বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ঢাকা-সিলেট রেলপথে সরাসরি ট্রেন কেন নয়

দেশে আসার কথা শুনলেই প্রবাসী প্রজন্ম ‘নো’ বলে ট্রেন যোগাযোগ একেবারেই অবহেলিত : এসসিসিআই

ফয়সাল আমীন, সিলেট থেকে | প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

‘যখন মোদের ছিল কিছু, তখন সরাসরি ছিল ট্রেন, এখন কিছু নয়, মোদের সবই আছে নেই কেন ট্রেন’। এভাবে ঢাকা-সিলেট সরাসরি ট্রেন সার্ভিসের দাবির বিষয়ে মনের দীর্ঘ লুকায়িত ক্ষোভ ব্যক্ত করলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব। অথচ দেশের জনগণের মতো প্রবাসীদের সার্বিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব সম্প্রতি এমন ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রবাসীদের গুরুত্ব দিয়ে রেল ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ডিও লেটার দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টদের। তারপরও সরাসরি ট্রেন সার্ভিস দাবি পূরণ হচ্ছে না সিলেটবাসীর। এমন পরিস্থিতির মধ্যে সিলেট-ঢাকা-সিলেট না হলেও সরাসরি ঢাকা-রাজশাহী-ঢাকা রুটে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন ছুটে চলছে। ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা পথে সরাসরি ট্রেন সার্ভিস চালু শুধু ঘোষণার অপেক্ষায়।
কিন্তু সরাসরি সিলেট-ঢাকা-সিলেট ট্রেন সার্ভিসের গুরুত্ব থাকার পরও নির্লিপ্ত সংশ্লিষ্টরা। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশেষ করে রেলপথ যুগোপযোগিসহ প্রবাসী বান্ধব না হওয়ায় চরম হতাশায় ভুগছেন সিলেটের প্রবাসীরা। প্রবাসী প্রজন্ম দেশে আসার কথা শুনলেই এক কথায় নো বলে উড়িয়ে দেয় অভিভাবকদের।
সম্প্রতি ঢাকা-সিলেট পথে সিলেট-আখাউড়া রেলপথ আধুনিকায়নের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। একনেক সভায় ১৬ হাজার ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকা-সিলেট পথের সময় প্রায় আড়াই ঘন্টা কমবে। মিটারগেজ থেকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরিত হচ্ছে রেলপথটি। অথচ আড়াই বছর আগে ডাবল লাইনে সিলেট-আখাউড়া রূপান্তর করার উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এ স্বত্তে¡ও ডাবল লাইন হচ্ছে না সিলেট-আখাউড়া রেলপথ।
গত ১৭ জানুয়ারি সিলেট-১ আসনের এমপি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেল ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে ডিও লেটার প্রদান করেন রেলমন্ত্রী বরাবরে। ডিও লেটারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, সিলেট বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক, প্রবাসীসমৃদ্ধ ও অন্যতম পর্যটন জনপদ। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর সংখ্যক দর্শনার্থী এবং পেশাজীবী এ অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রেল খাতের উন্নয়নে ৪ দফা সুপারিশ করে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবিও জানান তিনি।
সিলেট-ঢাকা পথে রেলের ইতিহাস বলে, ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর তৎকালীন এরশাদ সরকার আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস নামে বিরতিহীন ট্রেন চালু করেছিলেন। ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও ট্রেনটি আর সরাসরি থাকেনি। প্রথম দিকে আখাউড়া জংশনে ৪০ মিনিট সময় ব্যয় হতো ট্রেনের ইঞ্জিন বদলে। ঢাকা থেকে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে যাত্রা করে বেলা ১টা ৪৫ মিনিটে সিলেট স্টেশনে পৌঁছাত। সিলেট থেকে বিকাল ৩টায় ছেড়ে গন্তব্য কমলাপুর স্টেশনে রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে প্রবেশ করত। কিন্তু চালুর মাত্র ৬ মাস পর ঢাকা-সিলেট রুটে পারাবতের বিরতিহীন রূপ পাল্টে যায়। বহুমুখী তদবির ও রাজনৈতিক চাপে ট্রেনটি ঢাকা-সিলেট পথে সরাসরি চলাচল বাধাগ্রস্থ হয়ে উঠে।
বর্তমানে ঢাকা-সিলেট পথে অন্তত ১০টি লোকাল স্টেশনে থেমে থেমে সিলেট পৌঁছে পারাবত এক্সপ্রেস। সে কারণে গতিসীমাও অপ্রত্যাশিতভাবে গতিহীন করে চালানো হয়। এছাড়া ঢাকা-সিলেটে পথে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন চালু রয়েছে। এ ট্রেনগুলোর একটিও সরাসরি চলাচল করে না এবং মান ও গতি যাত্রীবান্ধবহীন, যাচ্ছে তাই।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার কাজী শহিদুর রহমান বলেন, চাহিদার বিপরীতে ট্রেনের সংখ্যা ও মান প্রত্যাশিত নয়। সিলেটের বাস্তব চিত্রে মনে করছি সরাসরি ট্রেন সার্ভিসসহ সিলেট-ঢাকা পথে উন্নত পরিবেশ ও আন্তর্জাতিক মানের ট্রেন সার্র্ভিস জরুরি। রেল পথের ব্যাপক উন্নয়নে প্রবাসী সিলেটিদের সম্পৃক্ত করতে পারলে আশাতীত বিপ্লব ঘটতে পারে। সে কারণে সংসদে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সোচ্চার ভ‚মিকা দরকার।
সিলেট চেম্বার এন্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের (এসসিসিআই) সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ বলেন, চরম অবহেলিত ঢাকা-সিলেট যোগাযোগ বিশেষ করে ট্রেন ব্যবস্থা। সিলেট-চট্টগাম ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুক‚ল না হওয়ায়, শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম মাসে দুইবারের পরিবর্তে একবার হচ্ছে। যা চা শিল্প তথা-অর্থনীতির জন্য খারাপ সংবাদ। দেশে উন্নয়নের মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে। সে রকমভাবে ট্রেনের সাথে বিমানবন্দরগুলো সম্পর্কিত করে নিলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হতো। আমাদের প্রবাসী প্রজন্মও দেশমুখী হতে আগ্রহী হতো। তাই সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলে জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
SHAMEEM ৫ মে, ২০১৯, ২:০০ এএম says : 0
আমি মনে করি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সিলেট-ঢাকা সরাসরি ট্রেন চালু করা জরুরি।
Total Reply(0)
মিরাজ মাহাদী ৫ মে, ২০১৯, ২:০০ এএম says : 0
অত্যন্ত যৌক্তিক দাবি।
Total Reply(0)
গালিব ৫ মে, ২০১৯, ২:০১ এএম says : 0
আমরা সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে জোরালো দাবি- যত দ্রুত সম্ভব ঢাকা-সিলেট সরাসরি ট্রেন চালুকরা হোক।
Total Reply(0)
মাহমুদুল হাসান রাশদী ৫ মে, ২০১৯, ২:০১ এএম says : 0
সবার আগে ঢাকা-সিলেট সরাসরি ট্রেন চালু করতে হতো।
Total Reply(0)
সাব্বির আহমেদ চৌধুরী ২৮ জুলাই, ২০১৯, ৫:৩২ পিএম says : 0
সিলেট চট্টগ্রাম লাইনের পাহাড়িকা এক্সপ্রেস হাজার 986 সনে চালু হয়েছিল এরপরে আর একটি ট্রেনে সিলেট চট্টগ্রাম লাইনে দেওয়া হয় নাই অথচ বাংলাদেশের পর্যটন নগরী বলতে সিলেট এবং চট্টগ্রাম কি বুঝায়। সিলেট চট্টগ্রাম রুটে আরও একটা নতুন ফ্রেন্ড দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করতেছি। এই রুটে প্রচুর যাত্রী হয় তাই বর্তমান পাহাড়িকা রেখে আরো একটি নতুন ট্রেন কম stoppage দিয়ে চালু করার আহ্বান জানাচ্ছি।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন