তারাবি ২০ রাকাত সুন্নাত তা ১. হজরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল ২. খোলাফায়ে রাশেদীনের আদেশ ৩. ইজমায়ে সাহাবা ৪. ইজমায়ে উম্মত ৫. ইমামদের ঐকমত্য ৬. উম্মতের সম্মিলিত অবিচ্ছিন্ন কর্মধারা তথা ধারাবাহিক আমল দ্বারা প্রমাণিত ৭. ইমাম বুখারি (রহ.) তারাবি ২০ রাকাত পড়তেন ৮. মক্কা ও মদিনা শরিফে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত তারাবি ২০ রাকাত হয়ে আসছে। এগুলো সবই শরিয়তের দলিল। নিচে প্রতিটি সংক্ষেপে উদ্ধৃত করা হলো- ১. তারাবি ২০ রাকাত সুন্নাত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল দ্বারা প্রমাণিত : হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানে ২০ রাকাত (তারাবি) ও বিতর পড়তেন। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ২২৫, হাদিস নম্বর ৭৭৭৪। ২. ২০ রাকাত তারাবি পড়া সুন্নাত। খোলাফায়ে রাশেদীন হজরত ওমর ও আলী (রা.)-এর আদেশ দ্বারাও প্রমাণিত তারা ২০ রাকাত তারাবি পড়ার আদেশ করতেন। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ২২৩, হাদিস নম্বর ৭৭৬৩, ৭৭৬৪, হাদিসটি হাসান। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে তাঁর সুন্নাত আঁকড়ে ধরার কথা বলেছেন, এভাবে খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকেও আঁকড়ে ধরার আদেশ দিয়েছেন। মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নম্বর ১৭১৪৪, তিরমিজি, হাদিস নম্বর ২৬৭৬, ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি সহি। ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, এটা হজরত ওমর (রা.) নিজের পক্ষ থেকে করেননি। এ ব্যাপারে তিনি নতুন কিছু উদ্ভাবনকারীও ছিলেন না। তাঁর কাছে এর কোনো ভিত্তি না থাকলে এবং রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত কোনো কিছু জানা না থাকলে তিনি ২০ রাকাতের আদেশ দিতেন না। ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকিন, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪১৭। ৩. ইজমায়ে সাহাবা দ্বারা প্রমাণিত, তারাবি ২০ রাকাত। হজরত ইয়াজিদ ইবনে রুমান (রা.) থেকে বর্ণিত, সাহাবায়ে কিরাম হজরত ওমর (রা.)-এর যুগে (২০ রাকাত তারাবি ও ৩ রাকাত বিতরসহ মোট) ২৩ রাকাত পড়তেন। মুয়াত্তা ইমাম মালিক (রহ.), পৃষ্ঠা ৪০। হাদিসটি শক্তিশালী মুরসাল, আসারুস সুনান, পৃষ্ঠা ২৪৭, হাদিস নম্বর ৭৭৮, হজরত সায়েব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) থেকেও এভাবে বর্ণিত আছে। আসসুনানুল কোবরা, হাদিস নম্বর ৪৭২২, হাদিসটি সহি, আসারুস সুনান, পৃষ্ঠা ২৪৬। এ হাদিসগুলো প্রমাণ করে, ২০ রাকাত তারাবির ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরামের ইজমা ও ঐকমত্য ছিল। মিরকাতুল মাফাতিহ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৮২, কাশফুল কিনা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৯২। ৪. ইজমায়ে উম্মত তথা উম্মতের ঐকমত্য দ্বারাও প্রমাণিত তারাবি ২০ রাকাত। এ ব্যাপারে বড় বড় ইমামের বক্তব্য তুলে ধরা হলো- ক. ইমাম তিরমিজি (রহ.) বলেন, অধিকাংশ আহলে ইলম তারাবি ২০ রাকাত হওয়ার পক্ষে। সুনানে তিরমিজি, তাহতা হাদিস নম্বর ৮০৬। খ. ইবনে কোদামা বলেন, এটা ইজমা সমতুল্য, আলমুগনি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৮৩৫। গ. আল্লামা কাশতালানি বলেন, সবাই হজরত ওমর (রা.)-এর যুগে প্রতিষ্ঠিত ২০ রাকাত তারাবিকে ইজমার মতোই গণ্য করেন। ইরশাদুস সারি শরহে সহি বুখারি, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪২৬। ঘ. আল্লামা বাহুতি (রহ.) বলেন, এটা সাহাবায়ে কিরামের যুগেই প্রসিদ্ধি লাভ করে ইজমা হিসেবে পরিগণিত হয়। কাশফুল কিনা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৯২। অতএব, ২০ রাকাতের মতটি ভ্রান্ত হওয়া সম্ভব নয়, কেননা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ কখনো আমার উম্মতকে ভ্রান্তির ওপর একমত করবেন না। যারা এর বিপরীত মত গ্রহণ করবে তারা জাহান্নামে যাবে। তিরমিজি, হাদিস নম্বর ২১৬৭। সুতরাং কোনো বিষয়ে উম্মতের একমত হওয়ার অর্থই হলো হক এর মধ্যেই নিহিত। এর বিপরীত হবে ভ্রান্ত ও পরিত্যাজ্য। তাই যেহেতু ২০ রাকাত তারাবির ব্যাপারে উম্মতের ইজমা হয়ে গেছে, এর বিপরীত অন্য কোনো মত চাই তা ৮ রাকাত হোক আর যাই হোক গ্রহণযোগ্য নয়। উম্মতের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত শরিয়তের বড় দলিল। কোনো বিষয়ে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হলে তার ওপর আমল করা আবশ্যক হয়ে যায়। অতএব, ২০ রাকাত তারাবির ওপর আমল করাও আবশ্যক।
৫. ইমামদের ঐকমত্যও তারাবি ২০ রাকাতের ওপর। নিচে বড় বড় ইমামের মন্তব্য তুলে ধরা হলো- ক. হজরত ওমর, আলী ও সাহাবায়ে কিরাম থেকে যে ২০ রাকাত তারাবির কথা বর্ণিত আছে অধিকাংশ আহলে ইলমও এর ওপর একমত। ইমাম সাউরি, ইমাম ইবনুল মোবারক ও ইমাম শাফেয়িরও এ মত, এমনকি ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, আমি আমাদের শহর মক্কা মুকাররমায় ২০ রাকাত পড়তেই দেখেছি। সুনানে তিরমিজি, তাহতা হাদিস নম্বর ৮০৬। খ. ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ.), ইমাম মালিক (রহ.), ইমাম শাফেয়ি (রহ.) ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.)সহ অন্য প্রায় সব মুজতাহিদ ইমাম এমনকি অধিকাংশ সাহাবি, তাবেয়িন ও তাবেতাবেয়িনের আমলও ২০ রাকাতের ওপর ছিল। শরহুল মুহাজ্জাব, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩৮, আলমুগনি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৮৩৪, ৮৩৫। আরও দেখুন মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, হাদিস নম্বর ৭৭৬২-৭৭৭৪ পর্যন্ত। ৬. উম্মতের ধারাবাহিক আমল দ্বারাও ২০ রাকাত প্রমাণিত। শায়খ আতিয়াহ মুহাম্মাদ সালেম লেখেন, দীর্ঘ দেড় হাজার বছর ধরে অদ্যাবধি মক্কা মুকাররমা, মদিনা মুনাওয়ারাসহ পৃথিবীর সর্বত্র ২০ রাকাত তারাবি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। দেখুন আততারাবি আকসারা মিন আলফি আমিন ফি মাসজিদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, পৃষ্ঠা ৩৭-৪১। ৭. ইমাম বুখারি (রহ.) তারাবি ২০ রাকাত পড়তেন : মেকসাম বিন সাদ বলেন, ইমাম বুখারি (রহ.) রমজানের প্রথম রাতে তার ছাত্রদের একত্রিত করে তারাবি পড়তেন এবং প্রতি রাকাতে ২০ আয়াত পড়তেন। এভাবে কোরআন খতম করতেন। হাদউসসারি মোকাদ্দমা ফাতহুল বারি শরহে সহি বুখারি, পৃষ্ঠা ৬৬৭। বোঝার বিষয় প্রতি রাকাতে ২০ আয়াত পড়লে ২০ রাকাতে ২০ দ্ধ ২০ = ৪০০ আয়াত পড়া হবে। এভাবে ৩০ দিন পড়লে ৩০দ্ধ ৪০০ = ১২ হাজার আয়াত পড়া হবে। তার মানে কোরআনে যেহেতু ৬ হাজার থেকে কিছু বেশি আয়াত আছে, এ হিসাবে এক মাসে তার দুই খতম হতো। যদি ৮ রাকাত পড়তেন তাহলে ২০ দ্ধ ৮ = ১৬০ আয়াত। প্রতিদিন ১৬০ আয়াত পড়লে ৩০ দ্ধ ১৬০ = ৪৮০০, এভাবে তো এক খতমও হয় না। খতম পূর্ণ হতে আরও ১২০০ আয়াত থেকে যায়। অথচ বলা হচ্ছে, তিনি তারাবির মধ্যে কোরআন খতম করতেন। তাই প্রমাণিত হলো যে, ইমাম বুখারি (রহ.) তারাবি ২০ রাকাত পড়তেন। ৮. মক্কা মুকাররমা ও মদিনা মুনাওয়ারায়ও ইসলামের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ২০ রাকাত তারাবি হয়ে আসছে, যদি তারাবি ২০ রাকাত না হয়, তাহলে প্রায় দেড় হাজার বছর যাবৎ ইসলামের প্রাণকেন্দ্রে সুন্নাত পরিপন্থদ্ধ আমল হয়ে আসছে- এ কথা কোনো পাগল মেনে নেবে?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন