বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

একজন মুক্তিযোদ্ধার টেক্সটাইল মিল নিলামে, পুণঃবিবেচনার আকুতি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৯, ৫:৪৮ পিএম

সুদসমেত বকেয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করতে চাওয়া স্বত্বেও নিলাম তুলে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের মেসার্স রূপালী টেক্সটাইলের মালিকানা হস্তান্তর করতে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে নোয়াখালীর জনতা ব্যাংকের চৌমুহনী শাখার বিরুদ্ধে।

মেসার্স রূপালী টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ মিয়া ভূঁইয়ার অভিযোগ তাকে চিঠি না দিয়ে অভিহিত না করে নিলামে তোলা হয়েছে মিলটি। এমনাবস্থায় মিলটি নিলামে না তুলে ঝণ পরিশোধের সুযোগ চান তিনি।

সুরুজ মিয়া বলেন, শেষ দুটি নিলাম কার্যক্রমে একই ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে আমাকে কোনো চিঠি দিয়ে অভিহিত করা হয়নি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে। অথচ সুদসহ বকেয়া টাকা পরিশোধের জন্য আমি প্রস্তুত। এমনকি ম্যানেজার জনতা ব্যাংকের নিজস্ব প্যাডে এ বিষয়ে নিজ হাতে লিখে একটি চুক্তিও করেছেন আমার সাথে।

তিনি বলেন, ১৯৭৭ সালে মেশিনারি আমদানি করার জন্য মিলটি মর্টগেজ রেখে জনতা ব্যাংকের চৌমুহনী শাখা থেকে ৩ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করি। মেশিনারি আমদানি বিষয়ক জটিলতায় অনেক সময় পার হয়ে যায়। পরে ফ্যাক্টরীতে উৎপাদান কার্যক্রম শুরু করার জন্য ব্যাংকের একই শাখায় ঋণের আবেদন করি। সকল কাগজপত্র এবং পর্যাপ্ত মর্টগেজ থাকা স্বত্বেও আমাকে চলতি মূলধন হিসেবে ঋণ দেওয়া হয়নি। এদিকে মেশিনারি যন্ত্রাংশ চলে আসে কিন্তু মূলধনের অভাবে উৎপাদন শুরু করতে না পারায় ঋণের সুদ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে। এর মধ্যে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মিলটির দায়িত্ব নিয়ে তাদের দাড়োয়ান নিয়োগ দেয়।

তিনি আরও বলেন, ২০১২ সালে ব্যাংকের পাওনা বাবত মোট ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, সুদ মওকুফ শর্ত মোতাবেক ডাউন পেমেন্ট হিসেবে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আর বাকি টাকা আরোপিত-অনারোপিত সুদ মওকুফ করে কিস্তিতে প্রদানের আবেদন করি। ব্যাংকের কাছ থেকে ফিরতি চিঠি পাবার আগেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরি। চিকিৎসকের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গিয়ে বেশ কয়েকটি অপারেশনের শেষে দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরি। দেশে ফেরার পরপরই গ্যাংরিনে আক্রান্ত হই। ছোট ভাই আমার অবর্তমানে সবকিছু দেখাশোনা করতো। এর মধ্যেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সেও মারা যায়। কিছুটা সুস্থ হবার পর জানতে পারি ৪৫ লক্ষ টাকা পরিশোধের নিদের্শনা দেওয়া হয়েছিল। জানান পর সুদ মওকুফের জন্য আবেদন করি কিন্তু ব্যাংক আমাকে কিছুই জানায়নি।

মেসার্স রূপালী টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান সুরুজ মিয়া আরো বলেন, আমি একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। অসুস্থতার কারণে বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে এই ক্ষতি পোষাণোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। ২০১৩ সালে সুদ মওকুফ সুবিধার পর ৪৫ লক্ষ টাকা এবং তৎপরবর্তী ক্ষতির কথা বিবেচনা করে সমুদয় ঋণ ও সুদ বাবদ ৭০ লক্ষ টাকা টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করে মিলটিতে উৎপাদন কার্যক্রম চালু করার বিষয়ে সম্মত হয়ে চৌমুহনী শাখার ব্যাংক ম্যানেজার মো. সাহাব উদ্দিন একটি লিখিত ডকুমেন্টও আমাকে দিয়েছিল। কিন্তু অদৃশ্য কোন কারণে আমার প্রতিষ্ঠানের জন্য নেয়া ঋণের টাকা সুদসহ আমি পরিশোধ করতে চাওয়া স্বত্তে¡ও তারা আমাকে কোন টাকা জমাদানের কোন চিঠি প্রদান করেননি। এমনকি প্রথমবারের নিলামে সর্বোচ্চ দরদাদা ৬৫ লক্ষ টাকা দিতে রাজি ছিলেন- সেখানে আমাকে বলা হয়েছিল ৭০ লক্ষ টাকা।

মতিঝিল জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নোয়াখালীর বিভাগীয় ও এরিয়া কার্যালয় এবং চৌমুহনী শাখায় বার বার বিভিন্ন চিঠি দেবার পরও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন জবাব পাননি বলে জানান এই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনতা ব্যাংক চৌমুহনী শাখার ব্যবস্থাপক মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, মেসার্স রূপালী টেক্সটাইলের সাবেক মালিক সুরুজ মিয়া ভূঁইয়া ব্যাংকের কাছে তার ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় মহামাণ্য আদালত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১০ সালে রায় দেন, এই সম্পত্তির মালিক জনতা ব্যাংক।

জানা যায়, আপনিসহ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে এক বৈঠকে সিধান্ত হয় ৭০ লক্ষ পরিশোধের ভিত্তিত্বে রূপালী টেক্সটাইল উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করতে পারবেনা কিন্তু তা আর এগোলো না কেন এম প্রশ্নের জবাবে উত্তরে শাখা ব্যবস্থাপক বলেন, এ ব্যাপারে একটি খসড়া হয়েছিল যেখানে উল্লেখ ছিল উক্ত টাকার ১০ শতাংশ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দিবেন তিনি। কিন্তু তিনি তা না করেননি। পরবর্তীকে ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিধান্তনুযায়ী নিলাম ডেকে ৮০ লক্ষ ১ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচন করা হয় ব্যাংকের নীতিমালানুযায়ী।

এদিকে মেসার্স রূপালী টেক্সটাইলের প্রতিষ্ঠাতা সুরুজ মিয়া বলছেন, বিষয়টি সমঝোতা করবার জন্য তৎকালীন পরিকল্পনা মন্ত্রী মোস্তফা কামাল বিবেচনার জন্য সুপারিশ করেন। কিন্তু শাখা ম্যানেজারের হয়তো কোন ব্যক্তিগত আগ্রহের কারণে বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন এমনি মাননীয় মন্ত্রীয় একান্ত সচিবের সঙ্গে ফোনালাপে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

যুদ্ধাহত এই মুক্তিযোদ্ধার আরও অভিযোগ, শাখা ব্যবস্থাপক এই মিলটির মালিকানা দাবি থেকে সরে যাবার জন্য ৭ লক্ষ টাকাও তাকে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু জনতা ব্যাংকের চৌমুহনী শাখার ব্যবস্থাপক অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্য এবং বানোয়াট বলে দাবী করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন