স্টাফ রিপোর্টার : ব্যাপক সহিংসতাসহ বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনী অনিয়মের কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সবচেয়ে মন্দ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত নির্বাচনী সহিংষতায় ১০১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং আহতের সংখ্যা আট হাজার ছাড়িয়েছে।
বৃহস্প্রতিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সুজন আয়োজিত ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০১৬: রক্ষক্ষয়ের রেকর্ড’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এ মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ইউপি নির্বাচন চরমভাবে পক্ষপাত দোষে দুষ্ট। এ নির্বাচনে অনিয়ম, রক্তারক্তি ও কারচুপির যে রেকর্ড হয়েছে তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, নির্বাচনে অনিয়ম ও ভায়াবহ সহিংসতার ঘটনা এখন গা-সওয়া হয়ে গেছে। এ অবস্থা কোনো শুভ ফল বয়ে আনবে না। যারা চোখে দেখে না, কানে শুনে না বা ইচ্ছা করে দেখতে চায় না বা শুনতে চায় না তারাই শুধু নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কথা বলে।
কলামিষ্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে শহীদি নির্বাচন উল্লেখ করে বলেন, আমার জীবনে কোন নির্বাচনে এত মানুষের প্রাণহানি হয়নি। ১৯৫২সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে মানুষ মারা গেছে চার জন আর এবার ইউপি নির্বাচনেই মানুষ মারাগেছে ১০০ জনের বেশি। তাই আমি বলবো এবারের নির্বাচন হলো শহীদি নির্বাচন। এই নির্বাচন কমিশন অন্তত আর কিছু করতে পারুক বা না পারুক যারা মারা গিয়েছেন তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করতে পারেন। যদিও এতগুলো মানুষ মারা যাওয়া কোনো খেলা কিংবা তামাশার বিষয় নয়।
তিনি বলেন, নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য আগে হতে শুনিনি। শুনেছি রমজানে ছোলা বাণিজ্য হয়। এখন দেখছি ছোলার মত মনোনয়ন ও ভোট ছোলার মত বেঁচা কেনা হয়।
তিনি বলেন, মনোনয়ন বাণিজ্যের মনোভাব পরিহার করে রাজনৈতিক দলগুলো সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থী মনোনয়ন দিলে নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
আবুল মকসুদ বলেন, নির্বাচনী সহিংসতায় ১০০ জনের বেশি লোক মারা গেছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তা স্বীকার না না করে মনে করছে, এরা স্বাভাবিকভাবে মারা গেছেন। নির্বাচন কমিশন যদি নীরব না থাকত তাহলে ১০০ জন মানুষ মারা যেত না।
লিখিত বক্তব্যে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, এর আগে ১৯৮৮ সালের নির্বাচন সবচেয়ে বেশি সহিংসতাপূর্ণ ও প্রাণঘাতী ছিল। ওই নির্বাচনে ৮০ জনের প্রাণহানি হয়। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইউপি নির্বাচনে ১০ জনের প্রাণহানি হয়। ২০০৩ সালে বিএনপি সরকারের আমলে ২৩ জন মারা যায়। এইবারের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত যে ১০১ জন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে নির্বাচনপূর্ব সংঘর্ষে ৪৫ জন, ভোটের দিন সংঘর্ষে ৩৬ জন এবং ভোটের পর সংঘর্ষে ২০ জন মারা গেছেন।
তিনি জানান, নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক ৪০ জন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থক ১২ জন, বিএনপির দুজন, জাতীয় পার্টির (জেপি) একজন, জনসংহতি সমিতির একজন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী দুজন নিহত হয়েছেন। বাকিদের মধ্যে সদস্য প্রার্থীর কর্মী-সমর্থক ৩১ জন, ১২ জন সাধারণ মানুষ। নিহতদের মধ্যে চারজন নারী ও তিনটি শিশু, একজন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং তিনজন মেম্বর প্রার্থী ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই নির্বাচনে এখন পর্যন্ত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের ২১১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপি ৫৫৪ ইউপিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী দিতে পারেনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, সুজনের সহ সম্পাদক যাকারিয়া হোসেন, সুজনের নির্বাহী সম্পাদক প্রকৌশলী মুসবাহ আলীম প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন