বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে যে কোনো মূল্যে সচল রাখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

এটা কল্পনাও করা যায় না, একটি মহাসড়ক তিন দিন ধরে যানজটে অচল হয়ে রয়েছে। ৫০-৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে বিভিন্ন ধরনের পরিবহন নিশ্চল হয়ে পড়ে রয়েছে। এসব পরিবহনে থাকা যাত্রী, রোগীদের কী দুর্ভোগ, তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। একটি দেশে মহাসড়কে মানুষের এমন নিত্য দুঃখ-কষ্ট ও যন্ত্রণা ভোগ করার দায় সরকারের নীতিনির্ধারকদের উপরই বর্তায়। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যানজটে তিন দিন ধরে অচল। প্রতিবেদনে যানজটের যেসব কারণ উঠে এসেছে তা হচ্ছে, কাচপুরে নতুন ব্রিজ চালু করে পুরাতনটি সংস্কারের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে সেই আগের মতোই পরিস্থিতি রয়ে গেছে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, পণ্যবাহী পরিবহণের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং এগুলোর ধীরগতি। তৃতীয়ত, চার লেন সড়ক দখল করে অবৈধ পার্কিং এবং মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠা শিল্পকারখানার মালামাল বহনকারী পরিবহন মহাসড়কের অংশ দখল করে ডাম্পিং করা। মূলত এই তিন কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দিনের পর দিন যানজট লেগে থাকে। এ থেকে আশু পরিত্রাণের উপায় আছে বলে মনে হচ্ছে না।
সবার আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়। সঙ্গতকারণেই করা হয়। দেশের অর্থনীতির পাইপ লাইন হিসেবে পরিচিত এ মহাসড়ক এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে দেশের আমদানিকৃত পণ্যের সিংহভাগই এ মহাসড়ক দিয়ে সরবরাহ করা হয়। এখন চার লেন থেকে আট লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা চলছে। মানুষ ভেবেছিল, মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত হলে যাতায়াত অত্যন্ত স্বাবলীল ও দ্রুত হবে। এ কারণে চার লেন করার সময় যে দুর্ভোগ তাদের সইতে হয়েছে তা তারা মেনে নিয়েছিল। সমস্যা দেখা দিয়েছে, চার লেনে উন্নীত হলেও দুর্ভোগ কোনো অংশেই কমেনি। উল্টো আরও বেড়েছে। এখন যানজট দুই-তিন দিনে উন্নীত হয়েছে। তাহলে কী ফায়দা হলো? সামনে ঈদ, যানজটের এ পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে, তবে কী হবে তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। চার লেনের সুফল কেন মিলছে না, তার যথাযথ উত্তর পাওয়া মুশকিল। অনেকে বলেন, পরিবহনের সংখ্যা বেড়ে গেছে, অনেকে বলেন, মহাসড়কে যে ব্রিজগুলো রয়েছে সেগুলো মহাসড়কের সাথে অসামঞ্জস্যহীন হয়ে পড়েছে। মহাসড়কের প্রস্ত বাড়লেও ব্রিজের প্রস্ত বাড়েনি। ফলে চওড়া মহাসড়ক দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চালকদের ব্রিজে উঠার সরু সড়কে উঠতে হচ্ছে। এই উঠতে গিয়েই যানজট লেগে যাচ্ছে। মহাসড়ক যত চওড়া এবং মসৃন হোক না কেন, যদি কোনো একটি জায়গায় তার ব্যত্যয় ঘটে তবে সে মহাসড়ক ধীর হয়ে পড়তে বাধ্য। সেক্ষেত্রে চার লেন, আট লেন করেও কোনো লাভ হবে না। সারাবিশ্বে মহাসড়কের স্বাভাবিক ধারণাই হচ্ছে, এটি থাকবে সরল এবং মসৃণ। এতে কোনো ধরনের সংযোগ সড়ক যুক্ত হবে না, এর উপর কোনো স্থাপনা থাকবে না। আমাদের দেশের মহাসড়কগুলো এ ধারণার একেবারে বিপরীত। এখানে মহাসড়কে চলে দখলের মহোৎসব। অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ থেকে শুরু করে বাজার বসা নিয়মিত ঘটে চলেছে। এই যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন করা হয়েছে, দেখা যাচ্ছে, কুমিল্লা অংশে এর দুই পাশের অধিকাংশ এলাকা বিভিন্ন পণ্যবাহী পরিবহন পার্কিংয়ের মাধ্যমে দখল করে রাখা হয়েছে। তাহলে এই চার লেন করে কী লাভ হলো? বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, সড়ক যত প্রশস্ত হবে দখলদাররাও ততো দখল করবে। অভিযোগ রয়েছে, মহাসড়কে এসব অবৈধ পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার থানা-পুলিশের অবৈধ লেনদেন রয়েছে। থানা-পুলিশকে ম্যানেজ করেই পার্কিং করা হচ্ছে। মহাসড়কে যদি এ পরিস্থিতি চলতে থাকে, তবে যানজট কোনো দিনই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। আমাদের দেশে সড়ক-মহাসড়কের সংস্কার করাই হয় জনগণকে চরম ভোগান্তিতে ফেলে। তাদের চলাচলের বিকল্প রাস্তা না করেই একেবারে বন্ধ করে সংস্কার কাজ করা ছাড়া আর কোনো উপায় সংশ্লিষ্টরা বের করতে পারে না। সংস্কার কাজের আবার নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। কবে সংস্কার শেষ হবে এবং সড়ক চলাচলের উপযোগী হবে তা জানা যায় না। দেখা যায়, মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর ধরে সংস্কার কাজ চলছে তো চলছেই। জনগণেরও অশেষ দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এই যে তীব্র গরমে মহাসড়কে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজট চলছে এতে মানুষের শারীরিক ও মানসিক যে ক্ষতি হচ্ছে, তার ক্ষতিপূরণ কোনোভাবেই করা সম্ভব নয়। এর দায় সংশ্লিষ্ট সড়ক কর্তৃপক্ষও নেবে না। এটা যেন মহাসড়কে চলাচলকারীদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমরা বহুবার বলেছি, মহাসড়ককে নির্ভার ও মসৃণ করতে হবে। সংস্কার কাজ করা হলেও তা যাতে মহাসড়ক যানজটের মাধ্যমে ডেডলকে পরিণত না করে এমন পরিকল্পনা করে করা উচিত। যেমন, কাঁচপুর ব্রিজের নতুনটি খুলে দিয়ে পুরাতনটি বন্ধ করে সংস্কার করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, যানজট কিছুটা সহনীয় করার জন্য পুরাতনটি খোলা রেখেও সংস্কার কাজ চালানো যায়। এতে শুধু হাল্কা যানবাহন চলতে দিলেই যানজটের চাপ অনেকাংশে কমে যাবে। এভাবে যদি অন্য ব্রিজগুলো সংস্কারের সময় বাস্তবানুগ উদ্যোগ নেয়া হয়, তবে যানজট এত তীব্র হবে না। মহাসড়ক অবৈধভাবে দখল করে পার্কিং, স্থাপনা নির্মাণ, বাজার বসা, ধীর গতির থ্রী হুইলার চলাচল কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। মহাসড়ক যাতে নির্বিঘ্ন, বাধামুক্ত এবং সরলগতির থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। এখন যেভাবে যানজট লেগে থাকে, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সামনে ঈদে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। আমরা আশা করি, ঈদে যাতে মহাসড়ক যানজটমুক্ত থাকে সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Golam Rabbani ১১ মে, ২০১৯, ৯:৪১ এএম says : 0
আমি মনে করি আমাদের দেশে কোন ভি আই পি সুবিধা দেওয়া উচিৎ না। সবাইকে এক কাতারে রাখতে হবে। তাহলেই সকল সমস্যার সমাধান হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন