২৬)। গ. হযরত সুহাইব রা. রাসূলুল্লাহ সা. হতে বর্ণনা করেন, জান্নাতীগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তখন আল্লাহপাক তাদেরকে লক্ষ্য করে বলবেন, তোমরা কি চাও, আমি আরও আগ্রহ বাড়িয়ে দেই? তারা বলবে, আপনি কি আমাদের মুখমÐল আলোকেজ্জল করেননি? আমাদেরকে জান্নাতে দাখিল করেননি এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত দেননি? রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, এরপর আল্লাহপাক আবরণ বা পর্দা তুলে নেবেন। আল্লাহপাকের দিদারের চেয়ে অধিক প্রিয় কোনো বস্তু তাদেরকে দেয়া হয়নি। (সহীহ মুসলিম : খÐ ১, পৃ. ১০০)।
প্রকৃতপক্ষে জান্নাতের বিভিন্নস্তর আছে, পর্যায় বা ধাপ আছে। জান্নাতবাসীগণ নিজ নিজ সৎকর্ম অনুসারে জান্নাতে যোগ্য আসন লাভ করবেন। আল কোরআনে জান্নাতের স্তর বোঝাতে নিম্নোক্ত আটটি শব্দ সমষ্টি ব্যবহৃত হয়েছে। যথাÑ
জান্নাতুল ফেরদাউস: আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের আপ্যায়নের জন্য রয়েছে জান্নাতের উদ্যান। (সূরা কাহাফ : আয়াত ১০৭)। এ প্রসঙ্গে ইমাম রাজী বলেন, ফিরদাউস জান্নাতের এক উত্তম অংশের নাম।
জান্নাতে আদন: কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ মুমনি নর ও নারীকে জান্নাতের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, যেথায় তারা চিরকাল থাকবে এবং জান্নাতে আদনে বা স্থায়ী জান্নাতে উত্তম বাসস্থানের; আল্লাহর সন্তুষ্টিই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং তা-ই মহা সাফল্য। (সূরা তাওবাহ : আয়াত ৭২)।
জান্নাতুল মাওয়া: পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যার নিকট জান্নাতুল মাওয়া বা অবস্থানের জায়গা রয়েছে। (সূরা নাজম : আয়াত ১৫)। জান্নাতুল মাওয়া অর্থ অবস্থানের বাসোদ্যান, অবস্থানের জায়গা। জান্নাত প্রকৃতই মুমিনের বাসোদ্যান।
জান্নাতুন নাঈম: সুখময় জান্নাত। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে এবং আমাকে সুখময় জান্নাতের অধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। (সূরা শোয়ারা : আয়াত ৮৫)।
জান্নাতুল খলদ: স্থায়ী জান্নাত। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, ইহাই শ্রেয়, না স্থায়ী জান্নাত। যার প্রতিশ্রæতি মুত্তাকীদের দেয়া হয়েছে। ইহাই তো তাদের পুরস্কার ও প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা ফুরকান : আয়াত ১৫)।
দারুস সালাম : শান্তির আলয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তাদের পরওয়ারদিগারের নিকট তাদের জন্য শান্তির আলয় রয়েছে এবং তারা যা আমল করত, তজ্জন্য তিনিই তাদের অভিভাবক। (সূরা আল আনয়াম : আয়াত ১২৭)।
দারুল ক্বারার: চিরস্থায়ী আবাস: আল কোরআনে বলা হয়েছে, হে আমার সম্প্রদায়, এ পার্থিব জীবন তো অস্থায়ী উপভোগের বস্তু এবং আখিরাতই হচ্ছে চিরস্থায়ী আবাস। (সূরা মুমিন বা গাফির : আয়াত ৩৯)।
দারুল মাকাম : স্থায়ী আবাস, পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদের স্থায়ী আবাস প্রদান করেছেন, যেখানে ক্লেশ আমাদের স্পর্শ করে না এবং ক্লান্তি স্পর্শ করে না। (সূরা ফাতির : আয়াত ৩৫)। এই কারণে অনেকে মনে করেন যে, জান্নাতের সংখ্যা আটটি এবং তন্মধ্যে জান্নাতুল ফিরদাউস সর্বশ্রেষ্ঠ। কোরআনুল কারীমে জান্নাতের বর্ণনায়, সুরম্য অট্টালিকা, কোমল স্নিগ্ধ ছায়া, স্বর্ণ সিংহাসন, নদী প্রবাহ, দুগ্ধ-মধু ও মদিরা স্রোত, ফল ফুলের প্রাচুর্য, সুকোমল গালিচা, সুন্নরী-কিন্নরী হুর, চির কিশোর গিলমান ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে। জান্নাতের বিস্তৃতি আকাশ ও পৃথিবীর মত। (সূরা হাদীদ : আয়াত ২১)।
বস্তুত: কাফির মুশরিকদের জন্য জান্নাত চির নিষিদ্ধ। কোনো কাফির ও মুশরিক এবং অন্তরে আল্লাহকে অবিশ্বাসকারী কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে আল কোরআন ইরশাদ করেছে, ক. যে আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করবে আল্লাহপাক তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। তার ঠিকানা হবে নরকান্নি। (সূরা আল মায়িদাহ : আয়াত ৭২)। খ. যারা কুফুরী করেবে, তাদের জন্য হল জাহান্নামের আগুন। তাদের জন্য মৃত্যুর ফায়সালাও হবে না। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক সত্য প্রত্যাখ্যানকারীকে প্রতিফল প্রদান করব। (সূরা ফাতির : আয়াত ৩৫)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Arif Rubel ৩ মে, ২০১৯, ২:১৭ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলাকে যারা অন্তর থেকে ভয় করে তারা মুমিন বান্দা। মুমিন বান্দাদের ভয়ের কারণেই তারা জান্নাত লাভ করবে। আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। জান্নাতে তিনি মুমিন বান্দার জন্য অসংখ্য নিয়ামত রেখেছেন।
Total Reply(0)
Borhan Sorkar ৩ মে, ২০১৯, ২:১৭ এএম says : 0
কুরআন এবং হাদিসে উল্লেখিত নিয়ামতগুলো ওই সব বান্দার জন্য যারা আল্লাহ তাআলাকে বেশি বেশি ভয় করে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর বিধি-বিধান পালনে এবং দুনিয়ার দায়িত্ব পালনে শুধুমাত্র তাকেই ভয় করার তাওফিক দান করুন। পরকালে তাঁর ঘোষিত জান্নাতের নিয়ামতসমূহ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
মিরাজ আলী ৩ মে, ২০১৯, ২:১৮ এএম says : 0
হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতি লোকেরা জান্নাতের খাবার পাবে এবং সেখানকার পানীয় পান করবে। কিন্তু সেখানে তাদের পায়খানার প্রশ্ন ওঠবে না, তাদের নাকে ময়লা জমবে না এবং তারা পেশাবও করবে না। ঢেকুরের মাধ্যমে তাদের খাদ্যবস্তু হজ হয়ে যাবে এবং তা থেকে কস্তুরির ন্যায় সুগন্ধি বেরিয়ে আসবে। তারা শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের মতোই সুবহানাল্লাহ; আলহামদুলিল্লাহ; এ ধরনের সব তাসবিহ ও তাকবির উচ্চারণ করতে থাকবে। (মুসলিম)
Total Reply(0)
Durul Huda ৩ মে, ২০১৯, ২:১৮ এএম says : 0
জান্নাতে যাওয়ার পথ ও প্রক্রিয়া মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছেন। আল্লাহ নিজেই তাঁর বান্দাদের জান্নাতের পথে ডেকেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ শান্তির ঘরের দিকে ডাকছেন।’ (সূরা ইউনুস, আয়াত : ২৫) জান্নাত অনন্ত সুখের শান্তি-সুনিবিড় আধার। প্রতিটি মুমিনের শেষ ঠিকানা জান্নাত। একজন ঈমানদারের জন্য আল্লাহর হুকুম পালন ও তার রাসূলের সুন্নত পালন অপরিহার্য।
Total Reply(0)
Khalid Saif ৩ মে, ২০১৯, ২:১৮ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের তাঁর ও রাসুল (সা.)- এর আনুগত্যের পাশাপাশি সর্বোতভাবে উত্তম কাজে ব্যস্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আল্লাহম্মা আমিন।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন