(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
সবার বিপদ কি গুনাহের শাস্তিস্বরূপ
পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের দ্বারা স্পষ্ট যে, আল্লাহ তাআলা পাপের কারণে শাস্তি দেন কিন্তু আমরা দেখি যে অনেক কাফের, মুশরিক বা বিধর্মী, প্রকাশ্য ফাসেক যারা অনেক সুখে শান্তিতে আছে, ভালো আছে, তারা বড় কোনো বিপদে পতিত হয়না। পক্ষান্তরে নবী-রাসূলগণ, আউলিয়ায়ে কেরাম বা সাধারণ নেককার মুমিনরা বড় বড় বিপদে পতিত হয় বা হচ্ছে, তাদের কেনো শাস্তি দেয়া হয়? এমনকি রসুল সা. বলেছেন, “দুনিয়া মুমিনের জেলখানা এবং কাফেরের জন্য জান্নাত স্বরূপ।” (সহীহ মুসলিম, হা.নং-২৯৫৬)
জবাব এই যে, কাফেরকে তার ভালো কাজের প্রতিদান দুনিয়াতেই ধন-সম্পদ ও স্বাস্থ্যের আকারে দান করা হয়। আর মুমিনের কর্মসমূহের প্রতিদান পরকালের জন্যে সংরক্ষিত রাখা হয়। মূলত আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে তাদের শাস্তিস্বরূপ এ বিপদ দেননা; বরং এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পরীক্ষা। এ পরীক্ষা ধৈর্যের পরীক্ষা। আল্লাহর উপর বিশ^াসে অটল থাকার পরীক্ষা। যারা এ পরীক্ষায় সফল হবে তাদের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের সুসংবাদ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,
“আর অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি, ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দিন সবরকারীদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা তারই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। তারা সে সকল লোক যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়াতপ্রাপ্ত।” (সুরা বাকারা : ১৫৫-১৫৭)
এ ছাড়াও পবিত্র হাদীসে রাসূল সা. বলেন, “দুনিয়াতে পরগম্বরগণের উপর সর্বাধিক বিপদাপদ আসে। এরপর তাদের নিকটবর্তী, অতঃপর তাদের নিকটবর্তীদের উপর আসে।” (সুনান তিরমিযি, হা.নং-২৩৯৮)
সুতরাং বুঝা গেল যে, নবী-রাসূল, আউলিয়ায়ে কেরাম বা নেককার মুমিনের ওপর যে বিপদ আসে তা শাস্তিস্বরূপ নয়; বরং পরীক্ষা স্বরূপ।
গুনাহের সব শাস্তি কি দুনিয়ায় দেয়া হয়
পূর্বে আমরা জানতে পেরেছি যে, আল্লাহ তাআলা বান্দার সব গুনাহের শাস্তি দেন না, অনেক গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। তাহলে কি আল্লাহ তাআলা যে সকল গুনাহের কারণে শাস্তি দেন, তার সব শাস্তিই কি দুনিয়াতে দেন? উত্তর না। আল্লাহ তাআলা যদি নিজ দয়ায় ক্ষমা না করেন তবে দুনিয়ার শাস্তির পরে পরকালেও তার জন্য বড় শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
“আর অবশ্যই আমি তাদেরকে বড় শাস্তির পূর্বে ছোট শাস্তি আস্বাদন করাব, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে।” (সুরা সাজদাহ : ২১) সুতরাং ইহকালিন সাময়িক শাস্তি পেয়ে যদি বান্দা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে তবে শাস্তিটা তার জন্য রহমতস্বরূপ।
শুধু গুনাহকারীকেই কেনো শাস্তি দেয়া হয়না :
কোনো জনপদে যখন বিপদ বা বিপর্যয় আসে তখন শুধু গুনাহকারীর ওপরই শাস্তি পতিত হয়না; বরং সে এলাকার সবার ওপর পতিত হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর তোমরা এমন ফেতনা (বিপদ) থেকে বেঁচে থাকো যা বিশেষতঃ শুধু যে জুলুম করে তার ওপর পতিত হবেনা, এবং জেনে রাখো যে, আল্লাহর আযাব অত্যন্ত কঠোর।”(সুরা আনফাল : ২৫)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এমন বিপদ থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে বলেছেন যে বিপদ শুধু অপরাধীকেই গ্রাস করেনা। তাহলে কীভাবে আমরা এধরনের বিপদ থেকে বেঁচে থাকব। এর কি কোনো উপায় আছে। অবশ্যই আছে। এ জন্য আমাদের গুনাহ বা আল্লাহর নাফরমানি থেকে বেঁচে থাকার পাশাপাশি এ ধরণের কাজে সাধ্যমতো বাধা দিতে হবে। তাহলে সামগ্রিক এ বিপদ থেকে বাঁচা যাবে। তা না হলে মুসা আ. এর কওমের গো বৎস পুজাকারীদের বাধা না দেয়ার কারণে তাদের যেমন শাস্তি হয়েছিলো, দাউদ আ. এর সময় শনিবারের মাছ ধরার কাজে বাধা না দেয়ায় তাদের যেমন শাস্তি হয়েছিলো, শাস্তির স্বরূপ তেমন না হলেও আমাদের ওপর অগ্নিকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, পানিতে ডুবার মতো অনেক সামগ্রিক বিপদ বেশি আকারে আপতিত হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
“আর আমি আপনার পূর্ববর্তী উম্মতদের কাছেও পয়গম্বর প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর আমি তাদেরকে অভাব-অনটন ও রোগ-ব্যাধি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম যাতে তারা কাকুতি-মিনতি করে।” (সুরা আনআম : ৪২)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, আল্লাহ তাআলা আমাদের গুনাহের কারণে যে শাস্তি দেন তা শুধু আমাদের সতর্ক, সাবধান ও সংশোধন হয়ে গুনাহ ছেড়ে তার দিকে ফিরে আসার জন্য। মূলত এ শাস্তিটা যারা আল্লাহ তাআলার পথে ফিরে আসতে চায় তাদের জন্য রহমত স্বরূপ। কিন্তু আমরা এ সতর্কতাকে গুরুত্ব দিচ্ছিনা, সাবধান হচ্ছিনা, রহমত হিসেবে গ্রহণ করছিনা। শুধু পাপ করেই যাচ্ছি। পাপ কাজে বাধা না দিয়ে সহযোগিতা করছি। ফলে আমাদের ওপর কিছুদিন পরপর নেমে আসছে ভয়াবহ বিপর্যয়। এখনো সময় আছে সতর্ক হওয়ার, সাবধান হওয়ার, সকল পাপ থেকে ফিরে আসার। আল্লাহ তাআলা হেফাজত করুন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন