শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ধানের উৎসব যখন বিষাদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ক্ষেত ভরা পাকা ধান। প্রতি বছর এই সময় কৃষকদের মাঝে থাকে উৎসবের আমেজ। কেউ কেউ সোনালী ধান কেটে তুলছেন গোলায়। আবার কেউ কেউ আছেন শ্রমিকের অপেক্ষায়। কিন্তু কারও মুখে হাসি নেই। এবার উৎসব যেন রূপ নিয়েছে বিষাদে। কারণ ধানের দাম নেই। জমি চাষ করতে যে খরচ হয়েছে পুরো ফলন বিক্রি করেও তা উঠবে না। তাহলে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জমি চাষ করে কী লাভ? এমন প্রশ্নের কোন উত্তর পাচ্ছেন না দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তির মূল কারিগর কৃষকরা।
কৃষি অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষক পরিস্থিতির শিকার। সরকারি নীতিও কৃষকের এমন দুরবস্থার জন্য দায়ী। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে সামনে ধান চাষই ছেড়ে দিতে পারেন অনেক কৃষক। কৃষকদের অভিযোগ, বোরো ধানের মণ বাজারে প্রকার ভেদে ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা। ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি গুনতে হচ্ছে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত। দুই মণ ধানের দামে মিলছে না শ্রমিক। তাই এ ধান ঘরের তোলা নিয়েও তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদনে এমন তথ্য ফুটে উঠেছে।
পাবনা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, কৃষকের সোনালী স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বোর ধানের বাজার দর কম হওয়ায় কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ আর মুখের চিকন হাসি মলিন হয়ে গেছে।ধানের দরপতন হলে অর্থনীতির চাকা শ্লথ হয়ে আসে আর কৃষক ধানের মূল্য না পাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
পাবনাসহ উত্তরের জেলাসমূহে ধানের বাজার দাম কমে গেছে । প্রতি ধান মওসুমে এক শ্রেণীর অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী ধানের বাজার মূল্য কমিয়ে দেন। টেকনোলজির যুগে কৃষক কোন হাট-বাজারে বেশী মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারেন না। ফরিয়া মধ্যসত্বভোগীরা সিন্ডিকেটের বেঁধে দেওয়া দামে ধান ক্রয় করে । তবে, কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে মিল মালিকরা কম মূল্যে চাউল বিক্রি করেন না। চাউল কিনতে ক্রেতা সাধারণ বিশেষ করে মধ্যম আয়ের মানুষজন উপর চাপ পড়ে। কৃষক পড়েন লোকসানে আর মুনাফালোভীরা অধিক মুনাফা লুটে নেন। পাবনায় আগাম রোপন করা ধান কর্তন ও মাড়াই শুরু হয়েছে। মাঠে এখনও পাকা সোনালী শিষের ধান রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে এই ধান কর্তন শুরু হবে ।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাবনায় ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোর ধান আবাদ ও বাম্পার ফলন হয়েছে।
উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। অপরদিকে, হাট-বাজারে মোটা জাতের বোর ধান ৫শত টাকা আর চিকন বোর ধান ৬৫০ টাকা দরে কেনা বেঁচা হচ্ছে। কৃষক সাদেক আলী, রমজান প্রামানিক, আ: আলিম’র সাথে কথা বলে জানা যায়, ধান ফলন ভাল হয়েছে, বাজারে দাম নেই। ৫/৬শত টাকা মনে ধান বিক্রি করে গড়ে ২শত টাকা লোকসান যাচ্ছে।
বড়াইগ্রাম (নাটোর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, চলনবিল অধ্যূষিত বড়াইগ্রামে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে অধিক মজুরি দিয়ে ধান কাটার পাশাপাশি বাজারে দাম কম থাকায় আর্থিকভাবে লোকসান গুণছেন চাষিরা। চলতি মৌসুমে বিঘা প্রতি কৃষকের কমপক্ষে দুই হাজার টাকা করে লোকসান যাচ্ছে। এতে হতাশ হয়ে কৃষকেরা ধান আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কথা ভাবছেন।
কৃষি বিভাগ স‚ত্র জানায়, উপজেলায় এবার ৫ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এসব জমিতে হাইব্রিড, উফশী ও দেশি জাতের বোরো আবাদ করা হয়। বাজিতপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক জানান, তিনি এবার পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন। ধানের বীজ সংগ্রহ থেকে শুরু করে জমি চাষ, রোপণ, সার, কীটনাশক প্রয়োগ পর্যন্ত প্রতি বিঘায় ৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শ্রমিকদের কাছে চুক্তি হিসাবে বিঘা প্রতি ধান কাটতে পাঁচ হাজার টাকা করে খরচ পড়েছে। সব মিলিয়ে তার পাঁচ বিঘা জমিতে ধান কাটার মোট খরচ পড়েছে ৬৫ হাজার টাকা। বাজারে মণপ্রতি ধানের দাম ৫০০ টাকা। পাঁচ বিঘা জমিতে তিনি ১১০ মণ ধান পেয়েছেন। এই ধান বিক্রি করলে পাবেন ৫০০ টাকা মণ হিসাবে ৫৫ হাজার টাকা। তাতে তার বিঘা প্রতি দুই হাজার টাকা করে লোকসান হবে। তার ওপর নিজেদের পরিশ্রম তো আছেই। তাই ধানের ফলন ভালো হলেও তিনি খুব হতাশ।
ভিটাকচুগাড়ি আব্দুর রব জানান, সপ্তাহ খানেক আগে তার জমিতে ধান পেকেছে। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারছিলেন না। কয়েকজন শ্রমিক পেয়েছিলেন। তারা ৭০০-৭৫০ টাকা মজুরি চান। এ ছাড়া দুই বেলা খাবার তো আছেই। এত টাকা মজুরি দিয়ে লাভ হবে না, তাছাড়া সে সামর্থ্যও নেই তার। তাই বাধ্য হয়ে স্কুল পড়–য়া দুই ছেলেকে নিয়ে ধীরে ধীরে ধান কাটতে শুরু করেছেন।
জালশুকা গ্রামের মোশাররফ হোসেন বাবু বলেন, বাজারে ধানের যে দাম, তাতে আগামীবার ধান আবাদ করার ইচ্ছা নাই। প্রয়োজনে অন্য আবাদ করবো, তবু ধান না। বছর বছর ধান লাগিয়ে আসলও উঠছে না, এমন আবাদ করে লাভ কী। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল আহমেদ জানান, শ্রমিক সংকট ও সর্বোচ্চ মজুরির কারণে ধানের উৎপাদণ খরচ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ধানের দামও বাজারে কম। তাই আর্থিকভাবে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন