বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

মানবপাচারকারী সিলেট শিবিরের সাবেক নেতা এনাম র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৯, ৬:০৫ পিএম

শিবিরের সাবেক নেতা সিলেটের মানবপাচারকারী এনাম অবশেষ র‌্যাবের হাতে আটক হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সিলেটের এনামুল হক তালুকদার সহ ৩জন আটক হন। বাকী দু’জন হচ্ছেন শরীয়তপুরের আক্কাস মাতুব্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আব্দুর রাজ্জাক ভূইয়া। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, অবৈধভাবে ইউরোপে পাঠানোকালে সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে অনেক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ওই পাচারের সঙ্গে জড়িত চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে। এদিকে, ৯ মে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে অন্যদের মতো সিলেট বিভাগের ১৯জনের নিহদের মধ্যে দিয়ে এনামের নাম ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র । পরবর্তীতে ১৩ মে সিলেট জেলা প্রশাসন ঝটিকা অভিযান চালায় অবৈধ ট্রার্ভেলস ব্যবসা প্রতিষ্টানের বিরুদ্ধে। তাদের অভিযানের আগেই নগরীর জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশনস্থ ’ নিউ ইয়াহিয়া ওভারসীজ প্রতিষ্টান’টি তালাবদ্ধ করে গা-ডাকা দেয় শিবির নেতা এনাম। কারন নিহত সিলেটীদের বেশিরভাগই এনামের হাত ধরে অজানা পথে ইউরোপের্ ওয়ান দিয়েছিল।বিদেশমুখী তরুনদের ৮ লাখ টাকায় ইতালী পাঠাতে চুক্তি করেছিলেন এনাম। নিরাপদে পাঠানোর প্রতিশ্রুতিতে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ছাড়ে লিবিয়া উদ্দেশ্যে তারা। কিন্তু নৌকাডুবিতে প্রাণহানীর মধ্যে বেরিয়ে আসে মানবপাচারকারী এনামের মুখোশ। ্ওই দূর্ঘটনায় নিহত আব্দুল আজিচের বড় ভাই মফিজুর রহমান অভিযোগ করেন সপ্তাহখানেক পূর্বে লিবিয়া আজিজ আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, লিবিয়া থেকে বের হতে পারছে না আজিজ। ইয়াহিয়া ট্র্যাভেলসের মালিক এনাম তাদেরকে ফোন দিয়ে বলেছে, নৌকা দিয়ে সাগর পথে ইতালি যেতে হবে। তারপর দালালের মাধ্যমে নিহত আজিজসহ কয়েকজনকে জোরপূর্বক নৌকায় তুলে সাগর পথে ইতালি পাঠাতে চেয়েছিল এনাম সিন্ডিকেট। পরবর্তীতে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনা পর নিহত লিটনের বাবা সিরাজ মিয়া জানিয়েছিলেন, এনাম ফোন রিসিভ করছে না, পরে ফোন বন্ধ, বাড়ি থেকে পালিনোর খবর পেয়েছেন তারা।
এনামের বাড়ি গোলাপগঞ্জের মেহেরপুর এলাকার পনাইরচক গ্রামে। সে গ্রামের মৃত মো. আবদুল খালিকের পূত্র। সিলেট সরকারী কলেজ শিবিরের নেতা ছিল। শিবিরের সাংগঠনিক স্তর বা ক্যাডার হিসেবে তার পদবী ছিল সাথী। ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর মাসিক ৭ হাজার টাকা ভাড়া চুক্তিতে রাজা ম্যানশনের ৩য় তলার ১১৭ নম্বর দোকান ভাড়া নেন এনামুল হক। সেখানে সাইনবোর্ড টানান ‘নিউ ইয়াহিয়া ওভারসীজ’র। ট্রাভেলস ব্যবসার আড়ালে মূলত মানবপাচারই ছিল তার ব্যবসা। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লোভনীয় উপার্জনের স্বপ্ন দেখিয়ে সিলেটের বেকার যুবকদের উদ্ধুদ্ধ করতেন তিনি। এরপর দেশী-বিদেশী দালালচক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পাঠানোর চেষ্টা করতেন তাদেরকে ।
ভূমধ্যসাগরে ট্রলারডুবিতে এনামের পাঠানো যাত্রীদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাজাম্যানশন মার্কেটে তার পরিচিতি ছিল একজন ভালো ট্রাভেলস ব্যবসায়ী হিসেবে। ৯মে নৌকাডুবিতে প্রাণহানীর ঘটনার এনামের মানবপাচারের গোপন ব্যবসা প্রকাশ হয়ে উঠে। কিন্তু গত আড়াই বছরেও ঘুনাক্ষরেও জানতে পারেননি এনামের মানবপাচারের সর্ম্পৃক্ততা ওই মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাসুদ আহমদ। তবে ট্রাভেলসের আড়ালে গোপন ব্যবসার আলামত আগেই পেয়েছিল অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ (আটাব)। তাই তার ট্রাভেলসকে দেয়া হয়নি আটাবের সদস্যপদ।
এব্যাপারে আটাব সিলেট অঞ্চলের সভাপতি আবদুল জব্বার জলিল জানান, ‘নিউ ইয়াহিয়া ওভারসীজ’র ব্যবসা নিয়ে আমাদের সন্দেহ ছিল। তাই আবেদনের পরও তাকে আটাবের সদস্যপদ দেয়া হয়নি। তার কার্যক্রম আমরা পর্যবেক্ষণ করছিলাম। এর মধ্যেই তার মানবপাচারের বিষয়টি ধরা পড়লো। এরকম আরও যেসব অবৈধ ট্রাভেলস ব্যবসায়ী মানবপাচারের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন