বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

কুমিল্লায় পানি ময়দা অ্যারারুট মিশ্রিত দুধ

কুমিল্লা থেকে সাদিক মামুন | প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

মানব দেহের পুষ্টি ও শক্তি বৃদ্ধির অন্যতম উপাদান হলো খাঁটি গরুর দুধ। শিশু থেকে নারী-পুরুষ সবারই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকে গরুর দুধ। আর রোজা আসলেই এ গরুর দুধের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। পাল্লা দিয়ে বাড়েও দাম। কিন্তু মিলে না ভেজাল মুক্ত দুধ। দুধ বাজারে মনিটরিং না থাকায় কুমিল্লার কিছু অসাধু ব্যক্তি অধিক লাভের আশায় গরুর দুধে ভেজাল মিশিয়ে মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লার সোয়াগঞ্জ, চৌয়ারা, বরুড়া, বাগমারা, সদরের পাঁচথুবি, আমড়াতলি এলাকা থেকে খাঁটি গরুর দুধ সংগ্রহ করে বেপারীরা। তারপর দুধে পরিমাণমত পানি, ময়দা, অ্যারারুট পাউডার ও কেমিকেল মিশিয়ে সাদা ও গাঢ় করে বাজারে এমনকি বাসা-বাড়িতে বিক্রি হচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকির ভেজাল দুধ। প্রতি লিটার দুধে ৭০০ গ্রাম করে পানি, ময়দা, অ্যারারুট পাউডার মেশানো হয়। সবমিলে পুরো দুধেই ভেজাল।
এভাবেই চলছে কুমিল্লা নগরীতে গরুর দুধের নামে এসব ভেজাল দুধের ক্রয়-বিক্রয়। রমজান মাসে সাধারণ মানুষসহ রোজাদারগণ ভেজাল মিশ্রিত দুধে সবচে বেশি প্রতারিত হচ্ছেন। সাধারণ মানুষ চায় ভালো দুধের নিশ্চয়তা। কেজিতে ৫/১০ টাকা বাড়িয়ে হলেও খাঁটি বিশুদ্ধ তরল দুুধ চায় সবাই। কিন্তু ওইসব ঠকবাজ অসাধু দুধ বিক্রেতাদের প্রতারণা ও ভেজাল রুখবে কে? কেবল রোজাই নয়, বছরের প্রতিদিনই কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জের রাজবাড়ি কম্পাউন্ড, চকবাজার তেরিপট্টি মোড়, শাসনগাছা বাদশা মিয়ার বাজার, পদুয়ার বাজার এলাকায় খাঁটি গরুর দুধের নামে ক্রেতাদের কাছে ভোজল দুধ বিক্রি করে আসছে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা।
নগরীতে রমজানের আগে প্রতিলিটার দুধের দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর রোজার আগেরদিন থেকে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১শ’ টাকা। এ কারণে দুধ বিক্রেতারা অবাধে খাঁটি গরুর দুধের নামে ভেজাল করে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে। গতকাল কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ রাজবাড়ি গেইট বাজার, চকবাজার তেরিপট্টি দুধ বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতি লিটার দুধ ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা জানান, রোজার প্রথমদিন থেকেই দুধের সরবরাহ কমে গেছে। বেশি দামে বেপারীদের কাছ থেকে দুধ কিনতে হচ্ছে বলে বেশি দরে বিক্রি। কিন্তু বাসা-বাড়িতে রোজ দেয় এমন বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরেই দুধ বিক্রি করছেন।
কুমিল্লা নগরীর যেসব স্থানে গরুর দুধ বিক্রি হয়ে থাকে সেখানে তিন বছর আগে মোবাইলকোর্ট অভিযান পরিচালনার পর আর হয়নি। ওই সময়ে তৎকালিন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রূপালী মন্ডল মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে ভেজাল দুধ বিক্রেতাদের অর্থদন্ড দেন। ওই অভিযানে বেরিয়ে আসে বেপারী ও খুচরা বিক্রেতারা কিভাবে দুধে পানি ও অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে গাঢ় করে। বর্তমানে নগরীর রাজগঞ্জ রাজবাড়ি গেইটে, চকবাজার তেরিপট্টি মোড়ে, রাণীর বাজার, টমসমব্রীজ, বাদশা মিয়ার বাজার, পদুয়ার বাজার এলাকায় ছোট ড্রাম, কলস, প্লাস্টিকের বোতলে রেখে ভেজাল দুধ বিক্রি হচ্ছে। ল্যাকটোমিটারের সাহায্যে দুধের ঘনত্ব নির্ণয় বা দুধ খাঁটি কিনা তার অস্তিত্ব পরীক্ষা করার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থাকলেও এব্যাপারে সিটি করপোরেশনের সেনিটেশন বিভাগ উদাসিন। পাশাপাশি ভেজাল দুধের বিরুদ্ধে প্রশাসনের মোবাইলকোর্ট অভিযানও হচ্ছে না। রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষায় ভেজাল দুধের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখে মানুষ খাঁটি গরুর দুধ দিয়ে সেহেরী বা ইফতার পর্বও সারবে এমন প্রত্যাশা কুমিল্লার রোজাদারসহ সকল মানুষের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন