শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

পাটকল শ্রমিকদের দুর্বিষহ জীবন

রাজপথে আত্মাহুতির হুমকি!

খুলনা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০১৯, ৩:৪৬ পিএম

ঈদ সমাগত অথচ এখনো পর্যন্ত শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এ জন্য শ্রমিকদের মাঝে উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।
পাটকল শ্রমিকদের লাগাতার ধর্মঘট চললেও সরকারের পক্ষ থেকে সমস্যা উত্তরণে কোনো ঘোষণা নেই। বকেয়া মজুরিসহ ৯ দফা দাবি না মানলে শ্রমিকরা রাজপথে আত্মাহুতির হুমকি দিয়েছেন। রমজানে টানা আন্দোলন চালিয়ে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়লেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
সাধারণ মানুষের প্রতি দয়া মায়া দেখানো ইসলাম ধর্মের কথা হলেও বতর্মান সরকারের সকল দপ্তর যেন পাটকল শ্রমিকদের প্রতি পাথর হয়ে বসে আছে বলে জানালেন প্লাটিনামের শ্রমিক তরিকুল।
পরজনমে যেন আমাদের কাউকে আর পাটকল শ্রমিক করে না পাঠায় এমন দোআ করলেন খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিক শরিফুল।
বাস্তহারা এলাকার বাসিন্দা পাটকল শ্রমিক তোফাজ্জেল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, ১৩ সপ্তাহের মজুরি নাই। আমাদের পরিবারগুলো দুর্বিষহ জীবন পার করছে। স্থানীয় মুদি দোকানিরা বাকি দিচ্ছে না আবার শ্রমিকদের কাছে টাকা চাইতেও পারছে না। ক্ষুধার্ত সন্তানদের কষ্ট আর সহ্য হচ্ছে না। এভাবে পরিবারের সদস্যদের ধুকে ধুকে মরার দৃশ্য দেখার চেয়ে রাজপথে জীবন দিয়ে দেয়া অনেক ভালো।
মুদি দোকানদার আব্দুস ছাত্তার বলেন, তার পুঁজি মাত্র ৩ লাখ টাকা। গত তিন মাসে সে নিজেও শ্রমিকদের বাকিতে চাল ডাল বিক্রি করেছে ৫ লাখ টাকার। দুই লাখ টাকা সে মোকামে আড়তদারদের কাছে দেনা। এখন তার দোকানে দেওয়ার মত কিছুই নেই। এভাবে খুলনার পাট শিল্পাঞ্চলের মানুষ আবারও শেষ হতে বসেছে।
এদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী সোমবার খুলনা জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে এক সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া মজুরির প্রদানের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে আশ্বাসে এখন আর শ্রমিকদের চলছে না। তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
অব্যাহত আন্দোলনে এবার শিল্প এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে চরম উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। বিল না পেয়ে এবং বিজেএমসির নিরব ভূমিকায় আন্দোলনরত শ্রমিকরা পর্যায়ক্রমে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে। শ্রমিকদের হাতে টাকা নেই, পেটে ভাত নেই, বকেয়া মজুরির পাশাপাশি সমাগত ঈদুল ফিতরে বোনাস পাবে কি না এমন ভাবনা ও দুশ্চিন্তায় রয়েছে শ্রমিকরা।
খুলনায় বৃষ্টিহীন বৈশাখের তপ্ত রোদ। তীব্র গরমে রোজা রেখে হাফিয়ে উঠেছে মানুষ। ঠিক এমনই মুহূর্তে পাটকল শ্রমিকদের বিক্ষোভ মিছিল, রাজপথ-রেলপথ অবরোধে উত্তাল হয়ে উঠেছে খুলনার শিল্পাঞ্চল। অবরোধের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সড়ক ও রেলপথের যাত্রীদের।
মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে খুলনার খালিশপুর শিল্প এলাকার শ্রমিক কলোনিতে। কোনোভাবেই পরিবারের ভরণপোষণ মেটাতে পারছেন না সরকারি পাটকলের শ্রমিকরা। ঠিকমতো সন্তানদের মুখে আহার তুলে দিতে না পারার কষ্ট ছাপিয়ে তাদের পড়ালেখা নিয়ে চিন্তিত শ্রমিক পরিবারগুলো।
বুধবার টানা ১০ম দিনের শ্রমিক আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে খুলনার খালিশপুর শিল্পাঞ্চল। লাগাতার ধর্মঘটে শ্রমিকরা মিলগেটে বিক্ষোভ করার পাশাপাশি ৩ ঘণ্টা রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, আলীম, ইস্টার্ন, যশোরের কার্পেটিং ও জেজেধাই জুট মিলের অর্ধলাখ শ্রমিক-কর্মচারী।
প্রতিদিন বিকেলে কর্মসূচি চলাকালে শ্রমিকেরা নতুন রাস্তা মোড়ে টায়ারে ও কাঠের গুড়িতে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। সেখানেই নামাজ আদায় এবং ইফতার করেন তারা। একই কর্মসূচি পালন করেন আটরা-গিলাতলা ও রাজঘাট শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকেরা। এর আগে গত ৫ মে হঠাৎ করে শ্রমিকেরা খুলনা অঞ্চলের পাটকলগুলোর উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে কর্মবিরতি পালন শুরু করেন।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন হারুন বলেন, সপ্তাহ শেষে মজুরি দিয়ে সংসার পরিচালনা করি। অথচ গত ১৩ সপ্তাহ শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। এখন আর ব্যবসায়ীরা শ্রমিকদের বাকিতে সদাইও দিতে চায় না। এভাবে চললে না খেয়ে মরতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বকেয়া মজুরি পরিশোধের বিষয়ে প্রতিশ্রুততি দেওয়া হলেও বাস্তবায়নের বিষয়ে কোনো স্বদিচ্ছা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সম্ভাবনাময় পাট শিল্পকে বাঁচাতে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে পাটজাত পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সময়মতো পণ্য বিক্রি করতে না পারায় আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। মিলগুলো সময়মতো শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করতে পারছে না। সার্বিক বিষয়টি বিজেএমসির প্রধান কার্যালয়কে জানানো হয়েছে।’

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন