ফিলিস্তিন ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইসরাইল ঘেঁষা শান্তি পরিকল্পনার বিভিন্ন দিক নানা সময়ে সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক রমজানের পর এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার কথা রয়েছে। তবে তার আগেই মঙ্গলবার ইসরাইলের একটি সরকারপন্থী সংবাদমাধ্যমে ওই পরিকল্পনা প্রকাশিত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওই চুক্তিটি স্বাক্ষর করেছেন। দুই দেশের পক্ষ থেকে এর নাম দেওয়া হয়েছে ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি বা শতাব্দীর সেরা চুক্তি। চুক্তিটি এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা না হলেও ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে চুক্তিটি সরবরাহ করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের তরফে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত চুক্তিটির সত্যতা নিশ্চিত করা হয়নি। নিচে ট্রাম্পের কথিত ওই শান্তি পরিকল্পনার কয়েকটি মৌলিক বিষয় তুলে ধরা হ’লঃ
ইসরাইল, পিএলও এবং হামাসের মধ্যে একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। ফিলিস্তিন নামে কোনও দেশ থাকবে না। চুক্তি অনুযায়ী, নতুন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের নাম হবে নিউ প্যালেস্টাইন। গাজা উপত্যকা, যিহূদিয়া পার্বত্য এলাকা এবং পশ্চিম তীরের সামারিয়া এলাকা নিয়ে গঠিত হবে নিউ প্যালেস্টাইন। তবে পশ্চিম তীরের ইসরাইলি বসতিগুলোর ওপর তার কোনও সার্বভৌমত্ব থাকবে না। এসব বসতির সার্বভৌমত্ব থাকবে ইসরাইলের হাতে। জেরুজালেম নগরী নিয়ে কোনও ভাগাভাগি হবে না। বরং এটি হবে নিউ প্যালেস্টাইন ও ইসরাইল উভয় দেশের রাজধানী।
নগরীর আরব বাসিন্দারা নিউ প্যালেস্টাইনের নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন। আর ইহুদিরা ইসরাইলি নাগরিক হিসেবে সেখানে বসবাস করবেন। ইহুদিরা আরবদের ঘরবাড়ি কিনতে পারবে না। আরবরাও ইহুদিদের বাড়িঘর কিনতে পারবে না। জেরুজালেমে নতুন আর কোনও এলাকা দখল করা হবে না। পবিত্র স্থানগুলোর বিদ্যমান অবস্থা বজায় থাকবে। উভয় দেশের অখন্ড রাজধানী জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইসরাইলের জেরুজালেম পৌরসভার হাতে। তবে সেখানকার শিক্ষা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ থাকবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে। ইসরাইলের জেরুজালেম পৌরসভার কাছে ট্যাক্স ও পানির বিল সরবরাহ করবে নিউ প্যালেস্টাইন।
ফিলিস্তিনে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য মিসর নতুন জমি দেবে। কলকারখানা নির্মাণ, বাণিজ্যিক ও কৃষি খাতে ব্যবহারের জন্যও নতুন ভূখন্ড দেবে মিসর। তবে ফিলিস্তিনিরা এখানে বসবাসের সুযোগ পাবে না। লিজ বাবদ মিসরকে মূল্য পরিশোধ করবে নিউ ফিলিস্তিন। লিজ বাবদ ঠিক কী পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হবে তা নির্ধারণ করে দেবে মধ্যস্থতাকারী ও সহযোগী দেশগুলো।
ঐতিহাসিকভাবেই মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ইসরাইল-ঘেঁষা। তবে ওবামা প্রশাসন পর্যন্ত তারা দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান প্রক্রিয়ার পক্ষে ছিল। বিগত মার্কিন প্রশাসনগুলো চাইতো, দুই দেশের মধ্যকার সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান হোক। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে ইসরাইলি বসতি স্থাপন বন্ধের পাশাপাশি ১৯৬৭ সালের প্রস্তাবিত সীমানা অনুযায়ী স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষেই অবস্থান ছিল তাদের। তবে ট্রাম্প সমগ্র জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দিয়ে সেই দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নীতির সমালোচনা করে আসা ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরপরই নতুন শান্তি প্রস্তাব তৈরির কথা জানান। সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি, মিডল ইস্ট মনিটর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন