শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

রোজা শুকরগোজারির প্রশিক্ষণ-২

মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

যা যা থেকে বিরত থাকার দ্বারা রোযা হয় তা অতি বড় নিয়ামত। খাদ্য যে কত বড় নিয়ামত তা কে না বোঝে? বরং নিয়ামত বললে প্রথম নজরটাই খাদ্যের দিকে যায়, যেহেতু এর দ্বারা প্রাণ রক্ষা হয়। আর পানির অপর নামই তো জীবন। তৃতীয় জিনিস স্ত্রী নিবিড়তা হলো জীবনাগম ও জীবন বিস্তারের উপায়। সুতরাং এটাও অনেক বড় নিয়ামত।
কিন্তু এসব নিয়ামত সহজলভ্য ও অনায়াসভোগ্য হওয়ায় এর উপলব্ধি খুব জাগন্ত নয়। তাই কম মানুষই এর জন্য শুকর আদায় করে। আর করলেও শুকরের ভাষাগত উচ্চারণকেই অধিকাংশ লোক যথেষ্ট মনে করে। ঠিক প্রাণ দিয়ে অনুভব করে না দয়াময়ের কী মূল্যবান দান সে সতত ভোগ করে যাচ্ছে! বস্তুত রোযা সেই অনুভব সৃষ্টির অতি উত্তম ব্যবস্থা।
রোযা রাখার দ্বারাই উপলব্ধি করা যায় খাদ্য-পানি কত দরকারি জিনিস। পেটে ক্ষুধা, বুকে তৃষ্ণা, অথচ পানাহার দ্বারা তা নিবারণ করা যাচ্ছে না। দীর্ঘ সময় এ কষ্ট বরদাশত করতে হচ্ছে আর ক্রমেই কষ্ট তীব্রতর হচ্ছে। অন্য সময় হলে তো ক্ষুৎপিপসা আঁচ করামাত্র তা নিবারণের চেষ্টা করা হতো, কিন্তু এ সময় প্রবৃত্তির যতই চাহিদা হোক এবং শারীরিক যত কষ্টই হোক পানাহার বারণ। ফলে বান্দা চাহিদা দমন করে কষ্ট সয়েই যায়। এভাবেই সময় বয়ে যেতে থাকে।
পরিশেষে সূর্যাস্তকালে যখন ইফতার সামগ্রী নিয়ে বসা হয় তখন দিনমানের দমিত সেই চাহিদার উচ্ছ¡সিত স্ফূরণে অকিঞ্চিতকর খাবারও অমৃতসম মনে হয়। তখন সামনে যা-ই থাকে, পরম সমাদরে তা গ্রহণ করা হয়। এক পেয়ালা পানিতে হৃদয়-মন জুড়িয়ে যায়। রুখা শিরা-উপশিরায় প্রাণরস সিঞ্চিত হয় আর অনাহারক্লিষ্ট শরীর শক্তি-সজীবতা ফিরে পায়। অকস্মাৎ খুলে যায় চেতনার দ্বার। অনুভব-উপলব্ধির উন্মেষে তখন বুঝে আসে পানির কদর আর খাদ্যের মূল্য।
এ ছাড়া যে জীবন বাঁচে না, এর সাময়িক অভাবেও যে দেহমন চলৎশক্তি হারায়, সে সত্য তখন হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়। তা দেহকে সচল রাখা ও জীবনকে রক্ষা করার এই অমূল্য অবলম্বন আল্লাহরই তো দান! কত দয়াময় মহান আল্লাহ, যিনি আমাদের জীবন রক্ষার ও আমাদের দেহমনে শক্তি যোগানোর জন্য কত অফুরান নিয়ামত বিশ্ব চরাচরে ছড়িয়ে দিয়েছেন! হররোজ-হরদম আমরা কত সহজে-সাচ্ছন্দ্যে তা ভোগ করে যাচ্ছি! কতটা আনন্দ, কতটা তৃপ্তি, কতটা সুখ-সুধায় আপ্লুত এ জীবন।
সুতরাং শুকর আল্লাহর! অশেষ শুকর তাঁর। শুকর এত সব নিয়ামত দানের জন্য। শুকর এ নিয়ামতের উপলব্ধি দানের জন্য এবং শুকর তাঁর শুকরগোজারির প্রশিক্ষণ দানের জন্য। রোযা আমাদের অন্তরে এ উপলব্ধিকে উজার করারই এক উপযুক্ত প্রশিক্ষণ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
রাফি বিন মুনির ৭ মে, ২০১৯, ২:০৬ এএম says : 0
সারা বিশ্বের মুসলিমদের জন্য সিয়াম সাধনার পবিত্র মাস রমজান। ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা তিন নম্বর। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক নিজের সঙ্গে রোজার সম্পর্কের কথা ঘোষণা করেছেন। সব ইবাদত-বন্দেগি থেকে রোজাকে আলাদা মর্যাদাও দিয়েছেন।
Total Reply(0)
হাসিবুল ইসলাম ৭ মে, ২০১৯, ২:০৬ এএম says : 0
রমজান ধৈর্য্যের মাস। আর ধৈর্য্যের সওয়াব হলো বেহেশত। এটা সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। এটা সেই মাস যে মাসে মুমিন বান্দার রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ মাসে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তা তার জন্য গুনাহ মাফের এবং দোযখের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে।
Total Reply(0)
মাহমুদুল হাসান রাশদী ৭ মে, ২০১৯, ২:০৭ এএম says : 0
রোজা শুধু আল্লাহর জন্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজের সঙ্গে রোজার সম্পর্ক ঘোষণা করেছেন। এমনিভাবে তিনি সব ইবাদত-বন্দেগি থেকে রোজাকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছেন।
Total Reply(0)
স্বদেশ আমার ৭ মে, ২০১৯, ২:০৭ এএম says : 0
নবী (সা.) এর প্রিয় সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী, মুসলিম)
Total Reply(0)
কাবিল ৭ মে, ২০১৯, ২:০৮ এএম says : 0
ইফতারে বিলম্ব না করা সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে রাতের আগমন ঘটে ও ইফতার করার সময় হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'মানুষ যত দিন সময় হওয়া মাত্র ইফতার করবে, তত দিন কল্যাণের সঙ্গে থাকবে। ' (বুখারি-২৮৫২)
Total Reply(0)
মোহাম্মাদ নাজমুল ইসলাম ৭ মে, ২০১৯, ২:০৮ এএম says : 0
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজানের ফজিলত জেনে বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন