বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ছাড় নেই মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নকারীদের- সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৯, ১২:০৩ এএম


অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন করে যারা দেশ ও জনগণের ক্ষতি করছে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। দুর্নীতি আর কাউকে করতে দেয়া হবে না। মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের মতো কার্যক্রম এদেশে বড় দুর্নীতি। এই দুইক্ষেত্রেও সরকারের অবস্থান স্পষ্ট ‘না’।
গতকাল মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত জাতীয় সমন্বয় কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন-এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, অর্থসচিব রউফ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসানসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্মতারা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বর্তমান সরকার কারো বিরুদ্ধে নয়। সবাই ভালমতো ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু যারা মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন করে দেশ ও জনগণের ক্ষতি করে যাচ্ছে তারা পার পাবে না। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কঠোর অবস্থানে থাকবে। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত বেশকিছু আইন অনেক আগে করা হয়েছে। তখন মানিলন্ডারিং ও টেরোরিষ্ট ফাইন্যান্সিং বিষয়ে তেমন কিছু করা হয়নি। সুতরাং এ সংক্রান্ত করা পুরনো আইনগুলোর সংস্কার করা হবে। তিনি বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থা এবং আমদানি-রফতানির আড়ালে এদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থপাচার হয়ে থাকে। এর বাইরে অর্থপাচারের তেমন কোন সুযোগ নেই। এ কারণে এই দুই মাধ্যম থেকে যাতে অর্থপাচার না হয়, সেই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অর্থপাচার রোধে সকল আমদানি-রফতানিকৃত পণ্য যথাযথভাবে স্ক্যানিং করার উদ্যোগ নেয়া হবে। একই সঙ্গে আমদানি-রফতানিতে যারা ওভার এ্যান্ড আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের সঙ্গে জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে জরিমানার পাশাপাশি মামালা করা হবে। মামলার রায় অনুযায়ী তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এদেশ থেকে অর্থ পাচার মূলত ব্যাংক ও এনবিআর এই দুই মাধ্যমে হয়ে থাকে। এর বাইরে বড় আকারে মানি লন্ডারিং করার সুযোগ নেই। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানি-রফতানির মাধ্যমে এবং ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খোলার মধ্য দিয়ে অর্থ পাচার হয়। আমদানি-রফতানির মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধে সরকারের পক্ষ থেকে শতাভাগ স্ক্যানারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়া ওভার প্রাইসিং আর আন্ডার প্রাইসিং রোধে পিএসআই’র আদলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) একটি সেল খোলা হবে। তারা নেটের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করে পণ্যের দাম জানবে। তারপর তারা রিপোর্ট করবে। ওই দামের চেয়ে ঊনিশ-বিশ হলে সমস্যা থাকবে না। তবে বেশি পার্থক্য থাকলে সেসব পণ্য বাজেয়াপ্ত করা হবে। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, এখানেই শেষ নয়, এটা পাথর, বালি, ইট-বালু হতে পারে। সেক্ষেত্রে যারা এর সঙ্গে জড়িত থাকবে এখন তাদেরকে একটা শুধুমাত্র জারিমানা করা হয়। আগামীতে জারিমানা করার পাশাপাশি আইন অনুযায়ী মামলা করা হবে। মামলার রায় অনুযায়ী তারদেরক কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন এ দুটোই রোধ করতে হবে। ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর পরিস্কার নির্দেশনা রয়েছে। মানি লন্ডারিংও একটা দুর্নীতি। আর দুর্নীতির অর্থই সন্ত্রাসে অর্থায়ন হয়। সুতরাং এ দু’ক্ষেত্রকেই না করতে হবে। তিনি বলেন, এর আগে এ সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক বছরে তিনটা হতো। এখন থেকে চারটা বৈঠক করা হবে। বৈঠকে পর্যালোচনা হবে বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ট্রান্সফার প্রাইসিং হোক আর যাই হোক, এদেশে বিদেশী বেশকিছু কোম্পানি কাজ করে। বিদেশী কোম্পানি এককভাবে ব্যবসা করতে পারবে না। কারণ এককভাবে বিদেশী কোম্পানি কাজ করে এমন কোম্পনি থেকে সরকার রাজস্ব পায় না। তাই বিদেশী কোনো কোম্পানি বাংলাদেশে কাজ করতে হলে তাদেরকে বাংলাদেশের কোনো কোম্পানির সাথে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। এতে সরকার রাজস্ব পাবে। আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন একটি বড় সমস্যা। দেশের টাকা যাতে পাচার না হয় একই সঙ্গে সেই টাকা যাতে সন্ত্রাসে কার্যক্রমে ব্যবহার না হতে পারে সেলক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। বেশকিছু ধারার সংশোধন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আরও কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, গত দশ বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এ ব্যাপারে যেসব কাজ করছে তার একটি সামারি করা হয়েছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক রিপোর্টে। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আরও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করা হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন