বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ভেজাল খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

খাদ্যে ভেজালের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশে বিশুদ্ধ খাদ্যপণ্য পাওয়া একপ্রকার দুষ্কর। চাল, ডাল, তেল, মাছ-মাংশ, শিশু খাদ্য, পানি থেকে শুরু করে এমন কোন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য নেই যাতে ভেজাল থাকে না। ফলে ভেজাল খাবারেই দেশের মানুষ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। এর প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থাও পরিলক্ষিত হয় না। মাঝে মাঝে জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করে কেউ আদালতে রিট করলে আদালত নির্দেশনা দেন। তবে এ নির্দেশনা অনেক সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর করতে খুব একটা দেখা যায় না। মাঝে মাঝে লোক দেখানো ভেজাল বিরোধী অভিযান চলে। কিছু নকল কারখানা সিলগালাও করা হয়। তারপর আবার সেই আগের অবস্থায় ফিরে যায়। রোজা এলে খাদ্যে ভেজালের বিষয়টি সামনে চলে আসে। পত্র-পত্রিকায় ব্যাপক লেখালেখি হয়। তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কিছুটা হলেও টনক নড়ে। শুরু করে ভেজাল বিরোধী অভিযান। তবে গত রবিবার খাদ্যে ভেজাল সম্পর্কিত এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত নতুন করে আদেশ দিয়েছেন। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় নিম্নমান প্রমাণিত হওয়ায় ৫২টি খাদ্যপণ্য অবিলম্বে বাজার থেকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এসব খাদ্যপণ্য বিক্রি ও সরবরাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ এবং পণ্যগুলো ধ্বংস করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতি এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গতকাল এ আদেশ দেন। যতক্ষণ পর্যন্ত ওই ৫২ পণ্য বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় পুনরায় উত্তীর্ণ না হচ্ছে, ততক্ষণ এসব পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মাদকবিরোধী অভিযানের মতো খাদ্যে ভেজাল মেশানোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীরও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। ৫২টি পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার বা জব্দ চেয়ে কনসাস কনজ্যুমার সোসাইটির (সিসিএস) পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান জনস্বার্থে গত ৯ মে এ রিট দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআইয়ের দুই কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে আদালতে হাজির হতে বলেন। আদালত সব পক্ষের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন।
উচ্চ আদালত জনস্বার্থে বিভিন্ন সময়ে যানজট নিরসন, দখল-দূষণ থেকে শুরু করে অন্যান্য বিষয়ে প্রায়ই কল্যাণমূলক অদেশ-নির্দেশ দেন। সেসব আদেশ-নির্দেশ বাস্তবায়ন করা যাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য তারা নানা অজুহাতে তা পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। খাদ্যে ভেজাল নিয়ে আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা সময়োপযোগী। দেখা যাচ্ছে, ভেজাল খাদ্য উৎপাদনে নামী-দামী কোম্পানিগুলোও অভিযুক্ত হচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের পণ্যের প্রতি সাধারণ মানুষ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে ভোগ করেন, সেসব প্রতিষ্ঠানের পণ্যে যখন ভেজাল পাওয়া যায়, তখন যাওয়ার আর কোনো জায়গা থাকে না। এমনিতেই আমাদের দেশের পণ্যের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার সংকট দীর্ঘকাল ধরেই রয়েছে। দেশে উৎপাদিত পণ্য মানেই নিম্নমানের ও ভেজাল এমন একটি ধারণা বদ্ধমূল হয়ে রয়েছে। ফলে বিদেশ থেকে আমদানি করা নিম্নমানের পণ্যও তাদের কাছে অতি উন্নত মনে হয়। এ পরিস্থিতির মধ্যেই দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যখন প্রাণপণ চেষ্টা করে দেশেই উন্নত মানের পণ্য উৎপাদনের চেষ্টায় ব্রত এবং ভোক্তাদেরও কিছুটা আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে, তখন কিছু নামকরা কোম্পানির ভেজাল পণ্য, এ অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। ভোক্তাদের আস্থা নষ্ট করছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। খাদ্যপণ্যে ভেজালের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ, অন্যায় এবং ন্যায়-নীতির পরিপন্থী। তারপরও এই গুরুতর অপরাধ আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনেই ঘটছে। যেন কিছু করার নেই। মাঝে মাঝে ভেজাল নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কিছুটা নড়েচড়ে বসে। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে। কিছু পণ্য জব্দ করা হয়, কিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়, কাউকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডও দেয়া হয়। তারপর অভিযানে ভাটা পড়লে পুনরায় শুরু হয়। এ যেন ভেজাল নিয়ে এক ধরনের ইঁদুর-বেড়াল খেলা চলে। খাদ্যে ভেজালের বিষয়টি মানুষের কত ক্ষতি করছে এবং ধীরে ধীরে যে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে-এ বিষয়টি ভেজালকারী এবং ভেজাল বিরোধী প্রতিরোধে যেসব সংস্থা রয়েছে, তারা যথাযথভাবে উপলব্ধি করলে ভেজাল বলে কিছু থাকত না। বলা যায়, ভেজালকারী এবং ভেজাল প্রতিরোধ সংস্থাগুলোর সাথে এক ধরনের সমঝোতা রয়েছে। তা নাহলে ভেজাল কোন কিছুই বাজারে থাকত না। ভেজালের সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে, ভবিষ্যত প্রজন্ম শিশুরা। তাদের খাদ্যেই বেশি ভেজাল দেয়া হচ্ছে। দুধ থেকে শুরু করে জুস জাতীয় পানীয়, চকলেট, সাপ্লিমেন্টারি ফুডে ব্যাপক হারে ভেজাল পাওয়া যায়। ভেজালকারিরা জেনেবুঝেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অন্যদিকে ভেজাল খাদ্যপণ্যের মাধ্যমে মানুষকে ক্যান্সারের মতো ভয়ংকর রোগ-ব্যাধিতে সংক্রমিত করছে। খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী, প্রস্তুতকারী এবং সরবরাহকারীদের মধ্যে যদি ন্যূনতম বিবেক-বোধ কাজ করত, তাহলে এ কাজটি কখনোই করত না।
উন্নত বিশ্বে খাদ্যে ভেজালের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। যে প্রতিষ্ঠানের পণ্যে ভেজাল পাওয়া যাবে সে প্রতিষ্ঠানকে চিরতরে বন্ধ করে দেয়া হয়। কোনো কোনো দেশে উৎপাদনকারীকে সর্বোচ্চ শাস্তিও প্রদান করা হয়। আমাদের দেশে ইদানিং ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে আইন প্রণয়নের দাবী উঠেছে। খোদ খাদ্যমন্ত্রী এ প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। আমরা মনে করি, ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধ এবং বন্ধে যে কোনো উপায় ও পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। যে আইন করলে এবং যেভাবে পদক্ষেপ নিলে ভেজাল খাদ্য চিরতরে উচ্ছেদ করা যায়, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সিটি করপোরেশন, বিএসটিআই, খাদ্য মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ভেজালকারী যেই হোক এবং যত ক্ষমতাধরই হোক না কেন, তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ করে দিনের পর দিন মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে, তা হতে দেয়া যায় না। ভেজালকারির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। তারা যাতে কোনো ধরনের অনুকম্পা বা সুযেগ না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Masiur Rahaman ১৪ মে, ২০১৯, ৪:১৮ পিএম says : 0
Why Did not Give 52 Food List of ban Items .Please Give list
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন