বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আস্থাহীন দুদক

দুদক এখনো রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে : সুজন সম্পাদক

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৯, ২:২৫ এএম

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) কমেছে দায়ের করা মামলার সংখ্যা। এমনকি কমেছে আসামি গ্রেফতারের সংখ্যা, গণশুনানির সংখ্যা, অভিযোগপত্রের সংখ্যা ও সাজার হারও। ২০১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এমন চিত্র ফুটে উঠেছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব সময় সরকারি দলের হয়ে কাজ করে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারছে না দুদক। দুদক কর্মকর্তাদেরকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে কাজ করতে হবে। তা না হলে যতটুকু আস্থা আছে, তাও থাকবে না। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, দুদক এখনো রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এটা থেকে বের হতে হবে।
সম্প্রতি প্রেসিডেন্টের কাছে পেশ করা দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় গলদ থাকাই দুর্নীতি বাড়ার বড় কারণ। তবে দুর্নীতির অভিযোগ বাড়লেও দুদকের মামলার সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সাধারণ মানুষ মনে করেন, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের মামলাগুলোকে দুদক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির অভিযোগ বেড়েছে।
২০১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৬ সালে কমিশন মামলা দায়ের করেছে ৩৫৯টি, ২০১৭ সালে ২৭৩টি আর ২০১৮ সালে মামলা হয়েছে ২১৬টি। ফলে মামলা দায়েরের হার কমেছে। অন্য দিকে কমিশনের চার্জশিট অনুমোদনের হারও কমেছে। ২০১৬ সালে ৫৩৫টি, ২০১৭ সালে ৩৮২টি আর ২০১৮ সালে ২৩৬টি চার্জশিট অনুমোদন দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, ফাঁদ মামলার সংখ্যাও কমেছে। ২০১৪ সালে ৫টি, ২০১৫ সালে ৪টি, ২০১৬ সালে ১৩টি, ২০১৭ সালে ২৪টি আর ২০১৮ সালে ১৫টি ফাঁদ মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া, মামলায় সাজার হারও কমেছে। ২০১৫ সালে দুদকের মামলায় সাজার হার ছিল ৩৭ শতাংশ। ২০১৬ সালে ৫৪ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৬৮ শতাংশ আর ২০১৮ সালে মামলায় সাজার হার ৬৩ শতাংশ। অর্থাৎ মামলায় সাজার হারও ৫ শতাংশ কমেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে দুর্নীতি প্রতিরোধে কমিশন গণশুনানি করেছে ৫টি, ২০১৬ সালে ৩০টি, ২০১৭ সালে ৪০টি আর ২০১৮ সালে ২৭টি। ফলে গণশুনানির সংখ্যাও কমেছে। একই সাথে ২০১৬ সালে দুদক গ্রেফতার করেছে ৩৮৮ জন, ২০১৭ সালে ১৮২ জন আর ২০১৮ সালে মাত্র ৫৭ জনকে। অর্থাৎ আসামি গ্রেফতারের হারও কমেছে।
এ বিষয়ে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, সফলতা কিংবা ব্যর্থতার চেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে এখন সবাই দুদককে চেনে। ২০১৮ সালে মামলার সংখ্যা, আসামি গ্রেফতারের সংখ্যা, গণশুনানির সংখ্যা, অভিযোগপত্রের সংখ্যা ও মামলায় সাজার হার কম হয়েছে। আমরা চার্জশিটে সময় নিয়েছি, কারণ চাজর্শিটে আসামির শতভাগ শাস্তি নিশ্চিতে আমরা সময় নিয়ে কাজ করেছি। এটাকে সফলতা বা ব্যর্থতা হিসেবে ধরলে কাজ করা যাবে না। আমরা চেষ্টা করছি ভালো কিছু করার। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে পাশে থাকলে সামনে আমরা আরো ভালো কিছু করতে পারব। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুদক এখন কোন কোন খাতে নজর দেবে, সেই পরিকল্পনাও আমাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরেছি। তিনি বলেন, তদন্তের মান এবং সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে, সেটাই মামলা কমে যাওয়ার কারণ।
দুদকের সফলতা-ব্যর্থতার প্রশ্নে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, দুদকের ২০১৮ সালে মামলা দায়েরের হার ও সফলতার ক্ষেত্রে পিছিয়ে কমিশন। চার্জশিট অনুমোদনের হারও কম। সব মিলিয়ে পরিশেষে এটাই লক্ষ্যণীয়, দুদকের ব্যর্থতারই পরিচয় বহন করে। তবে দুদক চাইলে ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে সফলতা অর্জন করে আরো সামনে এগিয়ে যেতে পারে। সেজন্য দরকার বড় বড় কয়েকজন দুর্নীতিবাজকে আটক করা। তাহলেই সফলতা অর্জনে আরো এগিয়ে যাবে কমিশন। তিনি বলেন, এগুলো থেকে পিছিয়ে যাওয়া মানেও কিন্তু জনগণের আস্থার জায়গাটা নষ্ট হওয়া বা জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হওয়া।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, দুদকের উচিত মেগা খাতের দুর্নীতি দমনে বেশি মনোযোগ দেয়া। তিনি দুদকের জন্য সার্বিকভাবে সরকারের একটি কৌশলপত্র প্রণয়নের সুপারিশ করেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতিবাজদের ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে দুদক। বলা যায়, জনগণের আস্থা অর্জনে দুদক ব্যর্থ হচ্ছে। কেননা কমিশন উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতিবাজদের ধরছে না। দুকক এখনো রাজনৈতিক মামলা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করছে। এখানে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এ ছাড়া, মামলার সংখ্যা নয়, কাদের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করছে সেটা দেখার বিষয়। চুনোপুঁটিদের বিরুদ্ধে মামলা করে সফলতা অর্জন আর রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে মামলা করা এক নয়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দুদকের প্রতিকারমূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা কম। সব দিকে দুদকের অর্জন না থাকলে সফলতা আসবে না।
দুদকের সাবেক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল বলেন, দুদকের বর্তমান কর্মকাণ্ড, পরিধি, বিদ্যমান সক্ষমতা সেটা দুদকের কমিশন ভালো বলতে পারবে। তবে আমি মনে করি, বর্তমান কমিশন চেষ্টা করলে দুদকের সফলতা আরো বাড়বে। দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদককে আরো কঠোর হতে হবে। নমনীয়তা কখনো দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারে না। এই বার্ষিক প্রতিবেদনে মামলা, চাজর্শিটসহ অনেক ক্ষেত্রে দুদকের সফলতার হার কম। আমি এটাকে ভালো চোখে দেখছি না। তবে আমি বিশ্বাস করি কমিশন চাইলে সফলতা অর্জন আরো বেশি সম্ভব।
গণমাধ্যম বিশ্লেষক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী কিংবা সচিবরা সবাই তো দুর্নীতি করছেন। তাদের কি কোনো দায়বদ্ধতা নেই? কিন্তু দুদক করছে কী? তিনি নতুন প্রকল্পগুলো দুদককে তদন্তের আহ্বান জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Ismail Hosain ১৮ মে, ২০১৯, ১:১৭ এএম says : 0
দুদক একটি স্বৈরাচারী সংগঠন ।
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৮ মে, ২০১৯, ১:১৮ এএম says : 0
দুদকের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতে হলে দায়ী ব্যক্তিকে অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে
Total Reply(0)
Bappy Ahmed ১৮ মে, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
আজ থেকে কয়েকবার আগে জনাব, হারুন কিসিঞ্জার এর বানানো একটা ভিডিও তে বলা হয়েছে বাংলাদেশ এমন এক দেশ যে দেশে চোর ধরার মেশিন বসালে সেটাও চুরি হয়ে যাবে।
Total Reply(0)
মাহমুদুল হাসান রাশদী ১৮ মে, ২০১৯, ১:২৩ এএম says : 0
দুদক এখন সরকারি দলের আজ্ঞাবহে পরিণত হয়েছে।
Total Reply(0)
জয় খান ১৮ মে, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
এমন এক কমিশন যে শুধু বিরোধী দলের অনিয়ম দখেতে পায়, আর সরকারি দলের মহাসগর চুরিও চোখে পড়ে না।
Total Reply(0)
মোহাম্মাদ নাজমুল ইসলাম ১৮ মে, ২০১৯, ১:২৫ এএম says : 0
দুদক এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দুর্নীতি দমনের নামে দুর্নীতির রমরমা ব্যবসা করে েযাচ্ছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন