‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ চলচ্চিত্রের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হল এ বছর। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ‘পথের পাঁচালী’ যেমন একটি মাইলস্টোন, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-ও তাই। সত্যজিতের সমসাময়িক বাংলা চলচ্চিত্রশিল্প তখনও এতটা উন্নত হয়ে ওঠেনি যে এমন একটি কল্পকাহিনিচিত্র নির্মাণ করতে পারতেন অন্য কেউ। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর গল্পকে সত্যজিৎ যে মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন এই চলচ্চিত্রে, তা চিরকাল চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সত্যজিৎ সেই সময় খ্যাতি পেয়ে গেলেও এটির প্রযোজক পেতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল তাকে।
এবছর ফিল্মের পঞ্চাশ বছর উপলক্ষে সেই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন বিশিষ্ট লেখক-সম্পাদক শান্তনু রায় চৌধুরী। একটি অনলাইনে একটি প্রতিবেদনে তিনি এই চলচ্চিত্রের নির্মাণ শুরু হওয়ার আগের গল্পটি বলেছেন। তাঁর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘পথের পাঁচালী’-র পরে ‘মহানগর’, ‘কালপুরুষ ও মহাপুরুষ’ এবং ‘নায়ক’ বক্স অফিসে খুব একটা ভাল ফল করেনি। তাই ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ প্রযোজনা থেকে পিছিয়ে আসেন সত্যজিতের ঘনিষ্ঠ প্রযোজক আর ডি বনসাল।
কিন্তু চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন সত্যজিৎ। সেই সময় মুম্বাইয়ের কয়েকজন প্রযোজকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। সেই তালিকায় ছিলেন রাজ কাপুরও। সত্যজিতের ফিল্ম নিয়ে অনেক আগে থেকেই মুম্বাইয়ের চলচ্চিত্র জগতে আগ্রহ ছিল। রাজ কাপুরও স্বাভাবিকভাবেই চেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে।
সমস্যা হল অন্য জায়গায়। শান্তনু রায়চৌধুরীর প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজ কাপুর সত্যজিতের কাছে একটি শর্ত রাখেন। শর্তটি হল- গুপী’র চরিত্রে তার বাবা পৃথ্বীরাজ কাপুর ও বাঘা’র চরিত্রে ভাই শশী কাপুরকে নিতে হবে। এই শর্তে রাজি হতে পারেননি সত্যজিৎ রায়। শেষ পর্যন্ত তপেন চট্টোপাধ্যায় করেন গুপীর চরিত্র আর রবি ঘোষ বাঘা’র।
অভিনেতা নির্বাচন নিয়ে অত্যন্ত খুঁতখুঁতে ছিলেন তিনি। এমনও হয়েছে যে পছন্দসই অভিনেতা বা অভিনেত্রী পাননি বলে কোনও বিশেষ চরিত্র বাদ গিয়েছে বা কোনও চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনাও বাতিল করে দিয়েছেন তিনি। মুম্বাই থেকে খালি হাতেই ফিরতে হয় তাঁকে। পরে সমাধান মেলে কলকাতাতেই। ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বরের শেষে প্রযোজক নেপাল দত্ত ও অসীম দত্ত এই ফিল্মটি প্রযোজনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কাজ শুরু হয়। তবে বাজেট কম থাকায় ছবিটি সাদা-কালোতেই নির্মিত হয়। ছবির শেষ দৃশ্যটি শুধু ছিল রঙিন।
স্বল্প বাজেটে নির্মিত হলেও এই ফিল্মটিই ভারতে মুক্তিপ্রাপ্ত সত্যজিতের সব ফিল্মের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করে। টানা সাড়ে আট মাস চলেছিল ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন