অপূর্ব সুন্দর এবং মুগ্ধতায় মেশানো এক নাম মদিনা তাইয়্যেবা। মদিনাতুন্নাবাবী নামটি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই হৃদয়ের আয়নায় ভেসে উঠে এক প্রশান্তিময় শহরের ছবি। অনির্বচনীয় আনন্দে এক অপূর্ব হিল্লোল দোল খেয়ে যায় হৃদয়তন্ত্রীতে। প্রেম-ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় নুয়ে আসে মন। প্রিয়নবী (সা.) এবং তাঁর অসংখ্য সাহাবায়ে কেরামের স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র এ শহর জেয়ারত প্রতিটি মুমিনেরই স্বপ্ন ও প্রত্যাশা। আজ আমরা জানব পবিত্র মদিনার ফজিলত-তাৎপর্য এবং মর্যদা সম্পর্কে।
যখন মক্কায় ইসলামে দাওয়াত প্রচার করা সম্ভব হচ্ছিলো না তখন আল্লাহ তায়ালার আদেশে প্রিয় নবী (সা.) মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেন। তখন মদিনার নাম ছিলো ইয়াসরিব। প্রিয়নবীর শুভাগমনে ধন্য হলো ইয়াসরিব নগরী। ধন্য হলো তার অধিবাসীরাও। দূর হলো সকল অন্যায়-অরাজকতা। ন্যায় ও ইনসাফের সুবাতাস ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে। প্রিয়নবীর পদস্পর্শে ঊষার মরুর তপ্ত বালুও যেন মুক্তায় পরিণত হলো। সবুজ সজীব হয়ে ওঠলো চারিদিক। তখন থেকেই ইয়াছরিব নগরীর নাম হলো সোনার মদিনা। মদিনাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
মদিনা তইয়্যেবা অতুলনীয় মর্যাদা ও অগণিত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নগরী। তার সবচেয়ে বড় ফযীলত ও মর্যাদা হলো, এ পুণ্যভূমিতেই সবুজ গম্বুজের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছেন নিখিল সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানব, আল্লাহর প্রিয় হাবীব, সায়্যিদুল মুরসালীন রাহমাতুল্লিল আলামীন রাসূলে আরাবি হযরত মোহাম্মদ (সা.)। তাঁর পবিত্র রওজা মোবারক বুকে ধারণ করে মদিনা আজ চিরধন্য চিরঅনন্য। প্রিয়নবী (সা.) এর সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিলো এই মদিনা। কোন সফর থেকে ফেরার সময় মদিনার কাছাকাছি পৌঁছে তিনি উটের গতি বাড়িয়ে দিতেন এবং মদিনায় পৌঁছার জন্য ব্যকুল হয়ে পড়তেন। কারণ মদিনায় পৌঁছে তার হৃদয় শীতল হতো। শুধু তাই নয় তাঁর উম্মতদের মদিনায় অবস্থানের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি। এ পবিত্র নগরীকে আবাসস্থল বানাতে এবং এতে মৃত্যু কামনা করতেও উৎসাহ দিয়েছেন। হুজুরপুর নূর (সা.) বলেছে, ‘যে ব্যক্তি একনিষ্ঠভাবে আমার মাজার শরিফ জেয়ারত করবে কেয়ামতের দিন সে আমার পাশে থাকবে। আর যে ব্যক্তি মদিনাতে বসবাস করবে এবং তার বিপদাপদের ওপর ধৈর্য ধারণ করবে কেয়ামতের দিন তার জন্য আমি সাক্ষী ও সুপারিশকারী হবো। আর যে ব্যক্তি দুই পবিত্র নগরীর (মক্কা-মদিনা) যে কোন একটিতে মৃত্যুবরণ করবে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে নিশ্চিন্ত করে উঠাবেন।’ (শুয়াবুল ইমান লিল বাইহাকি এবং মেশকাত শরিফ, পৃ. ২৪১।) অন্য একটি হাদীসে তিনি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার পক্ষে সম্ভব হয় সে যেন মদিনায় মৃত্যুবরণ করে। কেননা যে ব্যক্তি মদিনায় মৃত্যুবরণ করবে আমি তার জন্য সুপারিশ করবো।’ (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নম্বর ৩১৪১।) পবিত্র মদিনার ফলমূলেও রয়েছে রোগ নিরাময়ের বৈশিষ্ট্য। মদিনার ধুলাবালি ও মাটি ব্যবহার করে অনেকের রোগমুক্তির ঘটনাও জানা যায়। শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলবী (রহ.) বলেন, আমি নিজেও মদিনার মাটি দ্বারা চিকিৎসার বিষয়টি পরীক্ষা করছি। মদিনায় অবস্থানকালে একবার আমার পা প্রচন্ড ফুলে যায়। চিকিৎসকেরা সর্বসম্মতভাবে এ রোগকে দুরারোগ্য ব্যাধি এবং মৃত্যুর কারণ বলে মন্তব্য করেন। এরপর আমি এই পবিত্র মাটি দ্বারা চিকিৎসা শুরু করি। আর অল্পদিনের মধ্যেই আমার পা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে। মুসিলম শরিফের হাদিসে মদিনা শরিফের মাটিকে শেফা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মদিনা তয়্যিবায় ‘আজওয়া’ নামক এক বিশেষ খেজুর রয়েছে। এ খেজুরগুলো অনেক উপকারী। হাদীসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সকালে সাতটি ‘আজওয়া’ খেজুর খাবে সেদিন কোন প্রকার বিষ ও জাদু তার ক্ষতি করতে পারবে না।’ (বুখারী ও মুসলিম এবং মেশকাত শরিফ : পৃ. ৩৬৪।)
মদিনা একটি বরকতপূর্ণ নগরী। প্রিয়নবী (সা.) তার বরকতের জন্য মহান আল্লাহ নিকট দোয়া করে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি মক্কায় যে বরকত দান করেছেন তার দ্বিগুণ বরকত মদিনায় দান করুন।’ (বুখারী ও মুসলিম এবং মেশকাত শরিফ : পৃ. ২৪০।) আসমানের পবিত্র ফেরেশতারা সর্বদা পবিত্র এ ভুখন্ডের প্রহরায় নিয়েজিত রয়েছে বলে হাদিসে বলা হয়েছে। দাজ্জালের আবির্ভাবের পর পৃথিবীবাসী যখন তার ভয়ে ভীত থাকবে। তার ফেতনা যখন ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বময়। পৃথিবীর সর্বত্র বিচরণ করতে সক্ষম হলেও তখন সে পবিত্র মদিনায় প্রবেশ করতে পারবে না। হাদীস শরীফে আছে, ‘মক্কা ও মদিনা ব্যতীত এমন কোন শহর নেই যা দাজ্জালের পদার্পণে বিপর্যস্ত হবে না। মক্কা-মদিনার প্রতিটি ফটকেই ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধ হয়ে পাহারায় নিয়োজিত আছে। (বুখারী, হাদিস নম্বর ১৮৮১ এবং মুসলিম, হাদিস নম্বর : ২৯৪৩।)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন