শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচাতে দরকার গবেষণামুখী নীতিমালা

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাঁচাতে গণতান্ত্রিক ও শিক্ষা-গবেষণামুখী নীতিমালা দরকার বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। গতকাল শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ অভিমত ব্যক্ত করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর আনু মুহাম্মদ। বর্তমানে দেশে শিক্ষকতার মান, শিক্ষার্থীদের সুযোগ ও গবেষণার মতো বিষয়গুলো বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা বা গবেষণার চেয়ে সরকারদলীয় আনুগত্যই প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসময় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করার অভিমত ব্যক্ত করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক মূলত বাম ধারার, স্বাধীন ও বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বেয়ে গঠিত একটি সংগঠন। তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়ন-বৈষম্যের বিরুদ্ধে ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন বলে দাবি করে থাকেন। সংবাদ সম্মেলনে গত ১১ ও ১২ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ‘কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই: উচ্চশিক্ষা, নীতিমালা, কাঠামো’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী শিক্ষক কনভেনশনে শিক্ষক প্রতিনিধিদের পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর গীতিআরা নাসরীন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, অর্থনীতি বিভাগের এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর রুশাদ ফরিদী, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক কাজী মারুফ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সাঈদ ফেরদৌস উপস্থিত ছিলেন।

প্রফেসর আনু মুহাম্মদ বলেন, শিক্ষা ও গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা আমরা প্রায়শই বলে থাকি। এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শত-হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কথা শোনা যাচ্ছে। এই বরাদ্দের প্রধান বৈশিষ্ট্য নির্মাণ ও কেনাকাটা। বরাদ্দটা আদৌ শিক্ষার জন্য উপযুক্ত কি না বা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় কি না, তার কোনো রকম বালাই না রেখে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক নির্মাণ ও কেনাকাটার বরাদ্দ এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত দুর্নীতি, অপচয়, টেন্ডার-বাণিজ্য চলছে। শিক্ষা-গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি না করে এ ধরনের বরাদ্দ বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি দূষিত আবহাওয়া তৈরি করা হয়েছে।

তিনি দাবি করেন, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়কে ভয় পায়। সরকার মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে চিন্তা ও জ্ঞান তৈরি হয়, তাকে যদি নিয়ন্ত্রণ করে কর্তৃত্বের মধ্যে রাখা না যায়, সেই চিন্তা ও জ্ঞান তাদের পক্ষে না-ও যেতে পারে। এ কারণেই সব সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ন্ত্রণের একটি প্রবণতা দেখা যায়। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে ভিসিদের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা হয়, সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনকে একচেটিয়া ক্ষমতা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক কনভেনশনে পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনায় উঠে আসা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি সংকটের কথা তুলে ধরেন ঢাবি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর সামিনা লুৎফা। সংকটগুলো হলো সরকারি কর্তৃত্ব, নয়া উদারবাদী নীতি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কৌশলপত্র, স্বায়ত্তশাসনের অপব্যবহার, শিক্ষায় বরাদ্দ ও গবেষণা, অস্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়, নিয়োগ ও ভর্তি, শিক্ষার্থীদের আবাসন ও ছাত্ররাজনীতি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।’ ৭৩-এর অধ্যাদেশের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সব বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় একটি গণতান্ত্রিক ও জ্ঞানমুখী পরিচালনা নীতিমালা প্রবর্তনের পক্ষে সংগঠনটি অবস্থান ব্যক্ত করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট মোকাবেলায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে ছয় দফা সমাধান প্রস্তাব উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হক। শিক্ষা খাতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক বিনিয়োগ, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের নীতি থেকে সরে এসে বছর বছর শিক্ষার্থীদের বেতন বৃদ্ধি বন্ধ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা বিভাজন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পূর্ণকালীন শিক্ষক বাড়ানো ও রাষ্ট্রের মনোযোগ বৃদ্ধি, দলীয় ও আঞ্চলিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ ও ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন