বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ক্ষুধার্ত শ্রমিকদের চোখের পানিতে সিক্ত রাজপথ

পাটকল শ্রমিকদের দুর্বিষহ জীবন

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

মজুরি নেই ১৩ সপ্তাহের। বাসায় নেই খাবার। ক্ষুধার জ্বালায় না খেয়ে কাঁদছে সন্তানরা। বাসায় বসে বসে কিভাবে এ দৃশ্য দেখবো আপনারাই বলুন? স্থানীয় মুদি দোকানিরা বাকি দিচ্ছে না আবার শ্রমিকদের কাছে টাকা চাইতেও পারছে না। পবিত্র রমজানে পানি, চিড়া কিংবা একমুঠো শুকনো মুড়ি আমাদের সেহরি ও ইফতারের একমাত্র ভরসা। অনেকের পক্ষে তাও জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়ছে। আমাদের শত্রুরাও যেন পাটকল শ্রমিক হয়ে কাজ না করে সেই দোয়া করি। এভাবেই অশ্রু ভেজা কণ্ঠে শ্রমিকদের দুর্বিষহ জীবনের কথা তুলে ধরেন বাস্তহারা এলাকার বাসিন্দা পাটকল শ্রমিক তোফাজ্জেল ও খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিক শরিফুল। অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা কিছুই বলতে পারছিল না, শুধু ছলছল চোখে তাকিয়েছিল। পেটে ক্ষুধার কষ্ট আর কপালে চিন্তার ভাঁজ। শ্রমিকদের অশ্রুতে যেন সয়লাব রাজপথ।
শ্রমিকদের অভিযোগ, ঈদ সমাগত। অথচ এখনো পর্যন্ত শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। লাগাতার ধর্মঘট চললেও সরকারের পক্ষ থেকে সমস্যা উত্তরণে কোনো ঘোষণা নেই। বকেয়া মজুরিসহ ৯ দফা দাবি না মানলে শ্রমিকরা রাজপথে আত্মাহুতির হুমকি দিয়েছেন। রমজানে টানা আন্দোলন চালিয়ে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়লেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
মুদি দোকানদার আব্দুস ছাত্তার বলেন, তার পুঁজি মাত্র ৩ লাখ টাকা। গত তিন মাসে সে নিজেও শ্রমিকদের বাকিতে চাল ডাল বিক্রি করেছে ৫ লাখ টাকার। দুই লাখ টাকা সে মোকামে আড়তদারদের কাছে দেনা। এখন তার দোকানে দেওয়ার মত কিছুই নেই। এভাবে খুলনার পাট শিল্পাঞ্চলের মানুষ আবারও শেষ হতে বসেছে।
এদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী গত সোমবার খুলনা জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে এক সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া মজুরির প্রদানের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে আশ্বাসে এখন আর শ্রমিকদের চলছে না। তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অব্যাহত আন্দোলনে এবার শিল্প এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে চরম উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। বিল না পেয়ে এবং বিজেএমসির নিরব ভ‚মিকায় আন্দোলনরত শ্রমিকরা পর্যায়ক্রমে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে। শ্রমিকদের হাতে টাকা নেই, পেটে ভাত নেই, বকেয়া মজুরির পাশাপাশি সমাগত ঈদুল ফিতরে বোনাস পাবে কি না এমন ভাবনা ও দুশ্চিন্তায় রয়েছে শ্রমিকরা।
মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে খুলনার খালিশপুর শিল্প এলাকার শ্রমিক কলোনিতে। কোনোভাবেই পরিবারের ভরণপোষণ মেটাতে পারছেন না সরকারি পাটকলের শ্রমিকরা। ঠিকমতো সন্তানদের মুখে আহার তুলে দিতে না পারার কষ্ট ছাপিয়ে তাদের পড়ালেখা নিয়ে চিন্তিত শ্রমিক পরিবারগুলো।
গতকাল টানা ১০ম দিনের শ্রমিক আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে খুলনার খালিশপুর শিল্পাঞ্চল। লাগাতার ধর্মঘটে শ্রমিকরা মিলগেটে বিক্ষোভ করার পাশাপাশি ৩ ঘণ্টা রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, আলীম, ইস্টার্ন, যশোরের কার্পেটিং ও জেজেধাই জুট মিলের অর্ধলাখ শ্রমিক-কর্মচারি।
প্রতিদিন বিকেলে কর্মসূচি চলাকালে শ্রমিকেরা নতুন রাস্তা মোড়ে টায়ারে ও কাঠের গুড়িতে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। সেখানেই নামাজ আদায় এবং ইফতার করেন তারা। একই কর্মসূচি পালন করেন আটরা-গিলাতলা ও রাজঘাট শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকেরা। এর আগে গত ৫ মে হঠাৎ করে শ্রমিকেরা খুলনা অঞ্চলের পাটকলগুলোর উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে কর্মবিরতি পালন শুরু করেন।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন হারুন বলেন, সপ্তাহ শেষে মজুরি দিয়ে সংসার পরিচালনা করি। অথচ গত ১৩ সপ্তাহ শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। এখন আর ব্যবসায়ীরা শ্রমিকদের বাকিতে সদাইও দিতে চায় না। এভাবে চললে না খেয়ে মরতে হবে।
বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে পাটজাত পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সময়মতো পণ্য বিক্রি করতে না পারায় আর্থিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মিলগুলো সময়মতো শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করতে পারছে না। সার্বিক বিষয়টি বিজেএমসির প্রধান কার্যালয়কে জানানো হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Zahid Hossain ১৬ মে, ২০১৯, ১০:২৯ এএম says : 0
জনগণ এখন দেশের মালিক নয় তারা শুধু প্রজা
Total Reply(0)
Alamgir Raj ১৬ মে, ২০১৯, ১০:২৯ এএম says : 0
সত্যিই বেদনাদায়ক,
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন