আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ক্ষমা ও পুরস্কারপ্রাপ্তির মহিমান্বিত মুহূর্তগুলো আমাদের জীবনে বারবার ঘুরেফিরে আসে। রমজান হলো কল্যাণ ও বরকতের বসন্তকাল। এই মহিমান্বিত রমজানের উপকারিতা ও বরকত পরিপূর্ণরূপে লাভ করার জন্য এ মাসের করণীয় কাজগুলো মহব্বতের সাথে আঞ্জাম দেওয়া এবং বর্জনীয় বিষয়গুলো থেকে সতর্কভাবে বিরত থাকা জরুরি। কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে এ মাসের করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হচ্ছে।
এক. রোযা রাখা
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।-সূরা বাকারা (০২) : ১৮৩
হযরত আবু হুরায়রা রাদি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন তোমরা রমজানের চাঁদ দেখবে তখন রোযা রাখবে। যখন শাওয়ালের চাঁদ দেখবে তখন থেকে রোযা বন্ধ করবে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে ত্রিশ দিন রোযা রাখবে।-সহীহ বুখারী : ১৯০৯
অপর এক হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, রোযা আমার জন্য, আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো।... কেয়ামতের দিন রোযাদারদের জন্য একটি বিশেষ হাউজ থাকবে, যেখানে রোযাদার ব্যতীত অন্য কারও আগমন ঘটবে না।-মুসনাদে বায্যার : ৮১১৫
রমজানের রোযা প্রত্যেক সুস্থ, মুকীম প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং হায়েয-নেফাসমুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক নারীর ওপর ফরজ। শরয়ী ওযর ছাড়া এ মাসের একটি রোযাও কোনো মুসলমান ইচ্ছাকৃতভাবে না রাখলে জঘন্য অপরাধী সাব্যস্ত হবে। দীনের মৌলিক বিধান লঙ্ঘনকারী ও ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারী হিসাবে গণ্য হবে এবং কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হবে।
হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবু উসামা রাদি. বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে দেখলাম আমার কাছে দুই ব্যক্তি আগমন করেছে। তারা আমার বাহুদ্বয় ধরে এক দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে গেল। আমাকে বলল, আপনি পাহাড়ে উঠুন।
আমি বললাম, আমি তো উঠতে পারব না।
তারা বলল, আমরা আপনাকে উপরে ওঠা সহজ করে দেবো।
আমি উপরে উঠলাম। যখন পাহাড়ের সমতলে পৌঁছলাম, হঠাৎ ভয়ঙ্কর আওয়াজ শুনতে পেলাম। বললাম, এসব কিসের আওয়াজ?
তারা বলল, এটা জাহান্নামীদের আর্তনাদ।
তারপর আমাকে নিয়ে এগিয়ে চলল। হঠাৎ কিছু লোক দেখতে পেলাম, যাদেরকে তাদের পায়ের মাংসপেশি দ্বারা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের মুখের দুই প্রান্ত ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে এবং তা থেকে রক্ত ঝরছে।
আমি বললাম, এরা কারা?
তারা বলল, যারা ইফতারের সময় হওয়ার আগেই রোযা ভেঙে ফেলে।-মুসতাদরাকে হাকেম : ১, হাদীস নং : ১৬০০
দুই. তারাবীহ নামাজ পড়া
বরকতময় মাহে রমজানের দিন-রাত উভয়টিই মূলত ইবাদতের জন্য। দিনের ইবাদত হলো রোযা যা শরীয়তে ফরজ, আর রাতের ইবাদত হলো তারাবীহ নামাজ যা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। এ আমল ফরজ না হলেও এর ফযীলত ও মর্যাদা অনেক। হযরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ ঈমান ও বিশ্বাসের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে তারাবীহ আদায় করে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।-সহীহ বুখারী : ২০০৯
হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রাদি. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর রমজানের রোযা ফরজ করেছেন। আর আমি কিয়ামুল লাইল তথা তারাবীহ সুন্নত করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রোযা ও তারাবীহ আদায় করবে সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে যেদিন সে মাতৃগর্ভ থেকে সদ্য ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। (মুসনাদে আহমদ : ১৬৬০) রমজানের পূর্ণ কল্যাণ ও বরকত লাভ করতে হলে তারাবীর ব্যাপারে অবশ্যই যত্মবান হতে হবে।
তিন. কোরআন তেলাওয়াত করা
রোযা এবং রমজানের সঙ্গে কোরআনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এ জন্যই রমজানে কোরআন নাযিল হয়েছে এবং এ জন্যই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মুবারাকে কোরআন তেলাওয়াতের খুব গুরুত্ব দিতেন। এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদি. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সবচেয়ে বেশি দানশীল ও বদান্য, রমজানে তাঁর দানশীলতা ও বদান্যতা অনেক বেড়ে যেত। প্রত্যেক রমজানে জিবরাঈল আ. তাঁর সঙ্গে মিলিত হতেন এবং পুরো কোরআন একে অপরকে শোনাতেন।-সহীহ বুখারী : ০৬
মূলত এই সুন্নতের ভিত্তিতেই তারাবীর মাধ্যমে মুসলমানরা সারা রমজানে একবার পুরো কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করে এবং শোনে। নামাজের বাইরেও নিজেরা কোরআন খতম করে। যারা রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াতে ব্যস্ত থাকে তাদের ব্যাপারে সুসংবাদ এসেছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদি. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রোযা এবং কোরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, হে রব, আমি তাকে খাদ্য এবং যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি, অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি (অর্থাৎ না ঘুমিয়ে সে তেলাওয়াত করেছে) অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।-মুসনাদে আহমাদ : ৬৬২৬
চার. সাহরী খাওয়া
রোযার প্রস্তুতির জন্য যে আহার করা হয় তার নাম সাহরী। সাহরী খাওয়া সুন্নত। পেট ভরে খাওয়া জরুরি নয়, এক ঢোক পানি
পান করলেও সাহরীর সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা সাহরী খাও। কেননা, সাহরীতে বরকত রয়েছে।-সহীহ মুসলিম : ১০৯৫
অন্য হাদীসে এসেছে, সাহরী খাওয়া বরকতপূর্ণ কাজ। সুতরাং তা ছেড়ে দিয়ো না। যদিও তা এক ঢোক পানি দিয়ে হোক না কেন। কেননা, যারা সাহরী খায় আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ তাদের জন্য রহমতের দুআ করেন।-মুসনাদে আহমাদ : ১০৭০২
সুবহে সাদেকের কাছাকাছি সময়ে সাহরী খাওয়া মুস্তাহাব। তবে এত দেরি করা মাকরূহ- যে সুবহে সাদেক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয়।
পাঁচ. ইফতার করা
সারা দিন রোযা রাখার পর সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে যে আহার করা হয় তার নাম ইফতার। এটা শরীয়তে অনেক বড় একটি আমল। এ আনন্দপূূর্ণ আমলের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে বড় পুরস্কার। ইফতার যেহেতু অনেক বরকতের তাই এই বরকতপূর্ণ আমল শুরু করতে বিলম্ব করতে নিষেধ করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, লোকেরা যতদিন প্রথম সময়ে ইফতার করার বিষয়ে যতœবান হবে ততদিন তারা কল্যাণের পথে থাকবে।-সহীহ বুখারী : ১৯৫৭
ইফতার খেজুর দ্বারা করা মুস্তাহাব। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার করবে। হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদি. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের নামাজ পড়ার আগে তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে শুকনা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। আর তাও না পেলে এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন।-জামে তিরমিযী : ৬৯২
সাহরী ও ইফতার তখনই বরকতপূর্ণ হবে যখন এ ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি পরিহার করে পূর্ণ সংযম রক্ষা করা হবে। কিন্তু আমাদের রমজান ও সাহরী-ইফতারের অবস্থা কী একটু চিন্তা করে দেখি!
পানাহারের সংযমের মাসে, উপবাসের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাসে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য আগুনের মত দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠার কারণ কী? আমাদের সমাজে ইফতার কেন পার্টিতে রূপান্তরিত হলো?
এখন ইফতারের সমস্ত নূর থেকে বঞ্চিত হয়, কারণ যে ইফতার ছিল আল্লাহর নবীর একটি প্রিয় সুন্নত তা আজ হয়ে পড়েছে ভোজ-অনুষ্ঠান। যেন সারা দিনের উপবাসের মূল্য এখন কড়ায়গন্ডায় উসুল করে নিতে হবে।
স্ত্রী লোকদের অবস্থা আরও করুণ। প্রত্যেক পরিবারে স্ত্রী লোকদের আছর থেকে মাগরিব পুরো সময়টুকু চলে যায় ইফতারের আয়োজনে। এমন কি ইফতারের পূর্বে যে দুআ কবুলের সময় তখন একটু একাগ্রচিত্তে দুআ করারও তাদের অবসর হয় না। অবশ্য যে স্ত্রীলোক পুরুষের পক্ষ থেকে চাপের কারণে এটা করে তার দায় পুরুষকেই বহন করতে হবে। আর স্ত্রীলোকেরা যদি (অপারগতার কারণে) রান্না ঘরেই তাদের মাওলাকে মনে মনে ডেকে নেয় তিনি তাদের ডাকে ইনশাআল্লাহ সাড়া দেবেন।-ইসলামকে জানতে হলে : ১৫৭-১৫৮
ছয়. রোযাদারকে ইফতার করানো
হযরত যায়েদ ইবনে খালেদ রাদি. থেকে বর্র্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে তার (রোযাদারের) অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে। তবে রোযাদারের প্রতিদান থেকে বিন্দুমাত্রও হ্রাস করা হবে না।-সুনানে তিরমিযী : ৮০৭
সাত. তাওবা-ইস্তিগফার করা
আল্লাহ তাআলা এ মাসে অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দান করেন। যেমন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ এ মাসের প্রতিরাতে অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দান করেন।-মুসনাদে আহমাদ : ১৮৭৯৪
সুতরাং আমাদের কর্তব্য তাওবা-ইস্তিগফার করা। কেননা, যে ক্ষমা চায় তাওবা করে তাকেই আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। অন্য কাউকে নয়।
আট. দুআ করা
রোযার মাধ্যমে মুমিন বান্দা আল্লাহর এতই নৈকট্য অর্জন করে যে, যতক্ষণ সে রোযা অবস্থায় অথবা রোযার প্রস্তুতির অবস্থায় থাকে (অর্থাৎ রাত-দিন) ততক্ষণ তার কোনো দুআ ফেরত দেওয়া হয় না, সমস্ত দুআ কবুল করা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, প্রত্যেক মুসলিম (রমজানে) যে দুআ করে তা কবুল করা হয়।-মুসনাদে বায্যার : ৩১৪১
এ মাস দুআ কবুলের মাস। তাই আমাদের উচিত বেশি বেশি দুআ করা।
নয়. ইফতারের আগ মুহূর্তে দুআ করা
ইফতারের সময় দুআ কবুল হয়। আব্দুল্লাহ ইবনে মুলাইকা বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদি. থেকে শুনেছি তিনি বলছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ইফতারের সময় রোযাদারের একটি দুআ কবুল করা হয়।
আব্দুল্লাহ ইবনে মুলাইকা বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমরকে ইফতারের সময় এ দুআ করতে শুনেছি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বি রাহমাতিকা আল্লাতি ওসিআত কুল্লা শায়ইন আন তাগফিরলি’। অর্থাৎ, হে আল্লাহ, আমি তোমার দরবারে সেই রহমতের উসিলায় আবেদন করছি যা সকল বস্তুকে বেষ্টন করে রেখেছে, তুমি আমাকে মাফ করে দাও। (মুসতাদরাকে হাকেম : ১/৫২৯, হাদীস নং : ১৫৬৭) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতারের সময় আল্লাহর কাছে এ দুআ করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং : ১৭৫৩)
বর্জনীয়
কোরআন-সুন্নাহ ও আসারে সাহাবার (সাহাবায়ে কেরামের বাণী) আলোকে রমজানের করণীয় উল্লেখ করা হলো। এখন বর্জনীয় বিষয়গুলো আমরা জেনে নেব। গোনাহ থেকে সর্বাবস্থায় বেঁচে থাকতে হবে। তবে রোযার অবস্থায় তা আরও বেশি জরুরি। কারণ, গোনাহের কারণে রোযার ফলাফল বরবাদ হয়ে যায়। রোযার ফরজ আদায় হয়ে যায় কিন্তু রোযার নূর ও রুহানিয়াত একেবারে বরবাদ হয়ে যায়। নিম্নে কিছু গোনাহের বিবরণ তুলে ধরা হচ্ছে যেগুলোর আলোচনা হাদীস শরীফে এসেছে।
এক.
অশ্লীল কথা না বলা এবং শোরগোল না করা
রোযা অবস্থায় অশ্লীল কথাবার্তা, শোরগোল ও ঝগড়া-ফ্যাসাদ থেকে বিরত থাকা জরুরি। হাদীস শরীফে এসেছে, তোমাদের কেউ যখন রোযা অবস্থায় থাকে তখন যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং শোরগোল না করে। আর কেউ যদি তার সঙ্গে ঝগড়া করে, গালি দেয়, তা হলে সে যেন শুধু বলে দেয়, আমি তো রোযাদার। (অর্থাৎ তোমার সাথে বিবাদ করার এবং গালির জবাব দেওয়ার সুযোগ আমার নেই।)-সহীহ বুখারী : ১৯০৪
অপর এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কত রোযাদার এমন আছে, (রোযা অবস্থায় অশ্লীল কথা ও কর্ম থেকে বিরত না থাকার ফলে) ক্ষুধা ও পিপাসা ছাড়া রোযা থেকে সে আর কিছু লাভ করতে পারে না। তদ্রƒপ অনেক রাত জাগরণকারী এমন আছে যে তার রাত্রিজাগরণ থেকে জেগে থাকার কষ্ট ছাড়া আর কিছু পায় না।-সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৬৯০
দুই.
মিথ্যা কথা না বলা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেছেন, যে রোযা রেখেছে অথচ মিথ্যাচার পরিহার করেনি, তার এই কৃত্রিম পানাহার বর্জনের কোনো প্রয়োজন আল্লাহর নেই।-সহীহ বুখারী : ১৯০৩
তিন.
অনর্থক কথা বা কাজ না করা
হযরত আবু হুরায়রা রাদি. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রোযা শুধু পানাহার বর্জন করার নাম নয়; বরং রোযা হলো অনর্থক কথা ও কাজ এবং অশ্লীল কথা বর্জন করা।-মুসতাদরাকে হাকেম : ১/৫৩৯, হাদীস নং : ১৬০২
চার.
গীবত না করা
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে দুজন মহিলা উপস্থিত হয়ে (দরজার বাইরে থেকে) অভিযোগ করল, রোযার কারণে তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। পিপাসার কারণে প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়। এ অবস্থা শুনে তিনি লোকমারফতে তাদের বমি করার আদেশ দিলেন। দেখা গেল, গোশতের টুকরা ও তাজা রক্ত বের হচ্ছে।
সাহাবায়ে কেরাম রাদি. অবাক হলেন। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরা হালাল খাদ্য দ্বারা সাহরী করে রোযা রেখেছে, কিন্তু রোযা অবস্থায় হারাম খেয়েছে। অর্থাৎ মানুষের গীবত করেছে। আর গীবত করার অর্থ হলো মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া।-মুসনাদে আহমাদ : ২৩৬৫৩
এ হাদীস দ্বারা বোঝা যায়, গীবত ও অন্যান্য গোনাহ দ্বারা রোযার কষ্ট অনেক বেড়ে যায়। এ কারণেই দেখা যায় আল্লাহর নেক বান্দারা রোযার তেমন কোনো কষ্ট অনুভব করেন না; বরং তারা অনেক আত্মিক, এমনকি দৈহিক শান্তি লাভ করে থাকেন। পক্ষান্তরে যারা গীবত করে এবং বিভিন্ন গোনাহে লিপ্ত থাকে তারা রোযার কারণে বেশ কাহিল হয়ে পড়ে। ফলে বিভিন্ন বাহানা করে রোযা থেকে রেহাই পেতে চায়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টি মোতাবেক রমজান কাটানোর তাওফীক দান করুন। আমীন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন