বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রাইভেট জেটি নির্মাণ

রূপগঞ্জে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বেড়িবাঁধ ও শীতলক্ষ্যা নদী দখল

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের হাটাবো বাজার সংলগ্ন এলাকায় বেরিবাঁধ ও শীতলক্ষ্যা নদী দখল করে জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে। শুকতারা গ্রুপ ও নূরজাহান গ্রুপ নামের দুটি প্রতিষ্ঠান প্রকাশ্যে দিনে দুপুরে জেটি নির্মাণ করলেও স্থানীয় প্রশাসন রহস্যজনকভাবে নীরব। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে এ দখলদারিত্ব।
সম্প্রতি হাইকোর্ট নদীর তীরের দেড়শ’ ফুট এলাকাকে নদীর সীমানা ঘোষণা করলেও সেটার তোয়াক্কা করছেনা শিল্পপ্রতিষ্ঠান দু’টি। বরং শীতলক্ষ্যা নদীর সীমানা পিলার ভেকু দ্বারা উপড়ে ফেলে বেরিবাঁধ ও নদী দখল করে বালু ভরাটে মেতে উঠেছে তারা। স্থানীয় এলাকাবাসী প্রতিবাদ করতে গেলেই ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে মামলা-হামলার হুমকি দিচ্ছে। এতে করে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেনা।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, প্রায় অর্ধ শত বছর আগে কৃষি জমি চাষ ও জনগণের বসবাসের স্বার্থে শীতলক্ষ্যা নদী তীর ঘেঁষে রূপসী থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত বেরিবাঁধ নির্মাণ করে সরকার। ওই বেরিবাঁধটি এখন পাকা সড়কে পরিণত হয়েছে। হাটাব বাজার সংলগ্ন বেরিবাঁধের জমিতে ও শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে নূরজাহান গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রথমে বালুর ব্যবসা গড়ে তোলে। পরে ধীরে ধীরে তারা নদী ভরাট করতে শুরু করে। পাশাপাশি শুকতারা গ্রুপ নামের অন্য একটি প্রতিষ্ঠান একই কায়দায় বেরিবাঁধ দখল করার পর শীতলক্ষ্যা নদীও ভরাট করা শুরু করেছে।
প্রায় ৬ মাস আগে রূপগঞ্জের তৎকালীণ ইউএনও আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম (বর্তমানে এডিসি ঢাকা) ও এসি ল্যান্ড আসাদুজ্জামান (বর্তমানে ইউএনও শিবচর) সরেজমিনে গিয়ে বেরিবাঁধ দখল ও শীতলক্ষ্যা নদী ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। শুধু তাই নয়, তখন ওই দুই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা কোন প্রকার দখল ও ভরাট কার্যক্রম করবেন না বলে অঙ্গীকার করেন। উপজেলা প্রশাসনের ওই দু’জন কর্মকর্তা পদোন্নতি নিয়ে রুপগঞ্জ থেকে বদলি হওয়ার পর থেকেই শুকতারা গ্রুপ ও নূরজাহান গ্রুপের লোকজন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা বেরিবাঁধ দখল ও শীতলক্ষ্যা নদী ভরাট করে তাদের দখলদারিত্ম চালিয়ে যাচ্ছে। ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের লোকজন বলে বেড়ায়, তারা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। এখানে এখন বাধা দেয়ার কেউ নেই। বর্তমানে শুকতারা গ্রুপের কাছে ভাড়া দিয়ে দিয়েছে নূরজাহান গ্রুপের দখলকৃত জমিগুলো।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, বেরিবাঁধ ও শীতলক্ষ্যা নদী ভরাট করে প্রায় ১২ থেকে ১৫ বিঘা জমি দখলে নিয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি। নদীর যে সীমানা পিলারগুলো রয়েছে, সেগুলো ভেকু দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছে। কিছু কিছু পিলার নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ইতোমধ্যে তারা ৩০ থেকে ৪০ ফুট নদী ভরাট করে ফেলেছে। এছাড়া বেরিবাঁধের ২৫ থেকে ৩০ ফুট স্লোপ বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলেছে। এভাবে জেটি নির্মাণের লক্ষ্যে বালু দিয়ে ভরাটের কাজ এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে জেটি নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজও শেষ হয়ে গেছে। এখন পিলারসহ অন্যান্য কাজ চলছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, বেরিবাঁধ ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে বাপ দাদার আমল থেকে তারা বিভিন্ন ধরনের সবজি ও আখ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আর এসব সবজি ও আখ নিজের এলাকার চাহিদার পাশাপাশি অন্যান্য এলাকায় সরবরাহ করতেন। এখানে জমির দাম বেড়ে যাওয়ার পর থেকেই সরকারী সম্পত্তির দিকে নজর পড়ে প্রভাবশালীদের। তারা বিভিন্নভাবে বেরিবাঁধ ও শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ের জমি বালু দিয়ে ভরাট করে দখলে নিয়ে যাচ্ছে। যারা সবজি চাষ করতেন, তাদেরকেও ভয়ভীতি দেখিয়ে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। আগে এলাকার মানুষ এ নদীর তীরে গোসল করতো। আর নদীর পানি ব্যবহার করতো। দখল দূষণের কারনে এখন আর নদীতে যেতে পারেন না তারা।
এ প্রসঙ্গে শুকতারা গ্রুপের সাইট ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম বলেন, শুকতারা গ্রুপ অর্ধেক জমি নূরজাহান গ্রুপের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছে। বর্তমানে সেখানে জেটি নির্মাণের জন্য তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাই নদীর পার পাইলিং করে জেটি নির্মাণ করছেন তারা। এছাড়া কোম্পানির প্রায় ১৪৪ শতাংশ জমি কেনা রয়েছে। শুকতারা গ্রুপের প্রজেক্ট ম্যানেজার গাফ্ফার মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের উপ পরিচালক মোঃ শহীদুল্লাহ বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে নদী দখলের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নদী দখলকারীরা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন তাদের কোন ছাড় নেই। তিনি বলেন, হাইকোর্ট নদী তীরের দেড়শ’ ফুট এলাকাকে নদীর সীমানা ঘোষণা করেছে। আমরা ইতিপূর্বেও রূপগঞ্জে দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। শীঘ্রই রূপগঞ্জে আবারো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা হবে।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমার জানা ছিল না। এখন যেহেতু জেনেছি, সরেজমিনে লোক পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এছাড়া প্রশাসনকে ম্যানেজ করার বিষয়টি সঠিক নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন