বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

গভীর সঙ্কটে বিএনপি

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

শপথ গ্রহণ নিয়ে বিএনপির ইউটার্ন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। দলের অনেক নেতার মধ্যেও কিংকর্তব্য বিমূঢ়তা লক্ষ্য করা গেছে। এতদিন দলীয় শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলে আসছিলেন, দলীয় নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা কেউই শপথ নেবেন না, সংসদে যাবেন না। কিন্তু শপথ গ্রহণের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগদিয়ে ঠাকুরগাঁ থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান দলীয় সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্যকরে শপথ গ্রহণ করেন। দলীয় সিদ্ধান্ত ও শৃংখলা বেতোয়াক্কা করার ‘অপরাধে’ তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তখনই শোনা যাচ্ছির, দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাদে নির্বাচিত অপর চারজন সংসদ সদস্যও শপথ গ্রহণ করতে পারেন। দলীয় অবস্থান অগ্রাগ্য করে। জানা যায়, তাদের শপথ গ্রহণ ঠেকানোর জন্য যতদূর সম্ভব চেষ্টা চালানো হয় তবে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ওই চার জন সংসদ সদস্য ২৯ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করেন। এতে বুঝা যায়, তাদের শপথ গ্রহণ ঠেকানোর চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি। বলা হচ্ছিল, তারা যাতে শপথ গ্রহণ করেন, সে জন্য সরকারী মহল থেকে চাপ ছিল। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চাপে আছে, এমন অভিযোগ করেন। সরকারী মহল থেকে অবশ্য বলা হয়। শপথের ব্যাপারে তাদের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করা হয়নি। আবার ওই চার জন সংসদ সদস্য শপথ গ্রহণ করলেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ নেননি।
দেখা যাচ্ছে, বিএনপির ৬ জন সংসদ সদস্যের ব্যাপারে তিন ধরনের বাস্তবতা পরিদৃশ্য হয়েছে। জাহিদুর রহমানকে বহিষ্কার করা হলেও পরবর্তীতে শপথ নেয়া চার জনের বিরুদ্দে কোনে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তাদের শপথ গ্রহণ সম্পর্কে দলের তরফ থেকে বলা হয়েছে, তাদের শপথের প্রশ্নে দলীয় অনুমোদন আছে। আর .. এই অনুমোদন দলীয় মহাসচিবের ক্ষেত্রে দেয়া হয়নি। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশক্রমেই ওই চার জন শপথ নিয়েছেন। এ থেকে এও বুঝা যায়, দলীয় মহাসচিবের শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্তই একই জায়গা থেকে এসেছে। গত ৩০ এপ্রিল এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখার সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম বিষয়টি খোলাসা করে বলেন, তিনি শপথ গ্রহণ করবেন না, এটি দলীয় সিদ্ধান্ত। ওই চারজন সম্পর্কে তিনি জানান, তাদের শপথ, গ্রহণের ব্যাপারে সম্মতি দেয়া হয়েছে এবং সেটি একটি দলীয় কৌশল। অনুরূপভাবে তার শপথ না নেয়াও একটি দলীয় কৌশল।
কেন বিএনপিকে এমন পরস্পর বিরোধী কৌশল অবলম্বন করতে হলো, সেটা একটি বড় প্রশ্ন। অনেকের মতে, দলের ভাঙন ঠেকানোর জন্যই শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে শপথের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ঠাকুরগাঁর সংসদ সদস্যের শপথ নেয়ার পর অন্য চারজন যে মনোভাব প্রদশন করেন, তাতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, তারা শপথ নেবেনই। তেমন বাস্তবতায় দলে ভাঙন প্রায় অবধারিত ছিল। এ মুহূর্তে ভাঙন দলের জন্য একটি বিপর্যয়। অনেক দিন ধরেই বিএনপির নেতারা অভিযোগ করে আসছিলেন, সরকার বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করে আসছে। সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, বিএনপি ভাঙলে সরকারের লাভ; সেক্ষেত্রে সরকার এ চেষ্টা করতেই পারে। বলা যেতে পারে, ওই চার এমপির শপথ গ্রহণের অনুমতি দিয়ে বিএনপি আর আশু ভাঙন ঠেকিয়েছে। যদিও এই ভাঙন ঠেকানোর কোনো মনে হয়না। দল গড়ে ওঠে সুনির্দিষ্ট নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে। দলীয় নেতা কর্মী দলীয় নীতি-আদর্শের প্রতি আনুগত্য পোষন করে নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলেন। যতদিন দলীয় নেতাকর্মীদের সকলের মধ্যে দলীয় নীতি-আদর্শের প্রতি অনুগত্য অটল থাকে, ততদিন দলে ভাঙনের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। পক্ষান্তরে দলের কোনো নেতা বা কিছু নেতাও তাদের অনুগত কর্মীদের মধ্যে যদি দলীয় নীতি-আদর্শের প্রতি আনুগত্যের ঘাটতি দেখা যায় এবং তাদের মধ্যে অর্থ-স্বার্থ ও ক্ষমতার লালসা জাগ্রত হয়, তবে দলে ভাঙন অবধারিত কখনো কখনো ভাঙন ধামাচাপা দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত শেষ রক্ষা হয় না। আবার এও দেখা যায়, প্রতিপক্ষের প্ররোচনা, প্রলোভন, ও চাপে কোনো দলে ভাঙন দেখা দিলেও মূল দলের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। বরং যারা দল ভেঙে দল গড়েন, তারা পরিত্যাক্তহন। আমরা জানিনা, চার সংসদ সদস্যের শপথ নেয়ার অনুমতি দিয়ে বিএনপি আসলে কতটা লাভবান হয়েছে। এ প্রশ্নে জনগণের মধ্যে তো বটেই। দলের নেতা কর্মীদের মধ্যেই বিভ্রান্তি, ক্ষোভ হতাশা বিস্তার লাভ করেছে।
বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত দলকে তার অবস্থান থেকে ... করেছে, দল জনগণেল কাছে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে। এবং দলের প্রতি তাদের অবস্থা ও বিশ্বাস কমিয়েছে এটা নেতাকর্মীদের লজ্জায় ফেলেছে, ... জবাব করে দিয়েছে। বিএনপি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে নির্বাচন হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি। বিরোধী কোনো দলই দেয়নি। আন্তর্জাতিক মহলও ওই নির্বাচনকে গণতনত্র সঙ্গত অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলে স্বীকার করেনি।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন সম্পর্কে বিএনপিসহ সকল বিরোধীদলের অভিযোগ প্রায় অভিন্ন। মোটাদাগে তাদের অভিযোগ হলো। ১০-৩০ ডিসেম্বরর আগের রাতেই নির্বাচন হয়ে যায়। সরকারী দল ও জোটের প্রার্থীদের পক্ষ রাতে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে রাখা হয়। ২০-৩০ ডিসেম্বর ও জাল ভোট, ভোট ডাকাতি, অনিয়ম-দুর্নীতি সমানে চলে ফলে বিরোধীদলগুলোর অধিকাংশ প্রার্থী ভোট গ্রহণ চলাকালেই নির্বাচন বর্জন করেন। তাদের অভিযোগের মধ্যে আরো আছে: নির্বাচন কমিশন, সিভিল ও পুলিশ প্রশাসন এবং ক্ষমতাসীন দল একজোট হয়ে এই বিতর্কিত, অগণতান্ত্রিক, অগ্রহনযোগ্য নির্বাচন উপহার দিয়েছে। অতএব তারা ঘোষনা দিয়ে নির্বাচন প্রত্যাখান করেছে এবং অবিলম্বে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। বলা বাহুল্য, নির্বাচন যখন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, তখন দলীয় নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ ও সংসদে যোগদানের কোনো প্রশ্ন ওঠতে পারে না। বিএনপির তরফ থেকে শপথ গ্রহণ না করার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বিভিন্ন সময়ে বক্তব্যে দেয়া হয়েছে। আবার এখন ওই চার সংসদ সদস্যের শপথ গ্রহণের পর দলের পক্ষ থেকে শপথ গ্রহণের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বক্তব্য প্রদান করা হচ্ছে। পর্যবেক্ষণের মতে, দলীয় অবস্থানের এই আমূল পরিবর্তন এতটা বড় ধরনের ডিগবাজী, যা কারো পক্ষেই সহজভাবে গ্রহণ করা বা মেনে নেওয়ার সম্ভব নয়।
পত্র প্রত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে একটি প্রসঙ্গ বিশেষভাবে সামনে আনা হয়েছে। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে প্যারোলে বা জামিনে মুক্তি দেয়ার বিষয়ে নাকি সরকার ও নিএনপির মধ্যে একটি গোপন সমঝোতা হয়েছে। এই সমঝোতার ভিত্তিতেই বিএনপির চার সংসদ সদস্য শপথ গ্রহণ করেছেন। এ বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমাণ বা তথ্য পাওয়া যায়নি। সরকারী মহল থেকে বিষয়টি নাচক করে দেয়া হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকেও এমন সমঝোতার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। বাস্তবের আলামত থেকেও মনে হয় না, এমন কোনো সমঝোতা হয়েছে। প্যারোলো মুক্তির বিষয়ে স্বয়ং বেগম খালেদা জিয়া নেতিবাচক অভিমত দিয়েছেন বলে জানা গেছে। জামিনে তার মুক্তি পাওয়ার বিষয়টিও দূরঅস্ত...। সুতরাং এ প্রসঙ্গ বাদ। এদিকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শপথ না নেয়ার বিষয়টি এখনো রহস্যাকৃতই হয়ে আছে। প্রশ্ন উঠেছে, দলীয় সিদ্ধান্তে অন্যরা যদি শপথ নিতে পারেন, তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয় কেন? এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় নানা জল্পনা-কল্পনা প্রকাশিত হয়েছে। বলা হয়েছে শপত না নেয়ায় তার আসনটি শূন্য হওয়ায় ওই আসনে উপনির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া কিংবা জিয়া পরিবারের অন্যকেউ প্রার্থী হতে পারেন। সেক্ষেত্রে তিনি নির্বাচিত হয়ে আসলে সংসদে গুরুত্বপূর্ণ আসন পেতে পারেন। এটাই দলের একটি কৌশল কিনা, তার সপক্ষে যথেষ্ট তথ্য অবশ্য নেই।
চার সংসদ সদস্যের শপথ গ্রহণের পর দলের মধ্যে মতভেদ তৈরি হয়েছে বলে পত্রপত্রিকার মারফত জানা গেছে। শুধু দলের মধ্যেই নয়, ২০ দলীয় জোটের মধ্যে ও এনিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি ইতোমধ্যে ২০ দলীয় জোট ছেড়েছে। দলের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ক্ষোভের কারণে নয়, বিএনপি জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বলেই তারা ২০ দলীয় জোট ছেড়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন আছে। ১২০দিন এই নির্বাচন নিয়ে সরকারকে প্রশ্ন করার পর ১২১ দিনের মাথায় সংসদে যোগদানের .... নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে? এই কারণে বাংলাদেশের সবার মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
২০ দলের অন্যান্য শরীক বিএনপির প্রতি যে খুব সন্তুষ্ট ও এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। তারা বিভিন্ন সময়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে জোট ছাড়ার কথা কখনো বলেনি। এই প্রথম ঘোষণা দিয়ে একটা দল জোট ছাড়ালো। আমরা জানি, এর আগে ২০ দলের শরীক ইসলাম ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ন্যাপ, এনডিপি, ও ন্যাপ ভাসানীর একাংশ বেরিয়ে গেছে। ২০ দলের ছোট শরীপক দলগুলোর অভিযোগ, বিএনপি তাদের, এমনকি জোটকেও অবমূল্যায়ণ করেছে। ২০ দলের বাইরে অবস্থিত অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু করার সময় বিএনপি ২০ দলের শরীকদের সুস্পষ্ট মতামত নেয়ার গরজ দেখায়নি। বেগম খালেদা জিয়া বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার নির্দেশনা দিয়ে ছিলেন। এ বিষয়ে ২০ দলের শরীকদের কোনো দ্বিমত ছিলোনা। তারাও একে সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু ঐক্য প্রক্রিয়ার নেট ফলাফলে দেখা গেলো। গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের শীর্ষ নেতা হয়ে গেছেন। বিএনপি ছাড়া জাতীয় ঐক্যফণ্টের ২০ দলের আর কেউ নেই। ঐক্যফ্রণ্টে যোগ দিয়েছে আসম আবদুর রবের জাসদ, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য ও কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।
এর পরের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেয়ার প্রয়োজন নেই। সকলেই জানেন, জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের তরফে বেশ কিছু দাবি সরকারের কাছে উত্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো দাবিই সরকার মানেনি। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ইত্যাদি ইস্যু সরিয়ে রেখে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টে ও ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ও ফলাফল কী হয়েছে, কারো অজানা নেই। অনেকেই মনে করেন, একটি মাস্টার মাইন্ড এক্ষেত্রে কাজ করেছে। সংশ্লিষ্ট সবাই সেই মাস্টার মাইন্ডের পরিকল্পনা অনুযায়ী স্ব স্ব ভূমিকায় অভিনয় করে গেছেন। লোক দেখানোর জন্য, সকল দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা এবং যেনতেন প্রকারণে ক্ষমতাসীনদের পুনরায় ক্ষমতায় বসানো ছিল মাস্টার মাইন্ডের প্রকৃত উদ্দেশ্য। সে উদ্দেশ্য, বলা বাহুল্য। ষোলআনা সফল হয়েছে। বাকী ছিল বিএনপির ও জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টেরর নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ। সেটাও অত্যন্ত সুচারুভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে।
বলা মোটেই অসঙ্গ হবে না, বিএনপি তার রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতার অনেকখানি হারিয়েছে। নীতি-আদর্শের প্রতি অবিচল থাকা যে কোনো রাজনৈতিক দলের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিৎ। বিগত ১০ বছরের ও বেশি সময় ধরে অতন্ত কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে বিএনপি। তার যেমন ক্ষতি হয়েছে, তার নেতাকর্মীদেরও অবর্ণনীয় জুলুল নির্যাতন ও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু বিগত নির্বাচনের আগ থেকে এখন পর্যন্ত এমন কিছু সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ বিএনপি নিয়েছে, যা প্রশ্নবিদ্ধ। এখন দলের যে হাল, ২০ দলের যে, না ঘরকা না ঘাটকা অবস্থা, তার জন্য প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তগুলোর দায় অস্বীকার করা যাবে না। ২০ দলকে পেছনে ফেলে জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টকে সামনে আনা, শীর্ষ নেতৃত্বে ড. কামাল হোসনকে টেনে আনার খেসারত এখন বিএনপিকে দিতে হচ্ছে। ২০ দলীয় জোটের প্রধান দল যেমন বিএনপি তেমনি জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের ও প্রধান দল বিএনপি। সেক্ষেত্রে নীতি-সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রশ্নে তার ভূমিকাই প্রধান থাকা উচিৎ ছিল। ২০ দলের ক্ষেত্রে থাকলেও জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের ক্ষেত্রে ছিলনা। এখন দেখা যাচ্ছে, গণফোরামে হযবরল অবস্থা। জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের বিএনপি বাদে অপর অংশীদাররা অসম্ভব। কাদের সিদ্দিকী ইতোমধ্যেই আলটিমেটাম দিয়েছেন। অপর দুই শরীকও জাতীয় ঐক্যফ্রণ্ট ত্যাগ করার চিন্তাভাবনা করছে। ২০ দলের শরীকরা এর মধ্যেই যতটা সোচ্চার হয়ে উঠেছে তাতে বিএনপির পক্ষে গণফোরামের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে রাখাও কঠিন। এমতাবস্থায় বিএনপিকে তার অস্তিত্ব রক্ষাও গণভিত্তি সুদুঢ় করার ক্ষেত্রে নতুন করে সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, বিএনপি কি অতীতের ভুলভ্রান্তি দূরে ঠেলে দিয়ে গণমুখী রাজনীতির ধারায় ফিরে আসতে পারবে? বিএনপিকে মনে রাখতে হবে, রাজনীতিতে তার হাত গৌরব ফিরিয়ে আনতে হলে জনগণের কাছেই যেতে পারে। জনগণকে সংগঠিত করতে হবে, জনগণের পক্ষে আন্দোলনে নামতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে তার সহযোগী তো আছেই ২০ দলের পরীক্ষিত শরীকরা। এছাড়া অন্যান্য সমমনা এবং গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাকামী দল ও তার পক্ষে অবস্থান নিতে পারে। বিএনপি যে গভীর সংকটে পড়েছে। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ জন্য নিজেকে মোটেই দায়মুক্ত ভাবতে পারেনা। সুতরাং সংকট উত্তরণে তাকেই যথাযথ ভূমিকা ও অবস্থান নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Younus Shohel ১৩ মে, ২০১৯, ২:১২ এএম says : 0
বিএনপি যা করবে করুক,তার কর্মীরা এখন কি করবে তা বল আগে।
Total Reply(0)
Abbas Ahmed ১৩ মে, ২০১৯, ২:১২ এএম says : 0
জালিমকে আল্লাহ পছন্দ করেন না।এটা ভাবার কারন নাই যে এ জুলুমের বিচার আল্লাহ করবেন না ।
Total Reply(0)
Halimbhuyan Abdul ১৩ মে, ২০১৯, ২:১২ এএম says : 11
আল্লাহ, তুমি বেগম জিয়াকে সুস্ত করে দাও,তাকে তুমি মুক্ত করে দাও,এই জালিমের হাত থকে দেশ টা কে বাচাও দেশের মানুষ কে বাচাও।
Total Reply(0)
Abdur Rahman ১৩ মে, ২০১৯, ২:১৩ এএম says : 0
আওমীলীগ ছাই খালেদা জিয়াকে জেলের ভিতরে হত্যা করতে !!! বিএনপির নেতারা বসে বসে আঙ্গুল চোসক ।
Total Reply(0)
Khan Ashraful Alam ১৩ মে, ২০১৯, ২:১৩ এএম says : 0
বিএনপির বতর্মান হাইকমান্ড প্রায় সবাই জেলের বাইরে আছেন, কিন্ত নেত্রী কারাগারে! তারা নেত্রীর মুক্তির ব্যাপারে অতটা আন্তরিক নন, যদি আন্তরিক হতেন তবে আন্দোলন গড়ে তুলতেন। তারা সরকারী হুমকিতে আতংকে থাকেন, আমাকে না আবার জেলে ঢুকায়!
Total Reply(0)
বিদ্যুৎ মিয়া ১৩ মে, ২০১৯, ১০:২৩ এএম says : 0
বিএনপি যে গভীর সংকটে পড়েছে। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ জন্য নিজেকে মোটেই দায়মুক্ত ভাবতে পারেনা। সুতরাং সংকট উত্তরণে তাকেই যথাযথ ভূমিকা ও অবস্থান নিতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন