শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

এক দশকে মার্কের সম্পদ আধা ট্রিলিয়ন ডলার

ফেসবুক ভেঙে ফেলার সময় এসেছে-৩

নিউ ইয়র্ক টাইমস | প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

সামাজিক মাধ্যম বিরাট ব্যবসায় পরিণত হওয়ার পর সাংবাদিকরা এদিকে তীক্ষ্ন নজর রেখেছেন। আমাদের সেই প্রথম দিকের দিনগুলো থেকেই মার্ক উচ্চাকাক্সক্ষা বর্ণনার ক্ষেত্রে ‘প্রাধান্য’ শব্দটি ব্যবহার করে আসছে। তখন থেকে আমরা শুধু মাইস্পেসই নয়, ফ্রেন্ডস্টার, টুইটার, টাম্বলর, লাইভজার্নাল ও অন্যান্যসহ গোটা সামাজিক নেটওয়ার্কের সাথে প্রতিদ¦›িদ্বতা করেছি। তাদের পরাজিত করার চাপ নতুন উদ্ভাবন এবং ফেসবুককে বৈশিষ্ট্য প্রদানকারী ফিচারের দিকে এগিয়ে নিয়েছে। সহজ, সুন্দর ইন্টারফেস, নিউজফিড, রিয়াল-ওয়ার্ল্ড পরিচিতি ও আরো কিছুর সাথে যোগসূত্র রচনা করেছে। 

বছরের পর বছর প্রতিযোগিতার এই অভিযাত্রায় মার্ক ২০১২ সালে ইনস্টাগ্রাম ও ২০১৪ সালে হোয়াটসঅ্যাপসহ কয়েক ডজন অন্য কোম্পানির মালিক হয়। এসব পদক্ষেপে আমার দৃষ্টিতে কোনো অনৈতিক বা সন্দেহজনক কিছু ছিল না।
গ্রীষ্মের এক রাতে মাইস্পেস বিক্রির সময় আমার মনে আছে, মার্কের সাথে কাজ থেকে বাড়ি ফেরার সময় কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার ও ডিজাইনারের সাথে আমরা আলোচনা করছিলাম। আমি ছিলাম ইনফিনিটি এস.ইউ.ভি’র প্যাসেঞ্জার সিটে। মার্ক একটি পুরনো জিপ চালাত। আমাদের বিনিয়োগকারী পিটার থিয়েল ওই জিপটির বদলে মার্কের ব্যবহারের জন্য এ গাড়িটি কিনেছিলেন। আমরা যখন ভ্যালপারাইজো এভিনিউয়ের ডানদিকে মোড় নিলাম তখন মার্ক তার ওপর বিপুল চাপের কথা স্বীকার করল। বলল, এখন এত মানুষকে আমরা চাকরি দিয়েছি যে আমাদের ব্যর্থ হওয়ার উপায় নেই।
ফেসবুক একটি প্রকল্প থেকে আমাদের আবাসিক স্থানে পরিণত হল। একটি বিশৃঙ্খল গ্রীষ্মাবাস থেকে আইনজীবী ও একটি মানব সম্পদ বিভাগসহ তা রূপ নিল একটি উল্লেখযোগ্য কোম্পানিতে। আমাদের কর্মচারির সংখ্যা ছিল ৫০ এবং তাদের টেবিলে খাবার যোগাবার জন্য পরিবারগুলো ফেসবুকের উপর নির্ভরশীল ছিল। আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম ও নিজের মনে ভাবলাম- এটাকে কখনোই থামতে দেয়া যাবে না। এটা যত বড় হবে, একে সচল রাখার জন্য আমাদের তত বেশি পরিশ্রম করতে হবে।
এর এক দশকেরও বেশি সময় পর, ফেসবুক প্রাধান্য লাভের পুরস্কারটি পায়। তার সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় আধা ট্রিলিয়ন ডলার। আমার হিসেবে বিশে^র ৮০ শতাংশেরও বেশি সামাজিক নেটওয়ার্কিং রাজস্বের উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। এটা ছিল এক শক্তিশালী মনোপলি, সকল প্রতিদ্ব›দ্বীকে গ্রাস করে ফেলে এবং সামাজিক নেটওয়ার্কিং ক্যাটেগরি থেকে প্রতিযোগিতাকে বিলুপ্ত করে।
এটাই ব্যাখ্যা করে যে কেন, এমনকি ২০১৮ সালের গোলযোগের বছরেও শেয়ার প্রতি ফেসবুকের আয় আগের বছরের চেয়েও বিস্ময়কর ভাবে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। (আমি ২০১২ সালে আমর ফেসবুকের শেয়ারগুলো বিক্রি করে দেই। আমি সরাসরি কোনো সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিতে বিনিয়োগ করিনি।)
ব্যবহারের পরিসংখ্যান থেকেও ফেসবুকের মনোপলি দৃশ্যমান। প্রাপ্ত বয়স্ক আমেরিকানদের প্রায় ৭০ শতাংশ সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে। তাদের এক বিপুল অংশই ফেসবুক বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি মূল ক্ষেত্র ব্যবহার করে। এক তৃতীয়াংশ ইনস্টাগ্রাম এবং এক পঞ্চমাংশ হোয়াটসঅ্যাপ। বিপরীত দিকে এক তৃতীয়াংশেরও কম পিন্টারেস্ট, লিংকডইন ও স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহার করে। হালকা ধরনের বিনোদন হিসেবে যার শুরু হয়েছিল তাই সকল বয়সী মানুষের অনলাইন যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম পরিণত হয়।
দেখা যায় যে ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের মোট সংখ্যা যে কোনো প্রতিদ্ব›দ্বী প্ল্যাটফর্মের সংখ্যাকে বহুদূর ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি লোকে যখন ফেসবুক ছাড়তে চায়, তারা দেখে যে তাদের কাছে আর কোনো অর্থবহ বিকল্প নেই যেমনটি আমরা ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেংকারির পরবর্তীতে দেখি।
গোপনীয়তা নিয়ে শঙ্কিত ও ফেসবুকের ভালো সুনামের ওপর আস্থার অভাবের কারণে বিশ^ব্যাপী ব্যবহারকারীরা ‘ডিলিট ফেসবুক’ আন্দোলন শুরু করে। পিউ গবেষণা কেন্দ্রের মতে এক চতুর্থাংশ তাদের ফোন থেকে একাউন্ট বাতিল করে, তবে অনেকেই তা করে অস্থায়ী ভাবে।
আমি একাধিক বন্ধুর কাছে শুনেছি, আমি ফেসবুক একেবারেই ছেড়ে দিয়েছি। ইনস্ট্রাগ্রামকে ধন্যবাদ। ইনস্টাগ্রাম যে ফেসবুকেরই অঙ্গ, তা জেনেই তারা এ মন্তব্য করে। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় যে লোকজন গণহারে কোম্পানিকে পরিত্যাগ করেনি। কথা হচ্ছে, তারা কোথায় যাবে?
ফেসবুকের প্রাধান্য ইতিহাসের কোনো দুর্ঘটনা নয়। কোম্পানির পরিকল্পনা ছিল এক কথায় প্রতিটি প্রতিযোগীকে হারানো। নিয়ন্ত্রক হওয়া এবং কখনো অঘোষিতভাবে কখনো প্রকাশ্যে সরকার তা অনুমোদন করেছে। কোম্পানির উপর প্রাধান্য বিস্তারের সরকারের চেষ্টায় এফ.টি.সি. ২০১১ সালে একটি সম্মতি ডিক্রি জারি করে যে ব্যবহারকারীরা ইতিমধ্যে যেসব বিষয়ে সম্মতি দিয়ে তার বাইরে ফেসবুক কোনো ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করতে পারবে না।
ফেসবুক এ ডিক্রিকে একেবারেই পাত্তা দেয়নি। গত মাসে কোম্পানি আয়ের ব্যাপারে পূর্বাভাস দেয় যে তাতে তার অবহেলার জন্য জরিমানা হিসেবে ৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পরিশোধ করবে। এটা ছিল কব্জির ওপর এক চড়। ফেসবুকের শেয়ার ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তার ভান্ডারে আসে ৩০ বিলিয়ন ডলার। তার জরিমানার ৬ গুণ বেশি।
এফ.টি.সি.র বড় ভুল ছিল ফেসবুককে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ অধিগ্রহণ করতে দেয়া। ২০১২ সালে নতুন প্ল্যাটফর্মগুলো ফেসবুকের গোড়ালি চেপে ধরছিল। কারণ সেগুলো তৈরি হয়েছিল স্মার্টফোনের জন্য। যেটা টেনে ধরার জন্য ফেসবুক লড়াই করছিল। মার্ক সেগুলো কেনার মাধ্যমে জবাব দিয়েছিল এবং এফ.টি.সি.তা অনুমোদন করে।
ইনস্টাগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপের কোনো অর্থপূর্ণ রাজস্ব নেই। কিন্তু তারা অবিশ্বাস্য রকম জনপ্রিয়। ইনস্টাগ্রাম অধিগ্রহণ ফটো নেটওয়ার্কিং-এ ফেসবুকের প্রাধান্য সংরক্ষণের নিশ্চয়তা দিয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ মোবাইল রিয়েল-টাইম মেসেজিং-এ নতুন প্রবেশাধিকার দিয়েছে। এখন মার্কের সাথে প্ল্যাটফর্ম ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিরোধের কারণে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের প্রতিষ্ঠাতারা কোম্পানি ত্যাগ করেছেন। কিন্তু তাদের সাবেক সম্পত্তিগুলো ফেসবুকের কাছেই রয়ে গেছে যা তার সাম্প্রতিক উন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখছে। (চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
প্রিয়তা ১৩ মে, ২০১৯, ১০:২৭ এএম says : 0
ফেইসবুক বন্ধ করে দিলে আরও ভাল হবে অন্তত লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে পারব
Total Reply(0)
Rakib ১৩ মে, ২০১৯, ১০:২৭ এএম says : 0
বন্ধ করে দিলেও সমস্যা নেই
Total Reply(0)
আকাশ ১৩ মে, ২০১৯, ১০:২৮ এএম says : 0
বন্ধ করে দিক সমস্যা নেই।ফেসবুকে ভাল চেয়ে খারাপ হয়েছে.... এর কারণে কত মারামারি, খুন, দেশে অশান্তি হানাহানি কত কি...। বন্ধ হক।
Total Reply(0)
শফিক রহমান ১৩ মে, ২০১৯, ১০:২৮ এএম says : 0
ধারাবাহিক এই লেখাটিতে যুক্তি আছে
Total Reply(0)
Najir ahammed ১৩ মে, ২০১৯, ১০:৩০ এএম says : 0
If close very fine for Bangladesh
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন