বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ছুটির দিনেও যানজট ভোগান্তিতে নগরবাসী

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও গতকাল তীব্র যানজটে রাজধানীর সড়কগুলো স্থবির হয়ে পড়ে। রমজানে যানজট নিরসনে পুলিশের নেয়া বিশেষ উদ্যোগও কাজে আসছে না। নগরীর সব সড়কেই অসহনীয় যানজটে নগরবাসীর জীবনযাত্রা থমকে গেছে। যানজট নিরসনে কার্যকর ও সমন্বিত কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। এ ছাড়া সড়কে আইন মানার ব্যাপারে পথচারী ও গাড়ি চালকদের উদাসীনতারও অভিযোগ রয়েছে।
গতকাল শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। এ দিনেও রাজধানীর সড়কে বিভিন্ন যানবাহনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। গাড়ির চাকা এক মিনিট ঘোরে তো ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে। এক দিকে প্রচণ্ড গরম অন্যদিকে তিব্র যানজটের ভোগান্তি। জনজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। রমজানের শুরু থেকেই এই ভোগান্তি দিন দিন বেড়েই চলছে। গতকাল ৫ম রোজার দিনও এ ভোগান্তির অন্ত ছিলনা। এতে বিকেলে ঘরেফেরা মনুষ পড়ে বিপাকে। ইফতারের আগে হাজার হাজার মানুষ রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। যানজটে পড়ে অনেকেই রাস্তায় ইফতার করতে হয়েছে।
যানজটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি অনেকে। আবার অনেকে যানজট এড়াতে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাত্রা করেন। গতকাল দিনভর রাজধানীর প্রায় সব রাস্তায় যানবাহনের লম্বা লাইন দেখা গেছে। সকালে বিভিন্ন বেসরকারী অফিসগামী ও বিকালে অফিস ফেরৎ মানুষ ও নানা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়েই নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে চরম দুর্ভোগে। যানজটের কারণে সময়মত পাওয়া যায়নি গাড়ি। মাঝে মধ্যে দু’য়েকটি পাওয়া গেলেও দিতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া। বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটেই অনেককে যেতে হয়েছে নিজ নিজ গন্তব্যে। নগরবাসীর এ ভোগন্তির শেষ কোথায় কেউ জানেনা। সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর কলেজগেটের সামনে সড়ক, পুরো রাস্তায় থেমে থেমে চলছে গাড়ি। একটার সঙ্গে আরেকটা গাড়ি প্রায় লেগে আছে। কলেজগেট থেকে পান্থপথ স্বাভাবিক সময়ে বাসে ২০ মিনিট লাগলেও গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় এই রাস্তাটুকু পার হতে সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময়। তার সঙ্গে রয়েছে অসহনীয় গরম। রোজার মাসের মাঝামাঝি থেকে ঈদের আগ পর্যন্ত রাজধানীবাসীর অনেকটা সময় রাস্তায় কাটে। এ বছর রোজার শুরু থেকেই এই ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। সঙ্গে যোগ হয়েছে মেট্রোরেল সড়ক নির্মাণের কারণে রাস্তা সরু হওয়ার দুর্ভোগ।
রাজধানী শহর ঢাকা ইতোমধ্যে যানজটের শহর হিসেবে বিশ্বে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। শুধু তাই নয়, সময় অপচয় ও ট্রাফিক অদক্ষতা সূচকেও শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। গত ফেব্রæয়ারিতে বহুজাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘নামবিও’র প্রকাশ করা ওয়ার্ল্ড ট্রাফিক ইনডেক্স-২০১৯ এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৮ ও ২০১৭ সালে যানজটে ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়।
একটি বেসরকারী ফার্মের কর্মকর্তা মিরপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ জাফর আহমদ জানান, তিনি মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে বেলা ১১টায় রওনা দিয়ে সোবহানবাগ পৌঁছান বেলা ১টায়। সায়েন্সল্যাব যাওয়ার কথা থাকলেও বাসের গরমে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি নেমে পড়েন সোবহানবাগে। রাস্তা পার হয়ে ফিরতি গাড়িতে বাসায় ফিরবেন। তিনি বলেন, পুরো পথেই রাস্তার দু’পাশে যানবাহন থেমে থেমে চলছে। ঈদের কেনাকাটা অনেকেই রোজার শুরুতেই সেরে ফেলতে চান। তাই বলে এই অবস্থা হবে কে ভেবেছিল?
বেগম আখতার রহমান থাকেন কলাবাগান। বাসা থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হয়ে ৪০ মিনিটেও পান্থপথে উঠতে পারেননি। তিনি বলেন, মেইন রাস্তার এত বাজে অবস্থা যে আমি গলির মুখ থেকেই বের হতে পারছি না। তাকিয়ে তাকিয়ে বাইরে হেঁটে যাওয়া খেটে খাওয়া মানুষদের দেখছিলাম আর ভাবছিলাম রোজা রেখে কী ভয়াবহ কষ্টে পড়েছেন। সঙ্গে তার বান্ধবী আঞ্জুমানা হক। তিনি বলেন, শনিবার ছুটির দিন ঈদের কেনাকাটা, এজন্য এরকম তা আমার মনে হয় না। ঢাকার রাস্তায় এত গাড়ি, এগুলো চলাচল করতে পারছে না। গতি পাবে কোথা থেকে। আমি প্রতিদিন ওয়ারী থেকে বের হয়ে বসুন্ধরা সিটিতে আসি। কী ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। ট্রাফিকের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। আমার মোটামুটি দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লাগে আসতে। বেশিরভাগ সময় গুলিস্তান, পল্টন ও শাহবাগ এলাকায় যানজটে আটকা পড়ে মানুষ। রোজার দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে কী পরিস্থিতি হবে কে জানে।
মাহে রমজানে স্বাভাবিকভাবেই অফিস ফিরতি মানুষের ঘরে ফেরার তাড়া থাকে। এসময় যানবাহনগুলোর মধ্যে দ্রুত চালানোর অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। এ কারণে একদিকে যেমন দুর্ঘটনা ঘটে অন্যদিকে যানজটেরও সৃষ্টি হয়। এছড়া বিশেষজ্ঞদের মতে নগরীর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও সেকেলে। সিগন্যাল বাতিগুলো কাজ না করায় এখনো ট্রাফিক পুলিশের বাঁশি আর লাঠিই ভরসা।
রমজানে যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের আগে থেকে বিশেষ পরিকল্পনা ও কার্যক্রম হাতে নেওয়া প্রয়োজন ছিলো। এছাড়া নগরীর বিশেষ পয়েন্টগুলোতে যানজট নিয়ন্ত্রনে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশও মোতায়েন জরুরি। দেখা গেছে, ঈদের কেনাকাটাসহ বিভিন্ন কারণে রমজানের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই সড়কগুলোতে গাড়ির চাপ যেমন বাড়ে তেমনি যানজটও বাড়ে। তাই এখনই নগর কর্তৃপক্ষসহ ট্রাফিক পুলিশ বিভাগকে দ্রæত যানজট নিরসনে যথা উদ্যোগ নিতে হবে।
রিকশাচালক কামাল মিয়া মোহাম্মদপুর থেকে রিকশা নিয়ে বের হন সকাল ৭টার ভেতর। প্রতিদিন কমপক্ষে ১২টি ভাড়া মারতে হয়, না হলে পোষায় না তার। তিনি বলেন, এখন ৭টার বেশি পারা যায় না। জ্যামে বসে থাকি, অনেক সময় যাত্রী বিরক্ত হয়ে অর্ধেক টাকা দিয়ে চলে যায়। ঠিক কবে নাগাদ স্বস্তির বৃষ্টি আসবে সেই আগাম বার্তা দিতে পারেনি আবহাওয়া অধিদফতর। তারা বলছে, রাজধানীসহ দেশের অনেক অঞ্চলে তাপপ্রবাহ চলছে। গত চার দিন ধরে দেশে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন