শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা বিন্যাসে পুনর্ভাবনা জরুরি

মেহেদী হাসান পলাশ | প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

পার্বত্য চট্টগ্রাম হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। একের পর এক আলোচিত ও শীর্ষ খবর হওয়ার মতো ঘটনার জন্ম হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য বাসন্তী চাকমার বক্তব্য, বাঘাইছড়িতে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের উপর উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের হামলা ও ৮ জনকে হত্যা, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে গোলাগুলিতে এক উপজাতীয় সন্ত্রাসীর মৃত্যু এবং ঘটনাস্থল থেকে ৭টি এসএমজি ও ৪৩৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার, রাজস্থলীতে মগ লিবারেশন পার্টির সাথে স্থানীয় উপজাতীয় আঞ্চলিক সংগঠনের গুলিবিনিময়ে ৭ জন নিহত হওয়ার খবর (যদিও ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে হতাহতের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি), সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে বড় ধরনের হামলার হুমকি, জেএসএস ও ইউপিডিএফ (মূল) শীর্ষ নেতার এক সাথে দেশের বাইরে অবস্থান প্রভৃতি ঘটনার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। এ সবের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস নির্মূলে চিরুনী অভিযান শুরু করেছে। এ অভিযানে এপ্রিল মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোট ১৬টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। এরমধ্যে ৮টি এসএমজি। এছাড়াও একই সময়ে প্রায় সাড়ে ৪০০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে।
এই ঘটনা প্রবাহের শুরু ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে দেয়া তিন পার্বত্য জেলা থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নপ্রাপ্ত সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমার ভাষণের পর থেকে। এই ভাষণে বাসন্তী চাকমা বলেছেন:
‘মাননীয় স্পিকার, ... আপনার মাধ্যমে আমি এই হাউজ এবং সমগ্র বাংলাদেশকে আমাদের সে সময়ের পরিস্থিতির কথা একটু বলতে চাই। আপনারা জানেন, আমাদের বেড়ে ওঠা অনেকটা অস্ত্রের ঝনঝনানির মধ্যে দিয়ে। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আমি দেখেছি, আমাদের সে সময়ের শান্তিবাহিনী ভাইদেরকে একপর্যায়ে ওনাদের মধ্যে বিভক্তি এসে যায়। সন্তু গ্রুপ এবং প্রীতি গ্রুপ- এই দুই গ্রুপে মধ্যে পড়ে আমাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন এবং অসহায় জনগণ মৃত্যুবরণ করে।....
১৯৮৬ সাল পহেলা মে পানছড়িতে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল মাননীয় স্পীকার, আপনার মাধ্যমে আমি জানাচ্ছি সেই ভয়াবহ দিনগুলোর কথা, সেদিন ছিল শুক্রবার বিকাল টাইম। আমাদের যে তখনকার সময়ে বহিরাগত ছিল এবং আমি কাউকে ছোট করে বলছি না তখন আর্মিরা মিলে আমাদেরকে দুই তিন গ্রামবাসী জড়ো করে একটা ব্রিজের উপর আমাদের পশ্চিম দিকে এভাবে মাথা নত করে থাকতে হয়েছিল। একপর্যায়ে পানছড়ি বাজার থেকে ওখানকার বহিরাগত যারা ছিল তারা এবং আর্মিরা মিলে আল্লাহু আকবর করতে করতে একজন একজন করে জবাই দিতে দিতে আসতেছিল সেটা ছিল ১৯৯৬ সালের পহেলা মে শুক্রবার।
... মাননীয় স্পীকার, ... একপর্যায়ে আমাদেরকে চুরি করে বর্ডার ক্রস করে ইন্ডিয়াতে যেতে হয়েছিল। একদিকে ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিল, অন্যদিকে তখনকার সময়ে আর্মিদের প্রেশার ছিল। তো একপর্যায়ে বর্ডার চুরি করে গিয়ে শরণার্থী হিসেবে আড়াই কি তিনমাস আমাকে থাকতে হয়েছিল। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। আমি যতটুকু বই পড়ে এবং আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টিভিতে দেখে যেটুকু জেনেছি, আমার কাছে মনে হয়েছিল, না জানি মুক্তিযুদ্ধ কি এটাই ছিল? এইরকমই ছিল বোধহয়!....’
বাসন্তী চাকমার এই বক্তব্যের পরপরই পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি সংগঠনগুলো তার পদত্যাগের দাবিতে এবং এহেন বক্তব্যের প্রতিবাদে তিন পার্বত্য জেলায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান, কুশপুত্তলিকা দাহ এবং তাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।
বাসন্তী চাকমা তার বক্তব্যে মোটা দাগে ৪টি ভুল তথ্য তুলে ধরেছেন বলে বাঙালিদের অভিযোগ। প্রথমত: তিনি শান্তিবাহিনীকে ভাই হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত: তার বক্তব্যে সেনাবাহিনী সম্পর্কে যে অভিযোগ করা হয়েছে তাতে সেনাবাহিনীকে একটি ‘খুনি’, ‘সা¤প্রদায়িক’ ও ‘জঙ্গি বাহিনী’ হিসেবে আখ্যা দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তৃতীয়ত: তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রত্যাবাসিত বাঙালিদেরকে সেটেলার বলে আখ্যা দিয়েছেন, যাতে বাঙালিদের প্রবল আপত্তি রয়েছে। চতুর্থত: তিনি শান্তিবাহিনীর বাংলাদেশ বিরোধী সংগ্রামকে মুক্তিযুদ্ধের সাথে তুলনা করেছেন।
এই চারটি অভিযোগই অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ এবং সংহতি বিরোধী। বাঙালি সংগঠনগুলোর দাবি, বাসন্তী চাকমা তার বক্তব্যে যে দিনের কথা উল্লেখ করেছেন ওই দিন পার্বত্য চট্টগ্রামে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে বাসন্তী চাকমা কেন এই বক্তব্য দিলেন? বাসন্তী চাকমার আগে জেএসএস প্রধান সন্তু লারমা, উপজাতীয় আঞ্চলিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা, পাহাড়ি ও শান্তিবাহিনীর সাবেক নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন মাধ্যমে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তাতে কোথাও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে এ ধরনের অভিযোগ করা হয়নি। শুধু তাই নয়, শান্তিবাহিনীর ফিল্ড কমান্ডার তথা সামরিক শাখার প্রধান দুই ব্যক্তি যথাক্রমে মনি স্বপন দেওয়ান ওরফে মেজর রাজেশ এবং উষাতন তালুকদার ওরফে মেজর মলয় জাতীয় সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। কিন্তু তারাও কখনো জাতীয় সংসদে এ ধরনের অভিযোগ করেনি। কাজেই প্রশ্ন উঠতে পারে, বাসন্তী চাকমা কেন এ ধরনের অভিযোগ করলেন? এমনকি জাতীয় সংসদে তার এই বক্তব্যের পর পার্বত্য বাঙালি সংগঠনগুলো প্রবল প্রতিবাদ করলেও তিনি তার বক্তব্যে অনড় রয়েছেন অথবা তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান বা প্রত্যাহার করে নেননি।
দেশবাসীর অবাক হওয়ার বিষয় হলো, বাসন্তী চাকমা যে সংসদে দাঁড়িয়ে এই বক্তব্য রেখেছেন সেই সংসদে যে সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন তারা প্রত্যেকেই অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন। বাসন্তী চাকমার এই বক্তব্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে সে সম্পর্কে না বোঝার মতো অনভিজ্ঞ কেউ ছিলেন না। তারপরও সেদিন বাসন্তী চাকমার বক্তব্যে হাউজে কেউই কোনো প্রতিবাদ করেননি। এমনকি সংসদে বেশ কয়েকজন সাবেক সেনা কর্মকর্তাও রয়েছেন, যাদের কারো কারো পার্বত্য চট্টগ্রামে সে সময়ে দায়িত্ব পালনের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাদের পক্ষ থেকেও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এমন অসত্য বক্তব্যের প্রতিবাদ কাউকে করতে দেখেনি। এটা পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে জাতীয় রাজনীতি এবং রাজনীতিবিদদের উদাসীনতা, উপেক্ষা, গুরুত্ব না দেয়া, অবহেলা ও মনোযোগের অভাবের পরিচায়ক। কেননা, আমরা দেখেছি, জাতীয় সংসদের একই অধিবেশনেই ওয়ার্কাস পার্টির চেয়ারম্যান রাশেদ খান মেনন হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতা আল্লামা শফীকে নিয়ে কিছু আপত্তিকর বক্তব্য রাখার দুই দিন পরেই মহাজোটের শরিকদলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে রাশেদ খান মেননের বক্তব্যের সমালোচনা করেন এবং তার বক্তব্য প্রত্যাহারের আহŸান জানান। সেই প্রেক্ষিতে সংসদের স্পিকার রাশেদ খান মেননের বক্তব্যের আপত্তিকর অংশ প্রত্যাহার করে নেন। একইভাবে বাসন্তী চাকমার বক্তব্যের বিতর্কিত অংশও জাতীয় সংসদের কার্যবিধি থেকে প্রত্যাহার করা যেত। কিন্তু অধিবেশন শেষ হয়ে গেলেও জাতীয় সংসদের কার্যবিবরণীর রেকর্ড বইতে বাসন্তী চাকমার বক্তব্য রয়ে গেছে।
আমরা জানি, জাতীয় সংসদ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ফোরাম। এখানে দেয়া বক্তব্য জাতীয়ভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বিভিন্ন পর্যায়ে অত্যন্ত সুনামের সাথে কাজ করছে। তার বিরুদ্ধে দেশের মধ্যেই এহেন বক্তব্য আন্তর্জাতিকভাবে সুনামের সাথে কাজ করা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ও মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা, রিপোর্ট ও ফোরামে তার এই বক্তব্য রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। একইসাথে শান্তি বাহিনীর রাষ্ট্রবিরোধী সশস্ত্র লড়াইকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথে তুলনা করে বাসন্তী চাকমা সুস্পষ্টভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করেছেন। সে কারণে আমরা মনে করি, বাসন্তী চাকমার বক্তব্যের বিতর্কিত অংশ অনতিবিলম্বে সংসদের বর্তমান অধিবেশনেই সংসদের রেকর্ড থেকে প্রত্যাহার করা জরুরি।
গত ১৮ মার্চ ৫ম উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠান শেষে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক থেকে ফেরার পথে নয়কিলো নামক স্থানে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারের মধ্যে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বহনকারী গাড়ি বহর। সন্ধ্যার অন্ধকারে দুপাশের পাহাড় থেকে আসা বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণের মুখে কোনো প্রতিরোধ গড়ার সুযোগই পায়নি সঙ্গে থাকা পুলিশ-বিজিবির প্রটেকশন টিম। এ ঘটনায় ৮ জন নিহত ও কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়। শান্তিচুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ হামলায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার পর গত ৪ এপ্রিল ২০১৯ বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় যৌথবাহিনীর সাথে সন্ত্রাসীদের গুলিবিনিময়ে জ্ঞান সংকর চাকমা নামে এক উপজাতীয় সন্ত্রাসী নিহত হয়। র‌্যাব ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে ৭টি সাব মেশিনগান ও ৪৩৭ রাউন্ডগুলি উদ্ধার করে। একই দিনে রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলায় দুই সন্ত্রাসী গ্রæপের মধ্যে গুলি বিনিময়ে ৭ জন নিহত হবার খবর প্রচারিত হলেও পুলিশ ঘটনাস্থল তল্লাশি করে কোনো লাশ খুঁজে পায়নি। এরমধ্যেই খবর বেরিয়েছে, দেশ ছেড়েছেন জেএসএস প্রধান সন্তু লারমা এবং ইউপিডিএফ প্রধান প্রসীত বিকাশ খীসা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাহাড়ে বড় ধরনের হামলা হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। পাহাড়ীদের বিভিন্ন গ্রæপে এ হামলার হুমকি দেয়া হচ্ছে কিছু দিন ধরে। এসব নিয়ে পাহাড়ে নতুন করে শুরু হয়েছে উত্তেজনা, আতঙ্ক ও আশঙ্কা। সাধারণ ও শান্তিপ্রিয় পাহাড়বাসী এখন অজানা আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন।
কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা ছিলো না। কারণ ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় জেএসএস নেতা সন্তু লারমার সাথে শান্তিচুক্তি সম্পন্ন হয়। কেবলমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তির অন্বেষায় পার্বত্য চট্টগ্রামে হাজার হাজার পার্বত্যবাসীর খুনের জন্য দায়ী সন্তু লারমা ও তার দলের সহ¯্রাধিক সশস্ত্র সদস্যের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয় সরকার এবং ২০ দফা প্যাকেজের আওতায় তাদের পুনর্বাসন করে। অপরপক্ষে সন্তু লারমার পক্ষে কর্তব্য ছিলো, অবৈধ অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা এবং দেশের প্রতি আনুগত্য করা। কিন্তু গত ২০১১ সালের ২৫ নভেম্বর ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক শামীমা বিনতে রহমানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সন্তু লরমা সকল অস্ত্র জমা দেয়ার কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের এই অশান্ত ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় গণমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। কোনো কোনো আলোচক ও বুদ্ধিজীবীদের মত, শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শান্তিচুক্তি শতভাগ বাস্তবায়িত হলে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তাদের সাথে আমি আংশিক একমত। কেননা, আমিও মনে করি, শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত হলে পার্বত্য সমস্যার সমাধানে উন্নতি হবে। তবে সম্পূর্ণ সমাধান হয়ে যাবেÑ এ দাবির সাথে কোনোভাবেই একমত নই। প্রশ্ন ওঠে, শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের বাধা কোথায়? কেন সরকার দীর্ঘ দিনেও এ চুক্তি বাস্তবায়নে সক্ষম হয়নি।
এতো গেলো একটা দিকের কথা। অন্যদিকে শান্তিচুক্তি হয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে। বাস্তবায়নও দুইপক্ষকেই করতে হবে। একপক্ষ সরকার। শান্তিচুক্তি ৪ খন্ডে বিভক্ত। ক খন্ডে ৪টি, খ খন্ডে ৩৫টি, গ খন্ডে ১৪টি, এবং ঘ খন্ডে ১৯টি মিলে সর্বমোট ৭২টি ধারা রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর তাঁর কার্যালয়ে নিবন্ধ লেখককে দেয়া এক স্বাক্ষাৎকারে বলেন, ক খন্ডের ১, ২, ৩, ৪ ধারা; খ খন্ডের ১, ২, ৩, ৫, ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৫, ২৮, ৩০, ৩১, ৩২, ও ৩৩ ধারা; গ খন্ডের ১, ৭, ৮, ৯, ১০, ১২, ১৪ ধারা এবং ঘ খন্ডের ১, ৫, ৮, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৯ ধারা মিলে মোট ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে। খ খন্ডের ৪(ঘ), ৯, ১৯, ২৪, ২৭, ৩৪; গ খন্ডের ২, ৩, ৪, ৪, ৫, ৬ এবং ঘ খন্ডের ৪, ১৬, ১৭, ১৮ নম্বর মিলে মোট ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে। খ খন্ডের ২৬, ২৯, ৩৫; গ খন্ডের ১১, ১৩ এবং ঘ খন্ডের ২, ৩, ৭, ৯ নম্বর ধারা মিলে মোট ৯টি ধারার বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে জেএসএস সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা সরকারের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার মতে, সরকার শান্তিচুক্তির মাত্র ২৫টি ধারা বাস্তবায়ন করেছে। এছাড়াও ১৩টি ধারা আংশিক বাস্তবায়ন করেছে এবং ৩৪টি ধারা অবাস্তবায়িত রয়েগেছে।
পার্বত্য চুক্তির অপরপক্ষ জেএসএস নেতা সন্তু লারমার একমাত্র শর্ত ছিলো, তিনি তার বাহিনীকে অর্থাৎ শান্তিবাহিনীকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র করে, অস্ত্র জমা দিয়ে, বাহিনী ভেঙে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন। কিন্তু তিনি কি সে কথা রেখেছেন? তিনি কি শান্তিচুক্তির শর্ত বাস্তবায়ন করেছেন? তিনি কি তার দলের সবাইকে নিয়ে অস্ত্র সমর্পণ করেছিলেন? তিনি কি শান্তিবাহিনী ভেঙে দিয়ে এর সকল সদস্যকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরত নিয়ে এসেছিলেন? তারা কি স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন? আমরা সকলেই জানি, শান্তিচুক্তির শুরুতেই শান্তিবাহিনীর একটি অংশ সন্তু লারমার বিরোধিতা করে অস্ত্র সমর্পণ না করে শান্তিবাহিনীকে ভাগ করে ফেলে, যারা পরবর্তীতে ইউপিডিএফ নামে আত্মপ্রকাশ করে। অভিযোগ রয়েছে, সন্তু লারমা নিজেও সরকারের সদিচ্ছার প্রতি পূর্ণ আস্থা স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়ে নিজ সমর্থক শান্তিবাহিনীর একাংশকে জঙ্গলেই অপেক্ষাকৃত ভারী ও আধুনিক অস্ত্রসহ রেখে আসেন। অর্থাৎ শুরুতেই শান্তিবাহিনীর দুইটি অংশ অস্ত্র সমর্পণ করেনি বা সন্তু লারমা অস্ত্র সমর্পণ করাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এরপর দীর্ঘ বাইশ বছর পার হয়েছে। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সন্তু লারমা নিজে কী করেছেন এসময়ে? এ প্রশ্নের উত্তরে তৃতীয় কোনো সূত্রের তথ্য ব্যবহার না করে আমরা সরাসরি সন্তু লারমার কাছে যেতে চাই।
২০১১ সালে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক শামীমা বিনতে রহমানকে শান্তিচুক্তির পর আবার কবে অস্ত্র তুলে নিলেন- এ প্রশ্নের জবাবে জেএসএস প্রধান বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে। ওটা আমরা সীমিত রেখেছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি যে না, সরকার কিছু করছে না। এদের দিয়ে আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। ইউপিডিএফসহ যারা এদের সাথে যুক্ত আছে তাদের সাথে লড়াইটা চলছে।’ শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সংখ্যা কতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা অনেক আছে, বেশ কয়েকশত আছে।’ সন্তু লারমা কয়েক শতের কথা স্বীকার করলেও পাহাড় সংশ্লিষ্টরা জানেন, এ সংখ্যা কয়েক হাজার।
পাহাড়ে এখন আঞ্চলিক সশস্ত্র দলের সংখ্যা চারটি। এই চারটি দলের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘাত, চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ প্রভৃতি নানা অপরাধমূলক কর্মে শান্তির পাহাড় আজ নৈরাজ্যের নরকপুরীতে পরিণত হয়েছে। গণমাধ্যমে একে মৃত্যু উপত্যকা বলেও আখ্যা দিতে দেখা যায়। শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষরকারী হিসেবে যার একমাত্র দায়িত্ব ছিলো নিজ দলের স্বশস্ত্র কর্মীদের আত্মসমর্পণ করিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা, আজ তার দলের লোকেরাই সরকারি দায়িত্ব পালনকারীদের এম্বুশ করে নির্বিচারে হত্যা করছে। ১৮ মার্চ বাঘাইছড়ি হত্যাকাণ্ডের পর গঠিত সরকারি তদন্ত কমিটিও তার রিপোর্টে এ হামলার জন্য সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসকেই দায়ী করেছে। তাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এসএম মতিউর রহমান যৌক্তিকভাবেই বলেছেন, ‘আঞ্চলিক দলের সন্ত্রাসীরা সরকারের কর্মচারীদের উপর হামলা করে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে মনে করি তারা এই চুক্তি ভঙ্গ করেছে।’ এ হামলার পর বাঘাইছড়িতে স্থানীয় জনগণের সাথে এক মতবিনিময় সভায় জেনারেল মতিউর আরো বলেন, ‘শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য এলাকা থেকে ২৪০টি সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছিল। ক্যাম্প প্রত্যাহারের অর্থ এই যে, আমাদের সাথে এই এলাকার দুর্বৃত্তদের আর যুদ্ধ নেই। তাই চুক্তির মাধ্যমে আমাদের ক্যাম্প ক্লোজড করলাম। এখন যদি এই সকল দুর্বৃত্ত আমাদের উপর গুলিবর্ষণ করে তাহলে কিন্তু এক অর্থে এই শান্তিচুক্তির আর কোনো কার্যকারিতা থাকে না।’
আমরা মনে করি, জেনারেল মতিউর পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার উৎস চিহ্নিত করেছেন তার এ বক্তব্যের মাধ্যমে। সাধারণত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে অনেক সরকারি কর্মকর্তাই সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়াতে চান না। কিন্তু জেনারেল মতিউর সেই দলে পড়েন না। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের একটা দাবি, যে সকল জায়গা থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে সেখানে সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপন করা, এই হামলার ফলে সেটা বাংলাদেশ সরকারের পুনঃ বিবেচনার একটা সুযোগ হবে।’
সাধারণত শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের কথা উঠলেই পাহাড়ি আঞ্চলিক দলের নেতৃবৃন্দ ও তাদের সমর্থক বুদ্ধিজীবীবৃন্দ বলে থাকেন, পাহাড় থেকে সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করতে হবে। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের শর্তানুযায়ী এ পর্যন্ত পাহাড় থেকে একটি ব্রিগেডসহ ২৪০টি বিভিন্ন ধরনের সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারপরও সন্তু লারমা ও তার সহযোগী দলসমূহ এবং সমর্থক বুদ্ধিজীবীবৃন্দের ক্রমাগত দাবি শান্তিচুক্তির শর্তানুযায়ী পাহাড়ে ৬টি স্থায়ী সেনাক্যাম্পের বাইরে পাহাড়ে আর কোনো সেনা ক্যাম্প থাকতে পারবে না। প্রশ্ন হলো, শান্তিচুক্তিতে কি সত্যিই এমন কথা বলা হয়েছে? সে বিচারে যাবার আগে শান্তিচুক্তির এ সংক্রান্ত ধারা পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন।
শান্তিচুক্তির ঘ খণ্ডের ১৭(ক) ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে চুক্তি সই ও সম্পাদনের পর এবং জনসংহতি সমিতির সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসার সাথে সাথে সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিডিআর) ও স্থায়ী সেনানিবাস (তিন জেলা সদরে তিনটি এবং আলীকদম, রুমা ও দীঘিনালা) ব্যতীত সামরিক বাহিনী, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সকল অস্থায়ী ক্যাম্প পার্বত্য চট্টগ্রাম হইতে পর্যায়ক্রমে স্থায়ী নিবাসে ফেরত নেওয়া হইবে এবং এই লক্ষ্যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হইবে। আইনশৃঙ্খলা অবনতির ক্ষেত্রে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে এবং এই জাতীয় অন্যান্য কাজে দেশের সকল এলাকার ন্যায় প্রয়োজনীয় যথাযথ আইন ও বিধি অনুসরণে বেসামরিক প্রশাসনের কর্তৃত্বাধীনে সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করা যাইবে। এই ক্ষেত্রে প্রয়োজন বা সময় অনুযায়ী সহায়তা লাভের উদ্দেশ্যে আঞ্চলিক পরিষদ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করিতে পারিবেন।’ (চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (15)
Mohammad Mosharraf ১২ মে, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 0
পাহাড়ের বাস্তবতাকে সুন্দরভাবে তুলে ধরার জন্য লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করবো, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন। দেরি না করে এখনই চুক্তির যথাযথ পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। বাংলাদেশের গুনুত্বপূর্ণ এই ভূখণ্ডের প্রতি উদাসীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
Total Reply(1)
mehadi Hassan palash ১২ মে, ২০১৯, ২:৫৯ পিএম says : 4
thanks for your patient reading
Ameen Munshi ১২ মে, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 0
ঠিকই বলেছেন। অনেক আশা আকাঙ্খা নিয়ে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও আশার বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে তা এই চুক্তির ২১ বছরে এসে নতুন করে ভাবার সময় হয়েছে। এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল উপজাতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে তাদের ইনসারজেন্সী তৎপরতা বন্ধ করে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আজ ২১ বছরে এই চুক্তির সফলতা ব্যর্থতা মূল্যায়ন করার সময় এসেছে।
Total Reply(1)
mehadi Hassan palash ১২ মে, ২০১৯, ৩:০১ পিএম says : 4
good point
Saiful Islam ১২ মে, ২০১৯, ১:১৭ এএম says : 0
গত ২১ বছর যাবত সন্তু লারমা প্রতিমন্ত্রীর পদ মর্যাদায় আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান। সে আঞ্চলিক পরিষদ শুধু সরকার থেকে নেয়, বাংলাদেশ সরকারকে একটি টাকাও কর বা আয় দেয় নাঅ সেই আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েও তিনি কি তার গেরিলাজীবনের আদর্শ হতে বিচ্যুত হয়েছেন? সরকার চুক্তির নামে সন্তু লারমাদের শুধু দিয়েই গেল, তার বিনিময়ে কি পেল বাংলাদেশ! আজ সে প্রশ্নও করতে হয়। উপরন্তু সন্তু লারমার ওদ্বত্বপূর্ণ বক্তব্য আমাদের ভাবিয়ে তোলে।!!
Total Reply(1)
mehadi Hassan palash ১২ মে, ২০১৯, ২:৫৯ পিএম says : 4
right you are, thanks
মিরাজ মাহাদী ১২ মে, ২০১৯, ১:১৮ এএম says : 0
আজকে ভাবতে লজ্জা হয়, সন্তু লারমা এদেশের প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েও বাংলাদেশের নাগরিক নন। ভোটার তালিকায় নাম নেই তার। বিজয় দিবসে বা শহীদ দিবসে স্মৃতিসৌধে বা শহীদ মিনারে যাওয়ার নজির তার নেই। কোন রাষ্ট্রীয় দিবসে তিনি দেননা কোন বাণী। তার জে এস এস নেতারা জুম্মল্যান্ড বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছেন। অতএব আজই সরকারকে বিষয়টি নতুন করে ভাবতে হবে, যুগপোযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ধন্যবাদ লেখককে।
Total Reply(1)
mehadi Hassan palash ১২ মে, ২০১৯, ৩:০০ পিএম says : 4
same to u.
বাকী বিল্লাহ ১২ মে, ২০১৯, ১:১৮ এএম says : 0
উপজাতীয় সংগঠনগুলোর নেতারা ব্যস্ত ধর্ষন, চাঁদাবাজি, খুন রাহাজানিতে। সেখানে অস্ত্রের ঝনঝনানীতে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ, বিরোধী দলীয় বি.এন.পি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, আর্মি, পুলিশ, প্রশাসন পর্যন্ত অসহায়। তাহলে চুক্তির ফল আমরা পেলাম কোথায়? একপাক্ষিক ভাবে চুক্তি বাস্তবায়ন হতে পারে না।
Total Reply(1)
mehadi Hassan palash ১২ মে, ২০১৯, ২:৫৮ পিএম says : 4
logical point. thanks
আরিয়ান রাসেল চৌধূরী ১২ মে, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
সারাদেশে আওয়ামী লীগের জয় জয়কার হলেও পার্বত্য এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য জে এস এস এবং উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মুখে নমিনেশন পেপার পর্যন্ত কিনতে পারেননি। সাধারণ বাঙালিদের তাহলে কি অবস্থা, ৩য় শ্রেণীর নাগরিক হয়েই তাদের জীবন যাপন। চুক্তি তাদের জাতীয়তা পরিবর্তন করেছে। এদেশে এখন ৩ ধরনের নাগরিক। বাংলাদেশী, উপজাতীয় এবং অ-উপজাতীয়। পাহাড়ে কি আছে বাঙালীদের? নাই শিক্ষা, নাই চাকুরী, নাই ব্যবসা-বাণিজ্য, নাই কোন মাথা গোঁজার ঠাঁই, নাই ভূমি, নাই কোন আবাসন। বাঙালিরা আজ নিজ দেশে পরবাসী। হয়তো কিছুদিন পর রোহিঙ্গার মত পরিণতি ভোগ করতে হবে পার্বত্য বাঙালিদের। কারণ পার্বত্য ভূমি কমিশন গঠন করা হয়েছে পার্বত্য বাঙালিদের বৈধ, দখলীয় নিজ বাস্তুভিটা হতে উচ্ছেদ করার জন্য। অথচ চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন গঠন করার কথা ছিল শুধু মাত্র উপজাতীয় নির্দিষ্ট সংখ্যক শরণার্থীদের ভূমি সমস্যার সমাধানের জন্য। এ সব কিছু আজ ভাবলে ক্ষোবে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়। সরকারের দুর্বল অবস্থান এই সমস্যাকে জিয়ে রেখেছে।
Total Reply(1)
mehadi Hassan palash ১২ মে, ২০১৯, ২:৫৭ পিএম says : 4
thank you for your comment
তামিম আবদুল্লাহ সিটিজি ১২ মে, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
আমরা সংবিধান পরিপন্থী পার্বত্য শান্তি চুক্তি মানি না। আপিল বিভাগে বিষয়টি পেন্ডিং থাকা অবস্থায়ও কিভাবে চুক্তি অনুযায়ী কাজ চলছে তা বুঝে আসে না। সাংবিধানিকভাবেও চুক্তির কোনো অস্তিত্ব নেই। সংবিধান পরিপন্থী কোনো চুক্তি চাপিয়ে দেয়া কখনিই ঠিক হবে না। আপিল বিভাগ রায় দেয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তাই এখন আপাতত আমরা এটা মানতে রাজি না।
Total Reply(1)
mehadi Hassan palash ১২ মে, ২০১৯, ৩:০০ পিএম says : 4
No way bro. thanks
অর্ণব ১২ মে, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
So Beautiful write-up. Lots of Thanks to writer Mehadi Hasan Palash. Save CHT, Save Bangladesh.
Total Reply(0)
আব্দুল্লাহ হাসান মামুন ১২ মে, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
আমি সরকারকে বলতে চাই- চুক্তি শুধু বাস্তবায়ন করলেই হবেনা। এই চুক্তির মাধ্যমে দেশের সরকার কি পেল তা মূল্যায়নের সময় এখন হয়েছে। এখন ভাবতে হবে সন্তু লারমাকে এতসব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ কি পেল। সন্তু লারমাদের সকল সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে এখনও প্রতিদিন ধর্ষিত হয় বাঙালি নারী। কাপ্তাই লেকে ভেসে আসে নিরীহ বাঙালি কাঠুরিয়ার লাশ। এভাবে আর কতদিন। যে চুক্তি পার্বত্য বাঙালিরা মেনে নেয়নি সে চুক্তি পার্বত্য বাঙালিদের উপর চাপিয়ে দেয়া কতটুকু যুক্তি সংগত? পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন মগের মুল্লুক। এই মগের মুল্লুক হতে পার্বত্য বাঙালিরা রোহিঙ্গাদের পরিণতি ভোগ করতে মনে হয়, আর বেশিদিন দেরী নাই। তাই পার্বত্য জনগণকে নিজের ভূমি নিজের জীবন জীবিকা নিয়ে ভাবতে হবে। আর সরকারকে ভাবতে হবে কি প্রতিদান এল এই চুক্তি থেকে। চুক্তি পুনঃমূল্যায়ন এখন সময়ের দাবী।
Total Reply(1)
mehadi Hassan palash ১২ মে, ২০১৯, ৩:০২ পিএম says : 4
চুক্তি পুনঃমূল্যায়ন এখন সময়ের দাবী। right you are,
Mohammad Mosharraf ১২ মে, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
একটা কথা মনে রাখতে হবে এক ঘরে দুই ভাইয়ের মধ্যে একভাইকে অনাহারে রেখে অন্যভাইকে বিরিয়ানী খেতে দিলে সে ঘরে শান্তি কোনদিন আসবে না। তাই পার্বত্য বাঙালিদের উন্নয়ন বঞ্চিত রেখে চুক্তির সফলতা দুরহ থেকে যাবে। পাহাড়ে নতুন করে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে।
Total Reply(0)
Tugun Changma ১২ মে, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
শান্তি রে শান্তি গেলা তুমি কোথা রে?
Total Reply(1)
mehadi Hassan palash ১২ মে, ২০১৯, ৩:০২ পিএম says : 4
ask to santu
শাহ আলাম খোন্দকার ১২ মে, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
শান্তিচুক্তির সূচনায় অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন, কথিত এই শান্তিচুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। কারণ, দীর্ঘ ২২ বছর আগে করা এই শান্তিচুক্তি শুরুতেই মেনে নেয়নি সেখানকার তিনটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। বলা হয়, এ তিনটি গোষ্ঠীতে এখনো সক্রিয় রয়েছে প্রায় দুই হাজার সশস্ত্র সন্ত্রাসী। এরা সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় প্রতিষ্ঠা করতে চায় জুমল্যান্ড কিংবা স্বায়ত্তশাসিত সরকার। এই গোষ্ঠী তিনটি হচ্ছে- জনসংহতি সমিতি (জেএসএস- সন্তু), জনসংহতি সমিতি (সংস্কারবাদী) এবং ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। তাদের হাতে ভারি ভারি অস্ত্র রেখে কিভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব আমার বুঝে আসে না!!
Total Reply(1)
mehadi Hassan palash ১২ মে, ২০১৯, ৩:০৩ পিএম says : 4
right
তারেক ১২ মে, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
এভাবে এগোতে থাকলে , একসময় বাংলাদেশ পার্বত্য এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারাবে। এটা নিশ্চিত। আমি অনেক চাকমাদের ফেবু আইডি আর পেজে জুমল্যান্ড নিয়ে নানান প্রচারণা করতে দেখেছি। সুতরাং আমাদের চুপচাপ বসে থাকলে চলবে না। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
Total Reply(1)
mehadi Hassan palash ১২ মে, ২০১৯, ৩:০৩ পিএম says : 4
very alerming
মোহাম্মাদ নাজমুল ইসলাম ১২ মে, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
পাহাড়ে শান্তি ফেরতা হলে, নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে হলে সেনা ক্যাম্প বাড়াতে হবে, অভিযান জোরদার করতে হবে।
Total Reply(0)
Nannu munshi ১২ মে, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
সে সময় সরকারের তরফ থেকে প্রতিবাদী দেশপ্রেমিক জনতাকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, পার্বত্য জনপদে চিরদিনের জন্য শান্তির সুবাতাস বইবে এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ভীত মজবুত হয়ে বাঙালি-পাহাড়ী একসাথে বসবাস করার পরিবেশ গড়ে উঠবে ইত্যাদি। কিন্তু সচেতন দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী মহল, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল মতাদর্শের বাঙালি ও সাধারণ উপজাতিবৃন্দ সরকারের একথায় আশ্বস্ত হতে পারেননি। তারা আশঙ্কা করেছিলেন তথাকথিত শান্তিচুক্তির নামে এ জনপদ দেশের এক দশমাংশ ভৌগোলিক এলাকা ক্রমশ বিচ্ছিন্নতার দিকে এগিয়ে যাবে এবং বিদ্রোহী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অবাধ বিচরণস্থলে পরিণত হবে। চুক্তির ২১ বছরে আজ এ বিষয়টি পর্যালোচনার দাবি রাখে। সরকারের উদ্দেশ্য কতটুকুন বাস্তবায়িত হয়েছে এবং বিদ্রোহী উপজাতিবৃন্দের বিচ্ছিন্নতা কার্যক্রম কতটুকু এগিয়েছে আর সাধারণ বাঙালি জনগোষ্ঠী ও উপজাতীয়রা কেমন আছে?- এ বিষয়গুলো নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। কেননা সচেতন মহল মনে করেন শান্তিচুক্তি নামক অশান্তির বীজ বপণ করে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে গেছে!!!
Total Reply(1)
mehadi Hassan palash ১২ মে, ২০১৯, ৩:০৬ পিএম says : 4
valuable comment. thanks

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন